নভেম্বরে নির্বাচন, সু চির সামনে কঠিন পরীক্ষা
সু চি - ছবি : সংগৃহীত
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ৮ নভেম্বরের পার্লামেন্টারি নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের সর্বোচ্চ নেতা ও স্টেট কাউন্সিলর আং সান সু চি ক্ষমতায় ফিরে আসবেন বলেই মনে হচ্ছে, অবশ্য তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হ্রাস পেতে পারে।
এবারের ভোট কোভিড নির্বাচন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মহামারিটি নিশ্চিতভাবেই আং সান সু চি ও তার দলের জন্য ভালোই কাজ করেছে। মহামারিটি এই ভাষ্যই জোরদার করেছে যে সু চিই দেশের একমাত্র ত্রাতা এবং তিনি ছাড়া আর কেউ মিয়ানমার ও তার জনগণকে রক্ষা করতে পারবে না।
‘নির্বাচনের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে কোভিড,’ বলেছেন নিয়ানথা মাও লিন। ইয়াঙ্গুনভিত্তিক নিরপেক্ষ এই পরামর্শক বলেন, সু চির ফেসবুক ব্যবহার বিপুল ফলপ্রসূ হয়েছে। কোভিডের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে ফেসবুকই তার হয়ে কাজ করছে।
সারা দেশে তিনি আবেগপূর্ণভাবে ‘মারা সু’ হিসেবে পরিচিত । তিনি ‘জাতির মা’ হিসেবে তার এই পরিচিতি তার নেতৃত্ব ও ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্যবহার করছেন। মার্চে মিয়ানমারে করোনাভাইরাস আত্মপ্রকাশ করার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে সু চি দৃঢ় নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে পরবর্তী সময়ে তিনি কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন।
তার ফেসবুক পোস্টগুলো, তার বক্তৃতা তার আলোচনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার ও তার কমান্ড প্রদর্শন করেছে। এটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে, দ্বিধাগ্রস্ত করে ফেলেছে। এমনকি সামিরক বাহিনীকে পর্যন্ত পাশে সরিয়ে ফেলেছে, যদিও তারা ক্ষমতা কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লিন ব্যাংকক পোস্টকে বলেন, সামাজিক মাধ্যমে তার আগমন ভালো নেতৃত্ব, ভালো গণনেতৃত্ব। কাজটি আরো কয়েক বছর আগেই করা উচিত ছিল। এটি বেশ কার্যকর হচ্ছে। আর নভেম্বরে জনগণ এর প্রতি সাড়া দিতে যাচ্ছে।
গণতন্ত্রের ভবিষ্যত
অবশ্য নির্বাচন দেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য মানদণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হওয়া উচিত। সামরিক নেতৃত্ব পদত্যাগ করার পর এই প্রথম দেশটিতে গণতান্ত্রিক ভোট হতে যাচ্ছে।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সত্যিকারের আধুনিকতা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পথে দেশটি কিভাবে যাচ্ছে, এই নির্বাচন তারও একটি লিটমাস টেস্ট। এনএলডির কর্মসম্পাদন দক্ষতা ঘনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা করা হবে। আগামী ৫ বছরের জন্য সুশাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় প্রার্থী নির্বাচন ও নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এনএলডি সদস্য এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ও যুব নেতা আলেক্স আং খান্ত বলেন, লোকজন খুব দ্রুততার সাথে বিশ্লেষণ ও বিতর্ক শিখতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এনএলডি ২০১৫ সালের মতোই জয়ী হতে যাচ্ছে, এমন ধারণা এটা স্বীকার করতে ব্যর্থ হচ্ছে যে ২০২০ সাল কিন্তু ২০১৫ নয়। বর্তমান সময় ২০১৫ সাল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ছিল আসলে ২০১৯ সালে,এমনকি এর আগেও ছিল। তখন মনে হয়েছিল, লোকজন সত্যিই রাজনীতি বোঝে। প্রার্থী, নীতি, প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি নিয়ে যেসব বিতর্ক হয়েছিল, তাতে মনে হচ্ছিল, লোকজন প্রস্তুত নির্বাচনের জন্য। ২০১৫ সালে এসবের দরকার ছিল না। কারণ তখন আমরা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এনএলডিকে ভোট দিতে যাচ্ছিলাম। এখন নানা দল আছে। গত ৫ বছরের অভিজ্ঞতা মূল্যায়নের বিষয় আছে।
এনএলডি ইতোমধ্যেই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে, বর্তমান এমপিদের পারফরমেন্স যাচাই করা হচ্ছে।
নতুন প্রার্থীর ওপর গুরুত্বারোপ
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন প্রার্থীদের সামনে আনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হান্থার মিয়ন্ত।
এনএলডির আরেক সিনিয়র দস্য পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের দরকার আরো মেধাবী এমপি। তবে দলের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন যে তারা সংখ্যালঘু, নারী ও তরুণদের গুরুত্ব দিচ্ছেন।
চলতি মাসের প্রথম দিকেই এনএলডির হাজারের বেশি প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ ও আঞ্চলিক ও রাজ্য পরিষদের জন্য।
বর্তমান এমপিদের ৬০ ভাগই আবার নির্বাচন করতে চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবাইকে টিকেট দেয়া হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।
উন্নয়ন ইস্যু
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। আগামী মাসে ঘোষিতব্য ইস্তেহারে কোভিড-পরবর্তী অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, জীবিকা, অবকাঠামো, রাস্তা, জ্বালানি নির্ভরতা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে স্টেট কাউন্সিলের সাথে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।
জয় নিশ্চিত বিবেচনা করা
গত সপ্তাহে এনএলডি মুখপাত্র মনিয়া আং শিন আনন্দিতভাবে সাংবাদিকদের জানান, আমরা ২০১৫ সালে বিপুল বিজয় প্রত্যাশা করেছিলাম। চলতি নভেম্বরেও এনএলডি আরেকটি বিজয়ের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তবে কোনো কিছুই নিশ্চিত বলে ধরে নেয়া যায় না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ভোটারদের ভোট দিতে আসতে নিরুৎসাহিত করবে। কারণ তারা মনে করবে, তারা ভোট না দিলেও এনএলডি জয়ী হয়ে যাবে।
এবার এনএলডি সবচেয়ে বড় যে বিপদের মুখে পড়েছে তা হলো ভোটাদের উদাসিনতা বা অনীহা।
বর্তমান এনএলডি এমপি বো বো বো বলেন, আমাদের অবশ্যই সমর্থকদের বের করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, কম ভোট পড়া হবে এনএলডির জন্য অসুবিধাজনক। কারণ ২৫ ভাগ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য নির্ধারিত হওয়ায় পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে হবে মাত্র ৭৫ ভাগ আসনে। ফলে এনএলডিকে ৭০ ভাগ আসন পেতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ও নিজেদের শক্তিতে সরকার গঠনের জন্য।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর