ভারতের সাথে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কে টানাপোড়েন

মুনজা মুশতাক | Jul 16, 2020 08:18 am
ভারতের সাথে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কে টানাপোড়েন

ভারতের সাথে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কে টানাপোড়েন - ছবি : সংগৃহীত

 

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা আগের সিরিসেনা সরকার ও দিল্লির মধ্যে সই হওয়া কয়েক মিলিয়ন ডলারর বন্দর চুক্তি তার সরকার পুনর্বিবেচনা করবে বলে ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিবেশী ভারতের সাথে শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী সম্পর্ক পরীক্ষার মুখে পড়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, রাজাপাকসার এ পদক্ষেপটি চীনা ভূরাজনৈতিক প্রভাব প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াডের মঞ্জুরি ও অন্যান্য তহবিল থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার প্রয়াস। শ্রীলঙ্কা সরকার সম্প্রতি জাপানের তহবিলপুষ্ট লাইন রেলওয়ে প্রকল্প ও যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮০ মিলিয়ন ডলারের মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন স্থগিত করেছে।
কলম্বো বন্দরের শ্রমিকরা দাবি করছে, সরকার যেন চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। বন্দরে নতুন ইস্ট কন্টেইনার টার্মিনাল উন্নয়নের কাজ পেয়েছিল ভারত ও জাপান। বন্দর শ্রমিকদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল যে প্রকল্পটির মালিকানা থাকবে সরকারি প্রতিষ্ঠান শ্রীলঙ্কা পোর্ট অথোরিটির হাতে।

ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে বন্দরের মালিকানা ভারতের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসা, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্টের বড় ভাই, বলেছেন যে প্রকল্পটির ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো চুক্ত হয়নি। অবশ্য আগের সরকার ভারতের সাথে একটি সহযোগিতা স্মাক সই করেছিল। ২০১৯ সালের মে মাসের ওই চুক্তি অনুযায়ী, বন্দরটির মালিকানার ৫১ ভাগ থাকতে শ্রীলঙ্কার হাতে, বাকিটা থাকবে ভারত ও জাপানের কাছে। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় হবে ৫০০ মিলিয়ন থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলার।

কলম্বোতে ভারতীয় হাই কমিশনের এক প্রতিনিধি বলেন, শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক কার্গোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ভারতের। বন্দরটি উন্নয়নে ভারত, জাপান ও শ্রীলঙ্কার সমান স্বার্থ রয়েছে।
তবে পোর্টস, কমার্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সচিব শ্যামল সুমানরত্না জোর দিয়ে বলেন যে ভারতের স্বার্থ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি নিয়ে আমরা ভারতের কাছ থেকে প্রবল চাপের কথা শুনেছি। তবে এটি ভারতের প্রদেশ নয়। আমরা স্বাধীন জাতি, আমরা তাদের সুরে নাচব না। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবাদের পর প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।

প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার রাজনৈতিক দলের অনুগত এই ইউনিয়নের নেতা হিসেবে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে প্রকল্পটি নিয়ে অগ্রসর হলে আমরা সরকারের বিরোধিতা করব। তিনি বলেন, বন্দরটির ১০০ ভাগ মালিকানা থাকা উচিত শ্রীলঙ্কার।
ইউনিয়নের দাবির মুখে রাজাপাকসা গত সপ্তাহে বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন। তারা ৪৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দেবে।
অবশ্য অনেকে ভারতের বন্দর সম্প্রসারণের প্রস্তাবটি ভালোই মনে করছেন। সমুদ্র জাহাজ বিশেষজ্ঞ ও শিপার্স একাডেমি কলম্বোর সিইও রোহন মাসাকোরালা বলেন, আধুনিক সব বন্দরের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অংশীদার থাকে। তিনি বলেন, যারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে, তারা বৈশ্বিক ব্যবসা বোঝে না। তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকল্পটির বিরোধিতা করছে।
কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় চীনের দ্বারস্থ হচ্ছে।

মৈত্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গের নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকারের মন্ত্রী হরিন ফারনান্দো চীনের দিকে ঝোঁকাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন শ্রীলঙ্কাকে চীনা শাসনে ‘বানানা রিপাবলিকে’ পরিণত করছে।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে চীন এখন একচ্ছত্র সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। আর শ্রীলঙ্কা চলে যাচ্ছে চীনা ঋণে। তিনি বলেন, চীনের সাথে অতীতের অনেক চুক্তিতে স্বচ্ছতার অভাব ছিল।

নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us