টার্গেট চীন : মালাক্কা প্রণালীতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র মহড়া
টার্গেট চীন : মালাক্কা প্রণালীতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র মহড়া - ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে পুরো ভারত মহাসাড় সামরিক ও কূটনৈতিক বৈরিতা ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া চালিয়েই মার্কিন নৌবাহিনীল বৃহত্তম শিপ ফরমেশন, নিমিৎজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ তার প্রতিরক্ষা অংশীদার ভারতের সাথে যৌথ মহড়া শুরু করেছে। এটি হচ্ছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ মালাক্কা প্রণালীতে। এটিকে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেকপয়েন্ট। ইউরোপের সাথে চীনের বেশির ভাগ বাণিজ্য চলে এই পথে এবং এখান দিয়েই চীন তার তেল আমদানি করে থাকে।
মার্কিণ নৌবাহিনীর তথ্যানুযায়ী, আমেরিকান ও ভারতীয় উভয় নৌবাহিনী বিমান প্রতিরক্ষাসহ সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণ ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। মহড়ায় ভারতের রানা, সাহিদ্রি, শিভালিক ও করোর্তা রণতরীর পাশাপাশি নিমিজৎ ক্যারিয়ার, নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ক্রুইজার ইউএসএস প্রিন্সটন ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রোয়ার ইউএসএস স্ট্রেরেট ও ইউএসএস রালফ জনসন এতে অংশ নিচ্ছে।
র্যা ন্ড করপোরেশনের সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান বলেন, কার বিরুদ্ধে এই মহড়া? উভয়ের শত্রু চীনের বিরুদ্ধে।
ভারত কয়েক দশক ধরে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে।সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কোনো জোটে ভারতের অংশগ্রহণ প্রশ্নে বিষয়টি আবার উল্লেখ করেন। তবে ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি উভয়েই বেইজিংয়ের সাথে খুবই উত্তেজনাকর অবস্থায় থাকায় তারা কাছাকাছি চলে আসছে।
গ্রসম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার পরাশক্তিগত প্রতিযোগিতা ভারতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত অনেক বছর ধরে নিরপেক্ষ ছিল। কিন্তু চীনের সাথে সাম্প্রতিক অচলাবস্থার কারণে ভারত বুঝতে পেরেছে যে বেইজিংয়ের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন ব্যাপার।
জুনে বিরোধপূর্ণ লাদাখে তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীন। এতে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। উল্লেখ্য, উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দুই দেশের কেউই সীমান্তে তাদের সৈন্যদের হাতে অস্ত্র ধারণ করার অনুমতি দেয় না।
দক্ষিণ এশিয়ায় চীন তার উপস্থিতি সম্প্রসারণ করার প্রেক্ষাপটে এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে সামরিক ও বিনিয়োগ সহায়তা করার পাশাপাশি বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতেও প্রভাব বিস্তার করছে চীন।
গ্রসম্যান বলেন, ২০১৭ সালের দোকলাম সঙ্ঘাতের পর ভারত তার অবস্থান জোরদার করছে। তারা বুঝতে পেরেছে, চীনারা সব জায়গায় যাচ্ছে। তারা কেবল পার্বত্য এলাকায় নয়, ভারত মহাসাগরেই নয়, ছোট ছোট দেশকেও ভারতের কক্ষ থেকে বের করে নিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে এই মহড়া হচ্ছে।
তাছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরেও উত্তাপ বাড়ছে। সেখানে চীনের ৯০ ভাগ দাবির বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করছে ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম।
গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তার আঞ্চলিক মিত্রদের পক্ষ নিয়ে তথাকথিত নাইন-ড্যাশ নাইন প্রশ্নে বেইজিংয়ের তীব্র সমালোচনা করেছে।
গ্রসম্যান বলেন, বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ভারত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালাক্কা সঙ্কট নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন : শত্রুদের সাথে যুদ্ধ হলে তারা প্রণালীটি বন্ধ করে দিলে কী হবে? চীনের তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মালাক্কা একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হওয়ায় এটি একটি বড় সমস্যা হতে পারে।
নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