শ্বাসকষ্টের রোগীদের কেন বাড়তি সতর্কতা জরুরি?
শ্বাসকষ্টের রোগীদের কেন বাড়তি সতর্কতা জরুরি? - ছবি : সংগৃহীত
দেশে সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ), ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্টের অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাদের একাংশ প্রায় বছরভরই শ্বাসকষ্টে ভোগেন। মুশকিল হলো, এই ধরনের মানুষগুলি করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের ক্ষেত্রে রোগ জটিল হওয়ার আশঙ্কা সুস্থ সবল মানুষের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
আসলে সিওপিডি, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমার মতো রোগ থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সামান্য হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। যেকোনো জীবাণু সহজেই আক্রমণ হানতে পারে। একইভাবে এই কারণে আক্রান্তদের দেহে নোভেল করোনা ভাইরাসের বাসা বাঁধার আশঙ্কাও থাকে বেশি। তবে শুধু শ্বাসকষ্টের সমস্যাই নয়, সুগার, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ, ক্যান্সার সহ যে কোনও ক্রনিক রোগেও করোনার আশঙ্কা বাড়ে। তাই দীর্ঘদিনের শ্বাসকষ্ট থাকার পাশাপাশি অন্য রোগ থাকলে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
কী বলছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা?
শ্বাসকষ্টের রোগীর করোনা থেকে সমস্যা জটিল দিকে মোড় নেয়ার আশঙ্কাও থাকে অনেকটাই বেশি। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যেখানে সাধারণভাবে করোনায় মৃত্যুহার ২.৩ শতাংশের কাছাকাছি, সেখানে সিওপিডি আক্রান্তদের মৃত্যুহার প্রায় ৬.৩ শতাংশের আশপাশে। ফলে বুঝতেই পারছেন, এই রোগীদের মধ্যে কোভিড কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে!
কেন শ্বাসকষ্টের রোগীদের বাড়তি সতর্কতা জরুরি?
আগেই বলেছি এই ধরনের রোগ থাকলে এমনিতেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। শরীর জীবাণুর সঙ্গে সঠিকভাবে লড়াই করে উঠতে পারে না। দ্বিতীয়ত, করোনা মূলত ফুসফুসে আক্রমণ করছে। এক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের রোগীর ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল থাকে। এই অবস্থায় করোনাও হানা দিলে সমস্যা জটিল হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ। তাই সবদিক থেকেই একজন শ্বাসকষ্টের রোগীকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
করোনা না সাধারণ শ্বাসকষ্ট, বুঝবেন কীভাবে?
সাধারণত শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত বহু রোগীর প্রায়ই শ্বাস নিয়ে তীব্র সমস্যা হয়। আবার করোনার অন্যতম উপসর্গও শ্বাসকষ্ট। অনেকেরই প্রশ্ন, সিওপিডি, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমার জন্য শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, না করোনার জন্য হচ্ছে, বুঝব কী করে? উত্তর হল— সাদা চোখে শুধুমাত্র শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখে করোনা না ক্রনিক রোগের সমস্যা, বোঝার উপায় নেই। তবে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি জ্বর থাকলে, করোনা হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়। এক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। অন্য ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ থেকেও জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায় হলো করোনা পরীক্ষা। এই রিপোর্টের ফলাফলই বলে দেবে ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত কি না।
কখন সাবধান?
সিওপিডি’র রোগীর শ্বাসকষ্ট হওয়া খুব স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বরাবরের সঙ্গী ইনহেলার নিতে হবে। তাতেও সমস্যা না কমলে বা বাড়তে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়া করোনার অন্যান্য উপসর্গ যেমন— জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, পেট খারাপ ইত্যাদি লক্ষণ থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সতর্ক থাকুন
বহু সিওপিডি বা ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমার রোগীকে বছরভর ওষুধ বা ইনহেলার নিতে হয়। তাদের এ সময়ও চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ- ইনহেলার চালু রাখতে হবে। ডায়াবেটিস, প্রেশারের মতো অন্য কারণে ওষুধ খেতে হলে তা বন্ধ করলে চলবে না।
এছাড়া অন্য সকলের মতোই শ্বাসের রোগীর সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের করোনা প্রতিরোধের তিন নিয়ম মানতে হবে—
মাস্ক পরা
অন্যের থেকে ৬ ফুট দূরত্ব রাখা
নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোওয়া বা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা।
রোগ প্রতিরোধের সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও করোনা আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত হবেন না। নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে সিংহভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে যান।
* বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিক্যাল কনসালটেন্ট
সূত্র : বর্তমান