চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, নতুন সমস্যায় ভারতীয় বাহিনী
চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, নতুন সমস্যায় ভারতীয় বাহিনী - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় সেনাবাহিনীর আসন্ন শীতে পূর্ব লাদাখের বিরোধপূর্ণ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) মোতায়েন হবে ২০০২ সালের অক্টোবরে শেষ হওয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১০ মাস স্থায়ী অপারেশন প্যারাকারামের মতোই কঠিন বিষয়।
দুই অভিযানের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হলো, ২০০১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলার পর হওয়া ওই অভিযান সম্পন্ন হলে ভারতীয় সৈন্যরা ফিরে এলেও এলএসিতে সম্ভবত তারা ফিরবে না।
ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উঁচুতে বিপুলসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করতে হবে। এমনকি ভয়াবহ শীতেও ভারতীয় সৈন্যদের সেখানে অবস্থান করতে হবে চীনা সৈন্যদের প্রতিরোধ করতে। উল্লেখ্য চীনের পিপলস আর্মির (পিএলএ) সদস্যরা মে মাসে হামলার পর ভারতীয় এলাকা থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল জে পি সিং বলেন, প্রায় নিশ্চিত যে সেনা মোতায়েনের দিক থেকে পাকিস্তানের সাথে এলওসিতে ৭৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মতোই হতে যাচ্ছে এলএসিতে মোতায়েন।
তবে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এলএসিতে মোতায়েন আর্থিকভাবে ভারতের জন্য হবে অনেক ব্যয়বহুল। কারণ এতে বিপুল অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। ২৫ থেকে ৩০ হাজার সৈন্য রাখার জন্য যেসব অবকাঠামো প্রয়োজন, বর্তমানে তা নেই। তিনি বলেন, এর ফলে সেনাবাহিনীর রাজস্ব ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। আর তা বাহিনীর দীর্ঘ বিলম্বিত আধুনিকায়ন মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে।
এমনকি সীমান্তে চীনের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টির আগেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও বেতন-ভাতা পরিশোধে ২০২০-২১ সময়কালে যথাক্রমে ব্যয় হতো ১৭ ভাগ ও ৮৩ ভাগ। অথচ আদর্শ পদ্ধতিতে এই অনুপাত হওয়া উচিত ৬০ ভাগ ও ৪০ ভাগ।
এখন আধুনিকায়নে ওই ১৭ ভাগও বরাদ্দ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি অন্য দুই বাহিনীর বাজেটেও হাত দিতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী অক্টোবর থেকে ছয় মাসের জন্য চীনের সাথে বিদ্যমান ২৫০-৩০০ কিলোমিটারের এলএসিতে অনধিক ২৫ হাজার সৈন্য মোতায়েন করতে হলে তাদের সাথে কয়েক হাজার জন টন খাবার ও জ্বালানিও পাঠাতে হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি আরো মন্থর হয়ে পড়েছে। এর ফলে সামরিক বাহিনীর বাজেট বাড়ানোর সুযোগও কমে এসেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্রয়বিষয়ক সাবেক কর্মকর্তা অমিত কাউশিশ বলেন, এটি একটি জিরো সাম গেম। কোনো সরকারই এই খেলায় ভালো করতে পারেনি। তবে আসন্ন আর্থিক সঙ্কট পরিকল্পনা অনুযায়ী মোকাবেলা করা উচিত।
এছাড়া সেনাবাহিনীকে মেরু অঞ্চলে ব্যবহৃত তাঁবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম, শীত নিবারণের পোশাক সংগ্রহ করতে হবে। জরুরিভিত্তিতে এসব সামগ্রী ক্রয় করতে হলে বেশি দাম দিতে হবে। আবার তাপনিরোধক জ্বালানি, গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে হলেও প্রচুর ব্যয় করতে হবে। সামরিক ট্রাক, ট্যাঙ্ক, হাউটজার ও অন্যান্য যানবাহন সুরক্ষা করাও একটি কঠিন ও ব্যয়বহুল কাজ।
দুর্গম অঞ্চলে ভারী সরঞ্জাম পাঠানোর কাজে ভারতীয় বিমানবাহিনীল সি-১৭ ও সি-১৩০জে-৩০ পরিবহন বিমান ব্যবহার করা হতে পারে। এসব বিমান পরিচালনা করাও খুবই ব্যয়বহুল বিষয়।
এদিকে এলএসিতে মোতায়েন নিশ্চিতভাবেই চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের ভারতের সোয়া লাখ সদস্যবিশিষ্ট বাহিনীকে এক লাখে নামিয়ে আনার পরিকল্পনাকে ব্যহত করবে। তিনি চাচ্ছেন, তার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমিয়ে এতে আরো কার্যকরভাবে গড়ে তুলতে।
সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল রাওয়াত ঘোষণা করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর বাজেটের ৮৩ ভাগ ব্যয় হয় বেতন ও পেনশনে। আর মাত্র ১৭ ভাগ ব্যয় হয় আধুনিকায়ন ও সরঞ্জাম হালনাগাদ করার কাজে। তিনি বলেন, সরঞ্জামের পেছনে বেশি ব্যয় করার জন্য আমাদের জনশক্তিকে হ্রাস করতে হবে।
তবে চীনা পিএলএ সম্ভবত জেনারেল রাওয়াতের পরিকল্পনায় বাধা দিচ্ছে।
দুই দশক আগে সেনাপ্রধান ভি পি মালিকও একই ধরনের কথা বলেছিলেন।তিনি তার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৯ সালের মে মাসে কার্গিল যুদ্ধের ফলে তার ওই পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যায়।কারণ এলওসিতে সৈন্যদের প্রত্যক্ষভাবে মোতায়েন করতে হয়।
আবার প্রাণহানির বিষয়টিও আছে। ১৯৮৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিয়াচেনের ৭৬ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় ৮৬৯ জন সৈন্য মারা যায়। আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন প্রাকারামে কার্গিল যুদ্ধের চেয়েও বেশি সৈন্য মারা গিয়েছিল।
২০০৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফারনানদেজ পার্লামেন্টে বলেছিলেন, অপারেশন প্রাকারামে ৭৯৮ সৈন্য মারা গেছে। আর কার্গিলের ১১ সপ্তাহের সঙ্ঘাতে মারা গেছে ৫২৭ সৈন্য।
এলএসির সঙ্ঘাতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২০ ভারতীয় সৈন্য। আশা করা যায়, এটা এখানেই থেমে যাবে।
দি ওয়্যার