স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসে করোনার চিকিৎসা
জটিল রোগাক্রান্তদের করোনা চিকিৎসা - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলেই রোগী তো বটেই তার পরিবারের সদস্যরা পর্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৮০% রোগী চিকিৎসা ছাড়াই অথবা সামান্য চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যাদের আগে থেকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি রোগ, লিভারের রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগ রয়েছে তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতই কম থাকে যে সামান্য সংক্রমণেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আগে থেকে ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীরা যখন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন তখন তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রদান করতে হয়। জিংক সাপ্লিমেন্ট সিজনাল ফ্লু, ঠাণ্ডা এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত জিংক কিডনিতে সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। তাই কিডনি রোগীরা জিংক ব্যবহারে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
করোনা রোগীদের সবাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কিডনি রোগীদের অতিরিক্ত ভিটামিন সি খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। তাই কিডনি রোগীদের পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে হার্টে মায়োকার্ডাইটিস হতে পারে এবং বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে রক্ত চলাচলের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে রোগীর হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করতে পারে যার কারণে ব্রেইন স্ট্রোক থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে বুকে ব্যথা বা প্রদাহের সৃষ্টি হলে করোনাভাইরাসের কথা না ভেবে প্রথমে বুকে ব্যথার চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। হার্টের রোগী হলে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেরি না করে সেবন করতে হবে। করোনাভাইরাস যেহেতু রক্ত জমাট বাঁধিয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে তাই বুকে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত তরল করার ওষুধ ক্লোপিড্রগেল বা ক্লোপিড্রগেল প্লাস সেবন করতে হবে যতক্ষণ না তার লক্ষণ চলে যায়। কোনো অবস্থাতেই করোনার কথা চিন্তা করে হার্টের ওষুধ সেবন বাদ দেয়া যাবে না। হার্টের যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করেই করোনাভাইরাসের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কয়েক দিন আগে এ ওষুধটি আবার পরীক্ষার জন্য প্রয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। হার্টের রোগীদের জন্য কোনো অবস্থাতেই হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এই ওষুধটির জন্য রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি থেকে যায়। গবেষকরা সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করেছেন করোনাভাইরাস ফুসফুসে ছোট ছোট রক্ত জমাট সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় কিডনি এবং হার্টে একইভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে এবং মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
এজিথ্রোমাইসিন একটি এন্টিবায়োটিক যা করোনাভাইরাসে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করে না। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এজিথ্রোমাইসিন সেবন করা যাবে না। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার বিরুদ্ধে এজিথ্রোমাইসিন কাজ করে থাকে। তবে হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে এজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা ঠিক নয়। হার্টের রোগীদের প্রয়োজন হলে ডক্সিসাইক্লিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের হার্টের কার্যক্ষমতা কম এবং শ্বাসকষ্টের রোগী তাদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেই সম্ভব হলে নিজ উদ্যোগে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে নিতে হবে।
লিভারের রোগীদের মুখস্ত কোনো ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। একটি ফরাসি গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিস আছে এমন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ১০ ভাগ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মারা গিয়েছিল। এর মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ রোগীর ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হয়েছিল। অবশ্য রোগীদের গড় বয়স ছিল ৭০ বছর। তারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তাই বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর ব্যবহারে সাবধান হতে হবে। তাই করোনা রোগের চিকিৎসায় সতর্ক থাকবেন। নিজে নিজে চিকিৎসা করবেন না। সচেতন থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ,
ফোন : ০১৮১৭৫২১৮৯৭