রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক চক্রে নেপাল
প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি - ছবি : সংগৃহীত
বর্তমানে রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে নেপাল। এমনটা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফলে। আর তার পেছনে রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সভ্যতার লড়াই, নেপাল এর মাঝখানে পড়ে গেছে।
এই লড়াইয়ে একটি পক্ষ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে নেপালকে। এটা খুবই কঠিন বিষয়। কারণ দেশের অর্ধেক চায় পূর্ব দিকে (চীন) তাকাতে বিদ্যমান ভারতীয় আধিপত্য রুখে দিতে এবং অর্থনৈতিক সহায়তা লাভ করার জন্য। আর বাকি অর্ধেক চায় পশ্চিম ও সেইসাথে হিন্দু প্রধান্যপূর্ণ ভারতের সাথে সহাবস্থানে থাকতে।
অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে টিকে থাকার যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি সবার প্রতি সবকিছু ছুঁড়ে (কিচেন সিঙ্ক পর্যন্ত) দিচ্ছেন। আর এতে বিস্ময়কর কিছু ফল আসছে। তিনি গোপন আলোচনায় নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কো-চেয়ার পুস্প কমল দহলের সাথে সমঝোতা করেছেন। এতে অন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বি অস্বস্তিতে পড়ে গেছে।
ভারতের সাথে লিপু লেখ বিরোধে ওলি নেপালে এখন পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি নতুন মানচিত্রের প্রতি ২৫৮ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
আবার লিপু লেখ সমস্যার সমাধান হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী ওলি গত সপ্তাহে দাবি করলেন যে দেবতা রামের জন্মভূমি অযোধ্যা নয়, তা নেপালে। তিনি এর মাধ্যমে তার জাতীয়তাবাদী অবস্থান আরো জোরদার করলেন। ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলো নিষিদ্ধ করা ছিল তার আরেকটি জাতীয়তাবাদী পদক্ষেপ। তার এ ধরনের দাবি বা পদক্ষেপের কোনোটিরই হয়তো কোনো তাৎপর্য নেই, কিন্তু অনেক সময় জাতীয় লোকরঞ্জকবাদের ঢলে সত্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
এসব ঘটনায় কিছু সুযোগ ও সেইসাথে ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়েছে। জাতি হিসেবে নেপালের টিকে থাকা নিশ্চিত করার জন্য এগুলো যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
প্রথমত, ভারত এই বার্তা পেয়েছে যে নেপাল এমনিতেই তাদের হাতে থাকবে। এটা ভবিষ্যতে সমান মর্যাদায় আলোচনার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। তবে এখানে ঝুঁকি হলো, ভারত অপমানিত হয়েছে (প্রায়ই তা হয়ে থাকে) এবং নেপালের রাজনীতিতে সবসময় উপস্থিত প্রক্সিগুলোর মাধ্যমে নেপালকে আরো অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
দ্বিতীয়ত, চীন প্রথমবারের মতো নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে প্রকাশ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। এর ফলে চীনের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে ভারতের সাথে ৮০ ভাগ বাণিজ্য নির্ভরশীলতা হ্রাস পেতে পারে।
ঝুঁকি হলো এই যে চীন ও ভারত (এবং তার মার্কিন মিত্র) এখন তাদের নিজস্ব অনুকূলে নেপালি রাজনীতিকে চালিত করার জন্য প্রভাব বিস্তার করতে চাইবে। আর এতে করে দুই বিশাল প্রতিবেশীর (পূর্ব ও পশ্চিম) প্রভাব বিস্তারের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে নেপাল।
নেপালের সামনে অনিবার্যভাবেই প্রতিকূল পথ। এই গোলযোগপূর্ণ সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নেপালকে। তবে সান্ত্বনার বিষয় হলো, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তার চেয়ে খারাপ কিছুই হতে পারে না।
নেপালি টাইমস