ভুটানের কাছে কী চায় চীন!
ভুটানের কাছে কী চায় চীন! - ছবি : সংগৃহীত
প্রতিবেশী ভুটানের প্রতি চীনের আকস্মিক আগ্রহ সন্দেহ বাড়াচ্ছে। কৌশলগত বিষয়াদিতে বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মা চেলানি বলেছেন, চীন আগে এই ইস্যুটি কখনো উত্থাপন করেনি এবং এখন হঠাৎ করে দাবি জানিয়েছে। এর সহজ অর্থ হলো এই যে চীন যেকোনো সময় যেকোনো দাবি করতে পারে।
ভুটানের সাকতেং ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির ওপর তার ভূখণ্ডগত দাবির পক্ষে চীন বলেছে, দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত এখনো চিহ্নিত হয়নি। বেইজিং এরপর এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ‘প্যাকেজ সমাধানের’ কথা বলেছে।
চীনের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পরিষ্কার। চীন ও ভুটানের মধ্যকার সীমান্ত চিহ্নিত হয়নি এবং তাদের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ফলে বিরোধ অবসানের জন্য একটি প্যাকেজ সমাধান দিয়েছে চীন।
চীন ও ভুটানের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে তারা কর্মকর্তাদের সফরের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দুই দেশ ২৪ রাউন্ড বৈঠক করেছে।
ধারণা করা হয়ে থাকে যে চীনের পুরনো প্যাকেজে দোকলাম বেইজিংয়ের কাছে দিয়ে মধ্য এলাকায় জমি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভুটান এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি, দৃশ্যত ভারতের কারণে।
চেলানি বলেন, ভুটানের দাবি করা দোকলাম মালভূমি দখল করেছে চীন, যা ২০১৭ সালের বিরোধপূর্ণ এলাকার বাইরে ছিল। এখন তারা ছোট্ট ভুটানের পূর্ব দিকের বিশাল এলাকা দখল করেছে। চীন সম্ভবত এখন তাদের পুরনো প্যাকেজটির স্থলে নতুন কিছু দিতে চাইছে।
ইউরএশিয়ান টাইমসে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দোকলামে চীন যা করতে চেষ্টা করেছে, কার্গিলে পাকিস্তান যা করতে চেয়েছে, চীনা পিএলও ইতোমধ্যেই কৌশলগত অবস্থানগুলো দখল করে পূর্ব লাদাকে তা করে ফেলেছে। ভারত যুদ্ধে যেতে পারবে না এবং গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলো দখলে রাখতে পারবে। এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
ভারত-ভুটান সম্পর্ক
ভারত ইতোমধ্যেই ভুটানের সাথে আরো শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার জন্য কাজ করছে। গত ১৫ জুলাই একটি নতুন বাণিজ্য রুট খোলা হয়েছে। ২০১৭ সালে দোকলাম উত্তেজনার সময় ভারত ও ভুটানের মধ্যে শক্তিমত্তা দেখা গেছে। ওই সময় চীনা সৈন্যরা গোপনে দোকলামে প্রবেশ করে সেখানে একটি রাস্তা নির্মাণ করার কাজ শুরু করে।
এটি ছিল বিরোধপূর্ণ মালভূমিতে কয়েক বছরে ধরে বিরাজ করা স্থিতিবস্থা বদল করার চেষ্টা। চীনকে মোকাবেলা করার জন্য রাস্তা নির্মাণ থেকে চীনকে বিরত রাখার জন্য সৈন্য পাঠায় ভারত। ভারত ও চীনের মধ্যে ৭৫ দিন সামরিক অচলাবস্থা বিরাজ করে।
সামরিক সহযোগিতা ছাড়া, ভারত ও ভুটান শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৯২২৮ কোটি রুপির। ভুটানে উৎপাদিত জলবিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশ কিনে নেয় ভারত।
ভারত-চীন-ভুটান
ভুটানে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পবন ভামা বলেন, মানচিত্রের দিকে তাকালেই ভুটানের জন্য ভারতের গুরুত্ব বোঝা যায়।
ভার্মা বলেন, আমাদের কৌশলগত অবস্থান ও নিরাপত্তার জন্য ভারতের জন্য ভুটান প্রয়োজন। এ কারণেই ভুটানের সাথে ভারত বিশ্বের সর্বোত্তম সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। তিনি বলেন, ভুটানের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন এবং তারা তা অব্যাহত রাখবে।
চীন-ভুটান সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করার জন্য ইতোপূর্বে ভারতকে অভিযুক্ত করেছে চীন। দোকলাম বিরোধের সময় চীনের রাষ্ট্রীয় ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস অভিযোগ করেছে যে ভারত অহেতুক ভুটানের সীমান্ত এলাকা পা দিয়েছে।
ভারত ও চীনের মধ্যে বাফার জোন বিবেচনা করা হয় ভুটানকে। ভার্মা বলেন, চীন যদি ভুটানকে দলে টানকে পারে তবে তারা ভারতীয় সীমান্তের চিকেন নেকের (সিলিগুরি করিডোর) খুবই কাছে চলে আসবে। এতে করে ভারতের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে চীন চাপ সৃষ্টি বা প্রলোভন দেখিয়ে ভুটানের মন জয় করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ইউরএশিয়ান টাইমস