কী ঘটেছিল সেদিন?
কী ঘটেছিল সেদিন? - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রতারণার অভিযোগ ওঠা রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের নোটিশের জবাব দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেছেন, তিনি তার যুক্তি এবং তথ্যসহ ব্যাখ্যা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, নোটিশের এই জবাবে মন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশে চুক্তিটি করার কথা বলা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় তা যাচাই করে দেখবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলার কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রিজেন্ট হাসপাতাল এবং এর মালিক মো: সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ যখন ওঠে, তখন হাসপাতালটির লাইসেন্স না থাকার পরও এর সাথে সরকারের চুক্তি করার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এমন চুক্তি করার দায় কার-এই প্রশ্নও অনেকে তোলেন।
নানা প্রশ্ন এবং আলোচনার মুখে এক সংবাদবিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চুক্তিটি করা হয়েছিল।
এই বক্তব্যের ব্যাপারেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছিলো।
এই সময়সীমার শেষদিনে বুধবার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সচিবের কাছে নোটিশের লিখিত জবাব দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
পরে তিনি বিবিসিকে বলেছেন, তিনি তার জবাবে চুক্তি নিয়ে তাদের বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি এবং ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
"যে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তার পক্ষে যুক্তি আমরা তুলে ধরেছি। তবে একটা কথা বলি, যেহেতু পদক্ষেপটাই পরিচালক হাসপাতাল শাখার মাধ্যমে হয়েছে, আমি তাকে বলেছিলাম, তার একটা লিখিত বক্তব্য এবং সাপোর্টিং পেপার যেন তিনি দেন। তিনি যে লিখিত জবাব দিয়েছেন, আমি তার ওপর ভিত্তি করেই জবাব পাঠিয়েছি।"
তিনি আরোবলেছেন, "মন্ত্রণালয় এখন বিবেচনা করবে। তারপর মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেয়-সেটা হবে।"
চিকিৎসায় প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চুক্তির করার যে বক্তব্য অধিদপ্তর দিয়েছে, সেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বোঝানো হয়নি বলে অধ্যাপক আজাদ জানিয়েছেন। এরবাইরে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আব্দুল মান্নান বলেছেন, মহাপরিচালক নোটিশের জবাবে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশের কথা তুলে ধরেছেন।
"উনি বলেছেন যে, এগুলো মৌখিকভাবে পূর্ববর্তী সচিব মহোদয় বলেছেন। আমি বলেছি যে, আপনার ডকুমেন্ট কোথায়? এখন এই জবাবটা সন্তোষজনক কিনা-সেটা একটু পর্যালোচনা করার সময়তো আমাদের দিতে হবে।"
আগের সচিবকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করা হয়েছে কিছুদিন আগেই। এখন তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেই ছবিও ভাইরাল হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে অধিদপ্তরের বক্তব্য নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চুক্তির বিস্তারিত তিনি জানতেন না এবং অধিদপ্তরের ডিজির আমন্ত্রণে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক একজন পরিচালক ডা: বে-নজীর আহমেদ মনে করেন, মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মুখোমুখি অবস্থান করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
"মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর হলো একে অপরের পরিপূরক। সেইখানে যদি কেউ হতোদ্যম হন বা একটু সমস্যা থাকে, তাহলে কিন্তু তার প্রভাবটা পড়বে, আমাদের কাজগুলো আরও শ্লথ হবে। যেটা ইতিমধ্যে কিছুটা হয়েছেও বটে।"
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামলাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যেহেতু হিমশিম খাচ্ছে, তখন অন্য সব আলোচনার প্রেক্ষাপটে সেটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সংক্রামক রোগ কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা: মাহফুজা রিফাত বলেছেন, "এখন যেটা হচ্ছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা সবকিছু ছেড়েই দিয়েছি মানে নিজের নিয়মে চলছে। এখন তাকিয়ে দেখা এবং চিকিৎসার ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোন উপায় নাই।"
তিনি আরও বলেছেন, "সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মিডিয়াতে যে দেখতে পাচ্ছি নতুন কিছু ঘটনা উঠে এসেছে। রিজেন্ট হাসপাতাল বা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় উঠে এসেছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কভিড১৯ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার আসল কাজ থেকে যেন সরে না যাই।"
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের কাজে কোনো স্থবিরতা বা শৈথিল্য আসেনি।
সূত্র : বিবিসি