কুরআন ধারণের এত ফজিলত
কুরআন - ছবি : সংগৃহীত
দুনিয়াতে কর্মের প্রতিদান দেয়ার নীতি কোনো না কোনোভাবে চালু থাকলেও কাজের পূর্ণ প্রতিফল মিলবে আখিরাতে। আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রত্যেকের কাজ অনুযায়ী পূর্ণ শান্তি ও শাস্তি প্রদান করবেন আখিরাতে। পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেতে হলে যেমন অধ্যবসায় জরুরি, ঠিক তেমন মুমিনের জন্য তার মানজিলে পৌঁছতে হলে জীবনের সার্বিক বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ গাইড কুরআনুল কারিম অনুসরণ অনুকরণ করা জরুরি। আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ এ কিতাব সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মাদ সা: এর প্রতি নাজিল করেন ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে। হেরা পর্বতের গুহায় রাসূলুল্লাহ সা: ধ্যানমগ্ন থাকাকালে ফেরেশতা জিবরাইল আ: সর্বপ্রথম আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াতের ওহি নিয়ে উপস্থিত হন।
প্রত্যেক নবী-রাসূলের মুজিজা রয়েছে, রাসূল সা:-এর শ্রেষ্ঠ ও জীবন্ত মুজিজা হলো আল-কুরআন। কুরআন সব আসমানি গ্রন্থের সারসংক্ষেপ। বলাবাহুল্য, এই মহান কিতাবের সারসংক্ষেপ হলো ‘সূরাতুল ফাতিহা’।
মুমিন : জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাদের জন্য আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন। কুরআনের আয়াত মুমিনের হৃদয় আন্দোলিত করে ও ঈমান বৃদ্ধি করে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, মুমিন তো তারাই, আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়ামাত্রই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের সামনে কুরআন পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল : ০২)
সন্তানের প্রতি দায়িত্ব : পারিবারিক বন্ধন এক শান্তি ও প্রশান্তির নাম। আমরা কখনো পারিবারিক এ প্রশান্তি অন্য কোনো ক্ষেত্র থেকে পেতে পারি না। কারণ এ প্রশান্তির সুতা কেবল পরিবারের সদস্যদের মাঝেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন রাব্বুল আলামিন।
জন্মের পর থেকে সন্তানকে লালন-পালন করা এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয়া মা-বাবার দায়িত্ব হলেও সব বাবা-মা এ দায়িত্ব নিজেদের আখিরাতের উপকারের কথা ভেবে করেন না। অথচ এ ভাবনাই ছিল প্রকৃতপক্ষে উত্তম ভাবনা। জন্মলগ্ন থেকে যে শিশু কুরআনের ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠে সে কুরআনের বিপরীত পথে কখনো পা বাড়াবে না, যদিও শয়তানের প্ররোচনায় ভুল করে বসে, সাথে সাথেই সে ভুল থেকে প্রত্যাবর্তন সে করবে। ভুল থেকে ফেরার এ অনুভূতি কুরআনের পরশেই তার মধ্যে জাগবে।
সদ্যজাত শিশু কাদার মতো, এর আকার বাবা-মা যেমন চান দিতে পারেন। তাই কুরআনিক শিক্ষায় সন্তানকে গড়ে তোলা আর পরকালের জন্য স্থায়ী সঞ্চয় করা একই মানদণ্ডের সৌভাগ্য।
মা-বাবার কবরের জন্য সঞ্চয় : প্রত্যেক জীব মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। মানুষের নিজের আমল মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির দুনিয়াতে রেখে যাওয়া নেক সন্তানের আমল সদকায়ে জারিয়া হিসেবে মা-বাবার কবরে পৌঁছে থাকে। কবরের বিছানা নেক সন্তানের নেকির কারণে মা-বাবার জন্য শীতল বিছানার রূপে সাজানো হয়। কবরের প্রতিটি দিক তখন হয়ে ওঠে আলোয় আলোকিত।
কেয়ামতের ময়দানে হাফেজের মা-বাবার মর্যাদা : কুরআনুল কারিমের মুজিজা এর মুখস্থকরণ। হজরত মু’য়াজ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে তাতে যা লেখা আছে সে অনুযায়ী আমল করেছে তা হলে তার মা-বাবাকে কিয়ামত দিবসে একটি নূরের টুপি পরানো হবে, যদি সূর্য তোমাদের গৃহে প্রবেশ করত তাহলে ওই সূর্যের আলো অপেক্ষা ওই টুপির আলো উজ্জ্বলতর হবে। এখন তোমরা চিন্তা করো, যে ব্যক্তি কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আমল করে তার মর্যাদা কত উত্তম হবে। ( আবু দাউদ, আহমাদ পৃ: ১৮৫)
ইবনে আবু তালেব রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে ও তা মুখস্থ করে, অতঃপর কুরআন যা হালাল করেছে তা নিজের জন্য তা হালাল এবং কুরআন যা হারাম করেছে তা নিজের জন্য তা হারাম করেছে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন ১০ জনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে যাদের পরিণাম জাহান্নাম অবধারিত ছিল। (তিরমিজি ৫/২৯০৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের কুরআনের সঙ্গী হয়ে নেক সন্তান হিসেবে কবুল করুন, বাবা-মা আমাদের প্রতি যেরূপ দয়া করেছেন রব্বে কারিম সেভাবেই তাদের প্রতি দয়া করুন!
লেখিকা : শিক্ষার্থী, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়