জাজাকাল্লাহু খাইরান-এর অর্থ কী?

জাজাকাল্লাহু খাইরান-এর অর্থ কী? - ছবি : সংগৃহীত
আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে এমন বহু শব্দ ব্যবহার করি যা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতিনির্ভর নয়। অথচ একটু কেয়ারফুল হলে কথোপকথনেও আমরা প্রশান্তি অনুভব করতে পারি, পরস্পরের জন্য দোয়া করতে পারি এবং সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
এতে না বাড়তি কোনো শ্রম আছে, না খরচ হয়, আর না কথার সৌন্দর্যহানি হয়। এমনই একটি শব্দ হলো জাজাকাল্লাহু খাইরান।
আপনি কি জানেন, জাজাকাল্লাহু খাইরান-এর অর্থ কী?
আপনি যখন কাউকে ভালো, সুন্দর বা তার পছন্দসই কোনো কাজ উপহার দেন তখন হয়তো অনেক মানুষই আপনাকে বলে থাকেন, ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’। আমি-আপনিও বলে থাকি কখনো কখনো। কিন্তু আমরা কি জানি যে এই বাক্যটির অর্থ কী? আসুন, জেনে নেই বাক্যটির অর্থ। এর বেশ সুন্দর কয়েকটি অর্থ রয়েছে।
১। ‘খাইর’ শব্দটি সেসব বিষয়কে বুঝায় যা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাই ‘খাইর’ শব্দের মাধ্যমে সব রকমের কল্যাণ কামনা করা হয়।
২। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ আপনাকে জান্নাত এবং জান্নাতে তাঁর দিদার দ্বারা সৌভাগ্যবান করুন।
৩। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ আপনাকে কাফিরদের স্থান জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন।
৪। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ যেন আপনাকে সিরাতে মুস্তাকিম তথা সরল পথে পরিচালিত করেন।
৫। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ যেন আপনার ওপর কোনো অভিশপ্ত শয়তানকে চাপিয়ে না দেন।
৬। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ যেন আপনার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করেন।
৭। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : শেষ দিবস পর্যন্ত আল্লাহ যেন আপনাকে মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারকারী করেন।
৮। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ যেন আপনাকে রাসূল সা:-এর সুন্নাতের অনুসারী করেন।
৯। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করুন।
১০। ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : আল্লাহ আপনাকে সবরকম কল্যাণ দান করুন।
এর আরো অসংখ্য অর্থ রয়েছে। কেননা ‘খাইর’ আল্লাহর কাছে অগণিত, যা গণনা করা অসম্ভব। তবে আমরা বাক্যটির শাব্দিক অর্থ করি, ‘আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন’ বলে।
ভালো কথার প্রতিউত্তর তো আরেকটি ভালো কথা।আল্লাহ তায়ালা বলেন, সৎ কাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ছাড়া কী হতে পারে?
(সূরা রাহমান : ৬০)
আল্লাহর রাসূল সা: ও সাহাবিগণের আমল এটি। হাদিসের উদ্ধৃতি শুনুন, হজরত উসামা বিন জায়েদ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, কারো প্রতি কৃতজ্ঞতার আচরণ করা হলো তাই সে ব্যক্তি আচরণকারীকে ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ বলল, তাহলে সে তার যথাযোগ্য প্রশংসা করল। (তিরমিজি, নাসায়ী)
হজরত উমর রা: বলেন, তোমাদের কারো যদি জানা থাকত যে, তার অপর ভাইকে ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ বলার মধ্যে তার জন্য কী রয়েছে! তাহলে তোমরা একে অপরের জন্য তা বেশি করে বলতে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)
উসামা ইবনু জাইদ রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা: বলেছেন : কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, (জাজাকাল্লাহু খাইরান) ‘তোমাকে আল্লাহ্ তায়ালা কল্যাণকর প্রতিদান দিন’ তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল। (জামে’আত-তিরমিজি)
হাদিসগুলোর ভাষা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, কেউ যখন কারো প্রতি সদাচরণ করে তখন জবাবে আমরা ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ বলি তখন এটি তার জন্য একটি প্রশংসামূলক বাক্য এবং যিনি আপনার পক্ষে অনুগ্রহ করেছিলেন তিনিও এটা শুনে আনন্দিত হবেন।
আসুন ‘থ্যাংকস’, ‘থ্যাংক ইউ’ ইত্যাদির পরিবর্তে আমরা পরস্পরে ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’-এর বিনিময় করি। আশা করি, পেছন থেকে অন্যের জন্য দোয়া করার কারণে ফেরেশতারাও সমানভাবে আমাদের জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন এই বলে যে, ‘তোমার জন্যও একইভাবে কল্যাণ কাম্য।’
লেখক : সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বংলাদেশ লিমিটেড