ভারত-চীন লড়াই এবার মহাসাগরে!
ভারত-চীন লড়াই এবার মহাসাগরে! - ছবি : সংগৃহীত
গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও চীনের মধ্যকার নাজুকভাবে চিহ্নিত লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখেছে বিশ্ব। সুস্থ বিবেক প্রাধান্য পেয়েছে এবং চীন লাদাখ উপত্যকার কাছে পার্বত্য অঞ্চল থেকে তার সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে ওই স্থান থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে দেশ দুটির মধ্যে আরেকটি উত্তেজনা দানা বেঁধে ওঠছে।
নয়া দিল্লি এখন এই অঞ্চলে চীন নৌবাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করছে। ২০১৪ সালে চীনা সাবমেরিন শ্রীলঙ্কা সফর করার পর থেকে ভারতও এখানে তাদের অবস্থান জোরদার করেছে। টাস্ক অ্যান্ড পারপারস/বিজনেস ইনসাইডার খবর প্রকাশ করেছে যে ভারতীয় কর্মকর্তারা তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দিয়েছে- শিগগিরই ভারতীয় নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রকল্প নিয়ে তারা অগ্রসর হবে।
স্থলভাবে ভারত ও চীনকে বেশ সমান অবস্থায় দেখা যায়। সেনাবাহিনীর আকারের দিক থেকে এই দুটি দেশ যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে। কিন্তু চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভিকে আ্ধনিকায়ন করার প্রয়াসের দিক থেকে সাগরে তারা অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।
অবশ্য অনেকে যেভাবে বলছে, চীন হয়তো তত সুবিধাজনক অবস্থায় নেই।
বিশ্বে যে ৯টি দেশ এখন বিমানবাহী রণতরী পরিচালনা করে, তার মধ্যে দুটি হলো ভারত ও চীন। উভয় দেশই মূলত সোভিয়েত আমলের রণতরীকে কিছু সংস্কার করে পরিচালনা করে। চীনে প্রথম দেশে তৈরী রণতরী শ্যানদং ২০১৯ সালের শেষ দিকে নৌবাহিনীতে যোগ দেয়। ভারত ২০১৩ সালে দেশে তৈরী তার প্রথম রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত চালু করেছে, আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে তা নৌবাহিনীতে যোগ দেবে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতীয় নৌবাহিনী দুটি সাবেক ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ পরিচালনা করত। এর মধ্যে একটি হলো আইএনএস বিক্রান্ত (সাবেক এইচএমএস হারকিউলিস)। এটি ১৯৭১ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় থেকে ভারতের হয়ে কাজ করছে।
রবার্ট ফারলে চলতি বছরের প্রথম দিকে ভারতের রণতরী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন।তিনি বলেন, মারাত্মক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই ক্যারিয়ার পরিকল্পনাকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছে। চীন (কিংবা এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নও) যেখানে সাবমেরিনের ওপর জোর দিয়েছে, সেখানে ভারতের অগ্রাধিকার ছিল বিমানবাহী রণতরী। ম্যাজেস্টিক-ক্লাস লাইট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রান্ত ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে কার্যকরভাবে অংশ নিয়েছে। সেনটুর-ক্লাস ক্যারিয়ার এইচএমএস হারমিস ১৯৮৭ সালের ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেয়, কাজ করেছে ২০১৬ পর্যন্ত। এসব ক্যারিয়ার ভারতীয় নৌবাহিনীকে দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার অভিজ্ঞতা দিয়েছে। সেইসাথে ক্যারিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতাও বাড়িয়েছে।
মালাক্কা প্রণালী বন্ধ করে দেয়া
ব্যাপকভাবে আলোচিত একটি বিষয় হলো, ভারত কিভাবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে নিয়ন্ত্রণকারী মালাক্কা প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করে চীনের সম্প্রসারণ ও আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে পারে। মালয় পেনিনসুলা ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার মাঝখানের এই প্রণালীটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলকারী রুট হিসেবে বিরাজ করছে।
এই প্রণালী দিয়ে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ জাহাজ চলাচল করে, চীনা পণ্যসহ বিশ্ব বাণিজ্যের ২৫ ভাগ হয় এখান দিয়ে। বিশ্বের যত তেল পরিবহন করা হয়, তার এক চতুর্থাংশ হয় এই পথে।
চলতি মাসে ফরবেস.কমে এইচ আই সাটন উল্লেখ করেছেন, সঙ্কট বা যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারত সহজেই এই প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার মতো অবস্থায় আছে। ভারত যদি চীনের বাণিজ্য বিচ্ছিন্ন করতে চায়, তবে তারা মালাক্কা প্রণালীতে কিছু জাহাজ মোতায়েন করেই তা করতে পারে।
চীনা নৌবাহিনীর জন্য মালাক্কা প্রণালী আরেকটি মারাত্মক ইস্যু সৃষ্টি করেছে। কারণ এই প্রণালী ব্যবহার করতে না পারলে চীন মারাত্মক সমস্যায় পড়বে।
ভারতের আঞ্চলিক মিত্ররা
চীনের সাম্প্রতিক নৌসম্প্রসারণের একটি সমস্যা হলো, দেশটি তেমন সংখ্যক মিত্র তৈরী করতে পারেনি। বরং তার কার্যক্রমের ফলে শত্রুরা একজোট হয়েছে।
গত মাসে জাপানের সাথে ভারত নৌমহড়া চালিয়েছে। সাম্প্রতিক সঙ্কটে যে কয়েকটি দেশ প্রকাশ্যে ভারতকে সমর্থন দিয়েছিল, তার অন্যতম হলো জাপান। হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, এটা হলো তিন বছরের মধ্যে ১৫তম মহড়া, জাপানের মেরিটাইমস সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্যতম অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের নৌবাহিনীর সাথেও চীনের বিরোধ আছে। আবার মার্কিন নৌবাহিনী দুটি বিমানবাহী রণতরী, বি-৫২ বোমারু বিমান এবং আরো কিছু এই অঞ্চলে মোতায়েন করতে সক্ষম।আর নয়া দিল্লির ক্ষমতার করিডোরে তা বেশ গ্রহণীয়।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট