অহঙ্কারী আদ জাতির পরিণতি
অহঙ্কারী আদ জাতির পরিণতি - প্রতীকী ছবি
আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আ: থেকে শেষনবী সা: পর্যন্ত বহু শক্তিশালী জাতি পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। যেমন- হজরত নুহ আ:-এর জাতি, ইবরাহিম আ:-এর জাতি, হজরত মুসা আ:-এর জাতি তুব্বা, আদ, সামুদ, আমালেকা প্রমুখ জাতি। হজরত ইউনুস আ:, হজরত লুত আ:, হজরত জাকারিয়া আ:, হজরত দাউদ আ:, হজরত সুলায়মান আ:-এর জাতি এবং হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কুরাইশ জাতি। প্রত্যেক জাতিই নিজের যুগের শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী জাতি বলে দাবি করেছে। তবে সবচেয়ে মারাত্মক ও জঘন্য শব্দ ব্যবহার করেছে আদ জাতি। আল্লাহ বলেন, অতঃপর আদ জাতি, তারা পৃথিবীতে অযথা অহঙ্কার করেছে এবং বলেছে, আমাদের চেয়ে শক্তিধর কে আছে? তারা কি লক্ষ্য করেনি যে আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর? বস্তুত তারা আমার নিদর্শনাবলি অস্বীকার করেছে (সূরা হামিম সিজদা-১৫)।
আদ জাতির পরিচয় : ‘আদ’ জাতি হজরত নূহ আ:-এর পুত্র সামের বংশধর। সামের পঞ্চম পুরুষদের একজনের নাম ছিল ‘আদ’। তার নামেই এ বংশের নাম হয়েছে ‘আদ’ বংশ। কুরআন মাজিদের সূরা আন নজমে ‘আদে উলা’ এবং সূরা আল-ফজরে ‘ইরামাযাতিল ইমাদ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আদ সম্প্রদায়কে ‘ইরাম’ও বলা হয়। তাছাড়া প্রথম আদের বিপরীতে দ্বিতীয় আদও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ কথা হলোÑ আদের দাদার নাম ইরাম। তার এক ছেলে আওসের বংশধররাই আদ। তাদের বলা হয় ‘প্রথম আদ’। অপর ছেলে জাসুর ছেলে হলো সামুদ। তার বংশকে দ্বিতীয় আদ বলা হয়। সারকথা হলো- আদ ও সামুদ উভয়ই ইরামের দু’টি শাখা। এক শাখাকে ‘প্রথম আদ’, আর দ্বিতীয় শাখাকে ‘দ্বিতীয় আদ’ বলা হয়। কোনো কোনো তাফসিরবিদ বলেন, আদ সম্প্রদায়ের ওপর যখন আজাব নাজিল হয়, তখন তাদের একটি প্রতিনিধি দল মক্কা গমন করেছিল। ফলে তারা আজাব থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। তাদের বলা হয় দ্বিতীয় আদ। (বয়ানুল কুরআন) আদ গোত্রের তেরটি পরিবার ছিল। আম্মান থেকে শুরু করে হাযরা মওত ও ইয়ামেন পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল। তাদের খেত-খামারগুলো অত্যন্ত সজীব ও শস্য শ্যামল ছিল। সব ধরনের বাগ-বাগিচা ছিল তাদের। তারা দৈহিক গঠন ও শক্তি সাহসে ছিল অন্য সব জাতি থেকে স্বতন্ত্র। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেছেন, এমন দীর্ঘকায় ও শক্তিশালী জাতি ইতোপূর্বে পৃথিবীতে সৃজিত হয়নি। (সূরা আল ফজর-৮)। হজরত ইবন আব্বাস রা: ও মুকাতিল র: থেকে একটি (ইসরাইলি) বর্ণনায় রয়েছে, তাদের উচ্চতা ছিল ১৮ ফুট (১২ হাত)। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ আরো বলেন, তিনি তাদের দেহের বিস্তৃতি করেছেন অধিক। (সূরা আরাফ-৬৯)
তাদের নবী : আল্লাহ তায়ালা ‘আদ’ জাতির কাছে হজরত হুদ আ:-কে নবী করে প্রেরণ করেন। আল্লাহ বলেন, আর আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি, তাদের ভাই হুদকে। (সূরা আ’রাফ : ৬৫) হজরত হুদ আ: হজরত নূহ আ:-এর ছেলে সামের বংশের পঞ্চম পুরুষ। আদ সম্প্রদায় এবং হুদ আ:-এর বংশতালিকা চতুর্থ পুরুষে সাম পর্যন্ত পৌঁছে এক হয়ে যায়। এ হিসেবে হুদ আ: তাদের বংশগত ভাই।
দাওয়াত : আদ জাতি ছিল মূর্তিপুজক। তা ছাড়া তারা আরো নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। হজরত হুদ আ: তাদের মূর্তিপূজা ছেড়ে একত্ববাদের অনুসরণ করতে এবং সর্বপ্রকার অত্যাচার উৎপীড়ন বর্জন করে ন্যায় ও সুবিচারের পথ ধরতে আদেশ করেন। কিন্তু তারা নিজেদের ধনৈশ্বর্যের মোহে মত্ত হয়ে তাঁর আদেশ অমান্য করে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি আজাব নাজিল করেন। বর্তমানে হাযরামওতে হজরত হুদ আ:-এর কবর রয়েছে।
আদ জাতির পরিণতি : নবীর কথা অমান্য করে পাপাচারে লিপ্ত থাকার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। তাদের প্রতি প্রথম আজাব ছিল অনাবৃষ্টি। তিন বছর পর্যন্ত তাদের এলাকায় বৃষ্টি বন্ধ ছিল। এতে তাদের ফসল জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ফলে দেশে অভাব দেখা দেয়। তারপরও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেনি। অতঃপর আট দিন সাত রাত তাদের এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়। এতে তাদের বাড়ি-ঘর, বাগ-বাগিচা, জীব-জন্তু সব ধ্বংস হয়ে যায়। তারা নিজেরাও শূন্যে উড়তে থাকে। এতে তারা মরে উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সেরা শক্তিধর আদ জাতিকে এভাবে ধ্বংস করেন। আল্লাহ তায়ালা হজরত হুদ আ: ও তাঁর অনুসারী মুমিনদেরকে এ গজব থেকে রক্ষা করেন। বর্তমানে আদ জাতির এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী