মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মহাপরিকল্পনা
মধ্যপ্রাচ্যে চীনইরানের মহাপরিকল্পনা - ছবি : সংগৃহীত
আসন্ন সাইনো-ইরানিয়ান কম্প্রেহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ নামে অভিহিত ২৫ বছর মেয়াদি সহযোগিতা চুক্তিটি পরীক্ষা করা উচিত। চোখে যতটা দেখা যায়, তার চেয়েও বেশি কিছু আছে। বেইজিং এমনকি ইরানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথেও ব্যাপকভিত্তিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে।
ধারণা করা হচ্ছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও সিনিয়র ভাইস-প্রিমিয়ার হ্যান ঝেং সৌদি আরবের সাথে অংশীদারিত্ব আলোচনা চালাচ্ছেন। আর পলিটব্যুরো সদস্য ইয়াং জেচি সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাথে আলোচনা করছেন। এই ইয়াং আবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পররাষ্ট্র বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, রিয়াদ ও আবু ধাবির সাথে অংশীদারিত্বকে বেইজিং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
চীনের প্রিয়ভাজন কেউ নেই। স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্টতা ও দীর্ঘ মেয়াদি সম্ভাবনার আলোই চীনের আঞ্চলিক নীতি নির্ধারিত হয়। পারস্য উপসাগরে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করতে চায় চীন। চীনের কৌশলগত তেল রিজার্ভ গড়ে তোলার জন্য সৌদি আরব হলো পছন্দের অংশীদার। তবে এই অঞ্চলে চীনের সম্প্রসারণশীল প্রভাবের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও দরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে চীনের পছন্দ করার কারণ এটি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে পরিবহন ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে থাকার কারণেই নয়, বরং সেইসাথে সাহসী নতুন দুনিয়ায় প্রবেশের আকাঙ্ক্ষী হওয়ার কারণেও।
আমিরাতের রাষ্ট্রীয়-পরিচালিত টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানিগুলো হুওয়েইকে তাদের ৫জি সেলুলার নেটওয়ার্ক চুক্তি দিয়েছে। চীনের বাইরে বৃহত্তম কোভিড-১৯ পরীক্ষা স্থাপনা আবু ধাবিতে অবস্থিত। এটি চীনা জিনোমিক্স কোম্পানি বিজি১ ও আমিরাতের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জি৪২-এর যৌথ উদ্যোগ। আমিরাতি কোম্পানিটি দেশটির রাজপরিবারের সাথেও সম্পর্কিত।
ইরানের দিকে নজর ফেরানো যাক। আমেরিকান অবরোধ ও মহামারির কারণে দেশটি এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে রয়েছে। দেশটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) একীভূত হলে লাভবান হতে পারবে। চীনের সাথে প্রস্তাবিত ৪০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির ফলে শত শত প্রকল্প চালু হবে। এটি ইরানের ক্রমবর্ধমান আর্থিক ও অবকাঠামো চাহিদা পূরণ করবে, চীনা কোম্পানি ও টেক জায়ান্টদের বাণিজ্যিক স্বার্থ পূরণ করবে। বিআরআইয়ের যোগান দেয়া পুঁজি ইরানের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ব্যবধান পূরণ করবে, পরিবহন ব্যবস্থা, তেল, গ্যাস ও পেট্রোক্যামিলেক খাত এবং বন্দর ও শিল্প জোনের জন্য প্রবৃদ্ধির নতুন ভেন্যু খুলে দেবে।
ইরানের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বে সীমাহীন সম্ভাবনা দেখছে চীন। দেশটি সস্তা তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিপুল পরিমাণে যোগান দিতে পারবে, তার বাজারও রয়েছে। এই ভূ-কৌশলগত ভারসাম্যে উভয়েই লাভবান হবে। সংক্ষেপে বলা যায়, চীনের ইরান নীতির পেছনে রয়েছে পারস্য উপসাগরে তার ক্রমবর্ধমান অবস্থান সৃষ্টি। চীন এই অঞ্চলে বিভিন্ন খেলোয়াড়ের সাথে বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তবে এই সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার বৈশ্বিক সঙ্ঘাতের বিষয়টিও মাথায় রেখেছে।
ট্রিবিউন ইন্ডিয়া