ইরানকে চীনমুখী করেছে আমেরিকা?
ট্রাম্প ও রুহানি - ছবি : সংগৃহীত
২৫ বছরের জন্য কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে ইরান আর চীন। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এই অংশীদারিত্বের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সামরিক সহযোগিতা এবং সম্ভবত চীনা সামরিক ঘাঁটি থাকবে।
চীন ও ইরান চুপচাপ একটি ব্যাপক সামরিক ও বাণিজ্য অংশীদারিত্বের খসড়া করেছে বলে বলা হচ্ছে। এই চুক্তি আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ইরানের জ্বালানি ও অবকাঠামোর মতো মূল খাতগুলোতে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা বিনিয়োগের পথ তৈরি করবে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, এই চুক্তি ইরানের চীনা সামরিক ঘাঁটিগুলোর জন্যও এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। চুক্তির খসড়ার যে ১৮ পাতা ফাঁস হয়েছে, সেটার তথ্যানুযায়ী তেহরান আর বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা এই চুক্তির খসড়াটি চূড়ান্ত করেছেন। এর আওতায় সহযোগিতার মধ্যে থাকবে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন সুবিধাগুলোর উন্নয়ন, বন্দর, শোধনাগার এবং অন্যান্য স্থাপনার আধুনিকীকরণ। এ সময়টাতে চীনে তেল আর গ্যাসও সরবরাহ করবে ইরান।
২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে এসেছেন, যা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসার সাথে সাথে ইরানের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাতে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন তেহরানের হতাশা দেশটিকে চীনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ইরান ও চীন উভয়ই এ চুক্তিটিকে তাদের নিজস্ব স্বার্থকে সম্প্রসারণের চেয়েও আমেরিকার মোকাবেলায় কৌশলগত অংশীদারিত্ব হিসেবে দেখছে। বেইজিংয়ের চীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আলি গলিজাদেহ বলেছেন, এটি ইরানের পক্ষে সর্বপ্রথম মিত্র হিসেবে একটি বিশ্বশক্তিকে পাওয়ার জন্য আগ্রহের সুনির্দিষ্ট প্রকাশ। এত দিন অবধি ইরান বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য ইউরোপীয় সহযোগিতা চাইত। এখন তেহরান ইউরোপের ব্যাপারে ক্রমেই হতাশ হয়ে উঠেছে বলে জানা যাচ্ছে।
পাত্তা দেয়া হচ্ছে না মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে?
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেছেন যে, আমেরিকা ইরানকে সহায়তা করে এমন চীনা সংস্থাগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করবে। এর পরও ইরানের সাথে চুক্তির খসড়া হওয়ার অর্থ হলো চীন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে অস্বীকার করার মতো অবস্থানকে অনিবার্য বলেই ধরে নিয়েছে এবং মনে করছে আমেরিকান ব্যবস্থা প্রতিরোধ করার পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, কয়েক দশক ধরে মার্কিন বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিধানে আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে এ চুক্তিটি এখন চীনকে এ অঞ্চলে একটি পা রাখার ব্যবস্থা করতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, চীন যখন বিভিন্ন দেশে কৌশলগত বন্দর উন্নয়ন করে তখন সম্ভাবনা থাকে যে এটি তারা একপর্যায়ে সামরিকীকরণ করতে পারে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় চীন ইরানে বেশ কয়েকটি বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে, যার মধ্যে একটি হলো হরমুজ উপসাগরের ঠিক বাইরে পার্ক উপসাগরের প্রবেশপথ জাস্কে। বিশ্বজুড়ে ৯টি মূল মেরিটাইম চোকপয়েন্টগুলোর মধ্যে হরমুজ উপসাগর রয়েছে। এসব চোকপয়েন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের মতে, বিশ্বজুড়ে মার্কিন কৌশলগত আধিপত্যের এক একটি চিহ্ন।
এখন জাস্কের একটি চীনা বন্দর চীনাদেরকে পানিতে একটি কৌশলগত সুবিধা সৃষ্টি করে দেবে। এই এলাকা দিয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ তেল পরিবহন হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ উন্নয়নটিকে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত বিবেচনার সাথে নেয়ার কথা। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার পঞ্চম নৌবহরটি এর অদূরে উপসাগরীয় অঞ্চলের বাহরাইনে অবস্থিত।