ত্রিপোলি শত শত তুর্কি কনভয়

মো: বজলুর রশীদ | Jul 18, 2020 06:20 am
তুর্কি ট্যাঙ্ক

তুর্কি ট্যাঙ্ক - ছবি : সংগৃহীত

 

তুরস্কের সেনাবাহিনীর শত শত কনভয় এখন ত্রিপোলিতে রয়েছে। হাফতারের গতিরোধ করার জন্য লিবিয়া সরকার এতদিন তুরস্কের সহায়তার জন্য বসে ছিল। বর্ম ধ্বংস করার উপযোগী মিসাইল সেনা কনভয়ের আগেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমরা দেখেছি মাত্র সাত দিনের মধ্যে সিরিয়ায় তুর্কি বাহিনী যুদ্ধের গতিবিধি বদলে দিয়েছিল, যা বহু দিন ধরে চলছিল। তুর্কিদের আগমনে লিবিয়াতেও যুদ্ধের গতি ফিরে গেল। বিরোধ শেষ হলেই তুরস্ক জ্বালানি ও নির্মাণ সংক্রান্ত নতুন চুক্তি নিয়ে লিবিয়ার সরকারের প্রতি সহযোগিতা বাড়িয়ে তুলবে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এ কথা বলেছেন। যুদ্ধ শেষ হলে তুরস্ক অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহায়তা করবে যেমন রাস্তা, সেতু, হাসপাতাল, হোটেল, আবাসন ইত্যাদি। তুরস্ক বারবার হাফতারের সমর্থক রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরকে তাদের সমর্থন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছে। এরদোগান বলেছেন, ‘হাফতারের সময় শেষ।’

লিবিয়ার সরকার হাফতারের কাছে থেকে একের পর এক জায়গা দখল করে নিয়েছে। আল ওয়াতিয়া বেস যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ১৯৪০ সালে নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। তার দখল নেয় তুর্কি সেনারা ভলকেনো অপারেশন চালিয়ে। এখন অবস্থা এই পর্যায়ে যে রাশিয়া, আমিরাত, সৌদি আরব ও মিসর ছাড়াও ফ্রান্স, গ্রিস এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও যদি লিবিয়ার ময়দানে নামে তারাও পরাজয়বরণ করবে। সঠিক সময়ে তুর্কি সামরিক বাহিনী লিবিয়ায় চলে আসে এবং যুদ্ধ কৌশল নির্ণয় করে। হাফতার ও মিসরের হাতে রাশিয়ার পানশির এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেয়া সত্ত্বেও কোনো সফলতা আসেনি। তুরস্কের ড্রোন অনবরত আক্রমণ চালিয়েছে। রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা আক্ষেপ করছেন এই বলে যে, আরবিতে লেখা নির্দেশনা সত্ত্বেও কিভাবে এই পুরো সিস্টেম অকার্যকর হলো তা বোধগম্য নয়। লিবিয়ার বৈধ সরকার ২৫ মার্চ পিস স্ট্রম অপারেশন শুরু করেছিল, তুর্কিদের আগমনে মাত্র ২০ দিনে যুদ্ধের পরিস্থিতি উল্টে যায়, হাফতারকে পিছু হটতে হয়।
মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি হুঙ্কার ছেড়ে বলেন, তুর্কিদের মদদপুষ্ট লিবিয়ার সরকার বাহিনী সির্তে প্রবেশ করলে মিসরের সেনাবাহিনী যুদ্ধে নামবে। তিনি জানান মিসরের জন্য সির্তে রেড লাইন। লিবিয়ার সরকার বলেছে, তাদের সীমানার ভেতর কিসের রেড লাইন? সিসি বলেন, লিবিয়ার জনগণ (হাফতারের সমর্থক) যদি চায় মিসর যুদ্ধে নামুক তবে তাদের সহায়তায় মিসর যুদ্ধে নামবে। লিবিয়ার সরকার বলেছে, তেমনটি হলে সার্বভৌমত্বের আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তুরস্ক বলেছে, যুদ্ধবিরতির জন্য আল জুফরা ও সির্তে থেকে হাফতার বাহিনী ও সমর্থক গোষ্ঠীকে সরে যেতে হবে। সির্তে রাজধানী থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত শহর। যুদ্ধে বেগতিক অবস্থা দেখে সিসি অনেক আগে একবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু লিবিয়ার জিএনএ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।

গাদ্দাফি হত্যার পর লিবিয়া জুলুমবাজির চারণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। উপজাতি মিলিশিয়া, জিহাদি, ভাড়াটে সেন্যদের খুদে রণক্ষেত্র পুরো লিবিয়া। মুসলিম ব্রাদারহুডও রয়েছে প্রচুর। মূলত এদেরই ভয় বেশি সিসি সরকারের। মিসরে দমন পীড়নের কারণে দেশ ছেড়ে অনেকে লিবিয়ায় আশ্রয় নেয়। সিসি অভিযোগ করে জানায়, বিদেশী শক্তি লিবিয়ার চরমপন্থী ভাড়াটে যোদ্ধাদের সহায়তা দিচ্ছে। সিসির লিবিয়া আক্রমণের আপাতত দু’টি উদ্দেশ্য, লিবিয়াকে পূর্ব-পশ্চিম দুই ভাগে ভাগ করে ন্যূনপক্ষে হাফতারকে পূর্ব দিকে বসানো এবং ত্রিপোলি আক্রমণ করে ব্রাদারহুড কর্মীদের খুঁজে বের করা। সিসি আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে প্রচুর আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন, তারাও চায় না লিবিয়ায় ব্রাদারহুড বা ব্রাদারহুড সমর্থিত কোনো সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।

মিসর এখন তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করার মতো অবস্থানে নেই। সির্তে গাদ্দাফির জন্মস্থান, কৌশলগত ও অনেক তেলকূপে ভরা। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পরপর সিসি বড় সামরিক হার্ডওয়ার যেখানে ১৮টি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আবরামস ব্যাটাল ট্যাংক ও ওএমআই-২৫ হলিকপ্টার গানশিপ রয়েছে সেসব প্রস্তুত রেখেছেন। সেনাবাহিনী লিবিয়া সীমান্তে এখন অবস্থান করছে। সম্প্রতি ‘কায়রো ডিকলারেশনে’ লিবিয়া থেকে সব বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারেরও প্রস্তাব করেছেন। তিনি তুর্কি সেনাদের লক্ষ্য করেই ঘোষণা দিয়েছেন। প্রস্তাবে মিলিশিয়াদের ভেঙে দিয়ে অস্ত্র সমর্পণের কথা বলা হয়েছে। সিসির মনে রাখা দরকার যে, লিবিয়ার মিলিশিয়ারা, আইএস বাহিনী ও ব্রাদারহুড কেউ তার কথা শুনবে না। ডিকটেটরদের এটাই ভুল যে, তারা মনে করেন আদেশ দিলেই সব হয়ে যায়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us