লিবিয়ায় মুখোমুখি তুরস্ক-মিসর : কার শক্তি কত?

মাসুম খলিলী | Jul 23, 2020 07:10 pm
লিবিয়ায় মুখোমুখি তুরস্ক-মিসর : কার শক্তি কত?

লিবিয়ায় মুখোমুখি তুরস্ক-মিসর : কার শক্তি কত? - ছবি : সংগ্রহ

 

লিবিয়ায় মুখোমুখি দুই পক্ষ তুরস্ক এবং মিসরের সেনাবাহিনীর এফ-১৬ বিমানসহ শত শত অন্য যুদ্ধবিমান রয়েছে। মিসরীয় সেনাবাহিনী হাজার হাজার ট্যাংক নিয়ে কাগজে-কলমে বিশ্বের নবমতম শক্তিশালী। তুরস্ক রয়েছে একাদশ স্থানে। তবে সম্ভবত ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় তুর্কি বাহিনীকে মিসরের চেয়ে বেশি কার্যকর মনে করা হয়। অবশ্য এই তত্ত্বগত আলোচনার বাইরে বাস্তবে, ক্ষমতা এবং কার্যকারিতার মধ্যে একটি বিস্তৃত ফাঁক আছে। মিসর দীর্ঘকাল বাইরের কোনো সঙ্ঘাতের জন্য পরীক্ষিত হয়নি আর প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে ঘরে বসে দুর্বল সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। গত সাত বছর ধরে সিনাই উপদ্বীপে দায়েশ বাহিনীর সাথে এর সঙ্ঘাত চলছে, কিন্তু ৭০০০-এরও কম যোদ্ধাসম্বলিত সীমিত বিদ্রোহও নির্মূল করতে পারেনি। অন্য দিকে, বিদ্রোহের মুখে তুরস্কের অভিজ্ঞতা এবং কার্যকারিতা অনেক বেশি প্রমাণিত হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী বহু বছর ধরে সিরিয়ায় জড়িত ছিল এবং কুর্দি পিকেকে বাহিনীকে তারা মোকাবেলা করছে। তুর্কি বাহিনী আইএসকেও শক্তিশালীভাবে মোকাবেলা করেছিল।

কৌশলগত হিসাব-নিকাশ
মূল প্রশ্নটি হলো লিবিয়ায় মিনর ও তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা রয়েছে? আল-সিসির ‘হস্তক্ষেপ’ যদি ঘটে তবে তা কি সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি ব্যাপক যুদ্ধে রূপ নেবে? তুরস্ক অবশ্য এর মধ্যে দেখিয়েছে যে, দেশটি জিএনএর পাশে কার্যকরভাবে দাঁড়িয়েছে এবং এর অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাশিয়া সচেতন যে, তুরস্ক লিবিয়ায় নিজের অবস্থান থেকে সরে যাবে না, আমেরিকাও বুঝতে পেরেছে যে, আঙ্কারা তার লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর মস্কো ও তেহরানের সাথে সহযোগিতা সীমাবদ্ধ করতে ওয়াশিংটন তুর্কি সরকারকে সমর্থন করতে আগ্রহী। কিন্তু সমস্যা হলো যুক্তরাষ্ট্রের লিবিয়া নীতি অস্থির। এই অস্থিরতার কারণে রাশিয়ার পক্ষে জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত জিএনএ সরকারের বিরুদ্ধে লিবিয়ার যুদ্ধবাজ জেনারেল খলিফা হাফতারের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করা আরো সহজ হয়ে গিয়েছিল? সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ফ্রান্সের সাথে নিজেকে একত্র করে রাশিয়া হাফতারকে সমর্থন করছে। অথচ কে ভেবেছিল যে রাশিয়া ইয়েমেনের বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধের স্থপতি সৌদি আরব এবং আমিরাতিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিসরে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল সিসিকে সমর্থন করেছিল। প্রশ্ন হলো কী ধরনের মাস্টারমাইন্ড রাশিয়াকে তাদের সাথে নিয়ে এসেছিল?

