সাবরিনাকে ব্যবহার করা হয়েছিল!
ডা. সাবরিনা - ছবি : সংগৃহীত
সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দফতরে নিজের ফেসভ্যালুকে পুঁজি করে জেকেজি হেলথ কেয়ারের জন্য সুবিধা নিয়েছেন ডা: সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। জেকেজির জন্য বিশেষ সুবিধা আনার জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী তার চতুর্থ স্ত্রী সাবরিনাকে বিভিন্ন দফতরে পাঠাতেন। সাবরিনা তার পরিচিতি ও সৌন্দর্য ব্যবহার করে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা বাগাতেন। রিমান্ডে থাকা জেকেজির চেয়ারম্যান ও সদ্য বরখাস্ত হওয়া হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা: সাবরিনা ও জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরীর কাছ থেকে এমন কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
এ দিকে সাবরিনা ও আরিফকে কোন কোন দফতর থেকে কী ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে, তার সাথে কোন কর্মকর্তা বা বিশেষ ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছেন সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। প্রয়োজন হলে ওই সব কর্মকর্তা ও বিশেষ ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। গতকাল দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন কথা বলেন।
আবদুল বাতেন বলেন, সব কাজে ডা: সাবরিনা তার ফেসভ্যালুটাকে ব্যবহার করেছেন। চিকিৎসক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন জায়গায় তার যে পরিচিতি রয়েছে সেটা দিয়েই তিনি প্রতারণা করেছেন। করোনার এই সময়ে তিনি একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। যেখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য যেভাবে নমুনা সংগ্রহ ও সেবা দেয়ার কথা ছিল, তারা সেভাবে দেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত করে যদি ক্রিমিনাল অফেন্স পাওয়া যায় সে বিষয়ে ক্রিমিনাল রেকর্ডে নিয়ে আসা হবে। আর যেগুলো বিভাগীয় অপরাধ ও অনিয়ম সেগুলো লিখিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। সরকারি চাকরি করে এমন কোনো কর্মকর্তা যদি তার দায়িত্বের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতর ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা তার বিষয়ে যে তথ্য পেয়েছি সেটি স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে জানাব। তারা দেখবেন এটা ক্রিমিনাল অফেন্স নাকি বিভাগীয় অফেন্স। তারা যদি ক্রিমিনাল কোনো অফেন্সের ব্যবস্থার জন্য আমাদের কাছে আসেন, অবশ্যই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, জেকেজির দুর্নীতি সম্পর্কে রিমান্ডে সব দোষ স্বামী আরিফ চৌধুরীকে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও পার পাচ্ছেন না সাবরিনা। বিভিন্ন তদন্তে গোয়েন্দারা সাবরিনার শুধু সম্পৃক্ততাই নয়, নেতৃত্ব দেয়ার প্রমাণও পেয়েছেন। তিনি বেশ কয়েকজন সরকারদলীয় চিকিৎসক নেতা ও স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছেন। ওইসব নেতা ও কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধা নিয়ে জেকেজির হয়ে কাজ করেছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের ওপর গোয়েন্দা নজরদারিও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে চায়নি সূত্রটি।
উল্লেখ্য, প্রতারণা ও করোনা রিপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে ডাকা হয় সাবরিনাকে।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জেকেজির রিপোর্ট জালিয়াতির সাথে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ফ্রিজ করে দেয়া হয় তার ব্যাংক হিসাব। গ্রেফতারের পরদিন আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ দিকে রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য না দেয়ায় আগে থেকে গ্রেফতার থাকা স্বামী আরিফের সাথে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। যার কারণে আরিফ চৌধুরীকে দ্বিতীয়বার রিমান্ডে এনে দু’জনকে মুখোমুখি ও পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে সাবরিনার তিন দিনের রিমান্ড শেষ হলে গত শুক্রবার তার রিমান্ডের সময় বৃদ্ধি করার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আরো দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।