নির্বাচনে জয়ের সংগ্রাম মিয়ানমারের মুসলিমদের

কিয়াও ইয়ে লিন | Jul 22, 2020 07:52 am
নামাজ আদায় করছে ইয়াঙ্গুনের মুসলিমরা

নামাজ আদায় করছে ইয়াঙ্গুনের মুসলিমরা - ছবি : সংগৃহীত

 

মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলো ৮ নভেম্বরের ৮ নভেম্বরের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের জন্য কোমর বেঁধে নামছে। প্রায় ছয় যুগের মধ্যে এই প্রথম কোনো বেসামরিক সরকারের অধীনে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন ১ জুলাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ৯৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ২০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থী তালিকা চেয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই সারা মিয়ানমারে মুসলিম প্রার্থীদের তাদের সংশ্লিষ্ট আসনে প্রচারণা চালানোর কাজে সহায়তার জন্য ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি দল দল গঠন করেছে। দলে কয়েকজন আইনজীবীও রয়েছেন।

দলের মুখপাত্র মং মং মিয়ন্ত আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন, দলটি মুসলিম প্রার্থীদেরকে আর্থিকভাবে, আইনগতভাবে ও কারিগরিভাবে সহায়তা করবে।
তিনি টেলিফোনে বলেন, দেশের জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমরা ৫ ভাগের বেশি হলেও পার্লামেন্টে আমাদের কোনো আইনপ্রণেতা নেই, এটি লজ্জার ব্যাপার।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রার্থী ছিল ছয় হাজারের বেশি। এর মধ্যে মুসলিম ছিল মাত্র ২৫ জন। তাদের কেউ জয়ী হয়নি। তিনি বলেন, কমিশন শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নাগরিকত্বের অজুহাত দেখানো হয়েছিল।

নির্বাচনী আইন অনুসারে, প্রার্থীর জন্মের সময় প্রার্থীর মা-বাবা স্বীকৃত নাগরিক ছিল, তা প্রমাণ করতে হবে।
মিয়ন্ত বলেন, এ কারণে আমরা প্রার্থী নিবন্ধনের শুরুতেই পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের সহায়তা করছি।
মিয়ানমারের দুই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, আং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ও সামরিক-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) গত সাধারণ নির্বাচনে কোনো মুসলিম প্রার্থী মনোনীত করেনি।
দলগুলো এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়নি। তবে মিয়ন্ত বলেন, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের মুসলিমকে প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

তিনি বলেন, কোনো দল মুসলিমদের প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করছে, এমন কোনো কথা আমরা শুনিনি।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত মাত্র প্রায় ২০ জন স্বতন্ত্র মুসলিম প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়া ও রাখাইন থেকে নির্বাচন করবেন।
এনএলডির মুখপাত্র আং শিন স্বীকার করেন যে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গ্রুপগুলোর কাছ থেকে সমালোচনা এড়ানোর জন্যই তারা মুসলিম প্রার্থীদের বাদ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রবল ছিল। তবে এবার এমনটা হবে না বলে আনাদুলু এজেন্সিকে তিনি গত সপ্তাহে ফোনে বলেন।তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার দল বর্ণ, ধর্মনির্বিশেষে প্রার্থী বাছাই করবে।

তিনি বলেন, মুসলিম প্রার্থী বাছাই করব না, এমন কোনো নীতি আমাদের নেই। তবে তা নির্ভর করবে স্থানীয় সম্প্রদায়ের ইচ্ছার ওপর।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা তৈরী করে। সেখান থেকে দলের প্রধান নির্বাহী কমিটি প্রার্থী মনোনীত করে।
ইয়াঙ্গুনের মিঙ্গালার তুঙনিয়ন্ত টাউনশিপের মুসলিম অধিবাসী মিন হতে বলেন, শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিম প্রার্থী মনোনীত করবে বলে তিনি মনে করেন না।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় না যে এনএলডি বা অন্য দলগুলো মুসলিম প্রার্থী মনোনীত করে ভোট হারানোর ঝুঁকি নেবে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক হলো বৌদ্ধ।
তিনি আনাদুলুকে বলেন, তবে দলগুলো বৈষম্যহীন নীতির কথা প্রচার করার জন্য কিছু মুসলিম প্রার্থী অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

মুসলিম সমাজ কেবল প্রার্থীর স্বল্পতা নিয়েই উদ্বিগ্ন নয়, সেইসাথে ছোট দলের হয়ে নির্বাচন করা তাদের জয়ের সম্ভাবনা কম নিয়েও চিন্তিত।
তিনি বলেন, লোকজন বড় বড় দলকে ভোট দেয়। ফলে এনএলডি বা ইউএসডিপির মতো দলে না থাকলে আবারো মুসলিমমুক্ত পার্লামেন্ট হতে পারে।
২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মুসলিমরা হলো দেশের ৫১ মিলিয়ন জনসংখ্যঅর ৪ ভাগ। অবশ্য বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে ক্রমবর্ধমান মুসলিমবিরোধী ভাবাবেগের ফলে মুসলিমরা প্রায়ই বিদ্বেষের শিকার হয়ে থাকে।

মুসলিম নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে রাখাইন রাজ্যে। জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সামরিক বাহিনীর নৃশংস দমন অভিযানে সাত লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে অভিহিত করে। কিন্তু রোহিঙ্গারা মনে করে, তারা কয়েক শ’ বছর ধরে এ অঞ্চলে বাস করছে। রাখাইনের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক জাতীয় পরিচয়পত্র (সাদা কার্ড) দেয়া হয়েছিল। তারা ২০১০ সালে ভোটও দিতে পেরেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট থিন সিন ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগে তা বাতিল করেন।এর ফলে ওই নির্বাচনে রোহিঙ্গারা অংশ নিতে পারেনি।
রোহিঙ্গা রাজনীতিবিদ, ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস পার্টির চেয়ারপারসন কিউ মিনসহ আরো কয়েকজন প্রার্থীর প্রার্থিতা ২০১৫ সালের নির্বাচনে বাতিল করা হয়েছিল।

তিনি আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন, আমি ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিমদের ভোটের অধিকার ছিল।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের আগে মিয়ানমারের ইতিহাসের প্রতিটি পার্লামেন্টে অন্তত একজন মুসলিম আইনপ্রণেতা ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের পর আমাদের সম্প্রদায় প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারও খুইয়েছে।
তার দল সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছে রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য।

সূত্র : আনাদুলু এজেন্সি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us