রাশিয়া মার্কিনবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাতে জনবিরোধী সরকারকে সমর্থন করে। ব্ল্যাকওয়াটারের মতো বেসরকারি আমেরিকান নিরাপত্তা সংস্থা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নোংরা নীতিগুলো বাস্তবায়ন করে। আর এখন, বেসরকারি রাশিয়ান সংস্থাগুলোকে সে কাজে নামানো হয়েছে লিবিয়া ও অন্য কয়েকটি দেশে।
স্নায়ুযুদ্ধের যুগে রাশিয়াকে মারাত্মক প্রতিযোগিতার দিকে চালিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র । ‘তারকা যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। আফগানিস্তান আক্রমণ করার পর এটি সোভিয়েত ইউনিয়নকে আরো কঠিন কাদায় আটকে ফেলে। আর এই দুটি কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন নিয়ে এসেছিল। প্রশ্ন হলো, পুতিনের রাশিয়া কি একই দিকে চলেছে?

দেখে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে নিজেদের বাহিনীকে পুনর্গঠন করা এবং চীনের উত্থান বন্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তার কার্যক্রমকে থামিয়ে দেবে। প্রশ্ন হলো এই অঞ্চলে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ভূমিকার সাথে কি এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্র কি রাশিয়াকে ভিলেন হওয়ার উপাধি দিয়ে দিতে চায়? পুতিন কি তার নিজের খেলা খেলছে, নাকি দাবা বোর্ডের বড় ছবিতে তিনি কেবলই একটি ঘুঁটি? কিছু আমেরিকান বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে আসার ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, রাশিয়া তা পূরণ করলে ওয়াশিংটন খুশি হবে। এটাই এমন একটি প্রশ্ন যার উত্তর অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

তুরস্কের কৌশলগত লাভ 

আঙ্কারা সম্ভবত তার সামরিক বিজয়গুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুনির্দিষ্ট আর্থিক, কৌশলগত এবং ভূ-রাজনৈতিক লাভে অনুবাদ করার চেষ্টা করবে। কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক স্তরে এটি যত দ্রুত সম্ভব এয়ার (আল-ওয়াতিয়া) এবং নৌ (মিগ্র্যাট) উভয় ঘাঁটি স্থাপন এবং পরিচালনা করার চেষ্টা করবে। তুরস্কের কার্গো বিমানগুলো ইতোমধ্যে আল-ওয়াতিয়া বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।

আর্থিক ও জ্বালানি দিক থেকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং অবকাঠামো ও নির্মাণ প্রকল্পে প্রধান ভূমিকা নিতে আগ্রহী আঙ্কারা। আঙ্কারা লিবিয়ায় নিরাপত্তা খাত সংস্কারে সহযোগিতা করতে চায়, লিবিয়ান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জিএনএকে বিদ্যুতের মতো প্রাথমিক পরিষেবা সরবরাহ করতে সহায়তা করতে চায়।

জিএনএ এখনও প্রমাণ করতে পারেনি যে, এটি লিবিয়ার কেবল যুদ্ধবিরোধী অন্য একটি দল নয়, সুসংগঠিত সরকার হিসেবে এটি কাজ করতে পারে। এ ব্যাপারে সর্বাধিক পরীক্ষাটি হবে প্রশাসনের ক্ষেত্রে জিএনএর সক্ষমতা এবং সদ্য অর্জিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসহ মৌলিক পরিষেবাদির নিশ্চিতকরণের মধ্যে।
লিবিয়ার তেল অর্ধচন্দ্রের নিকটবর্তী সির্তে এবং জুফ্রার ভবিষ্যৎ তুরস্ক এবং রাশিয়া আমিরাত-মিসর জোটের মধ্যে বিরোধের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুরস্কের সমর্থনে জিএনএ সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, আর তুরস্ক যে কোনো যুদ্ধবিরতির পূর্বশর্ত হিসেবে এলএনএ বাহিনীকে এই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তুরস্ক ও রাশিয়ার সম্পর্ক এবং মস্কোর সামরিক উপস্থিতি বিবেচনায় সিরিয়া ও লিবিয়ার দ্বন্দ্বের পরস্পর সংযুক্ত প্রকৃতির কারণে আঙ্কারা রাশিয়ার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আঙ্কারার তাৎক্ষণিক লক্ষ্য এই অঞ্চলগুলো থেকে এলএনএ’র পশ্চাৎপসরণ।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us