চীনকে ঘায়েলে জাপান-অস্ট্রেলিয়ার জোট

আলেক্স গাতোপলাস | Jul 14, 2020 04:42 pm
চীনকে ঘায়েলে জাপান-অস্ট্রেলিয়ার জোট

চীনকে ঘায়েলে জাপান-অস্ট্রেলিয়ার জোট - ছবি : সংগৃহীত

 

কয়েক দিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র অস্ট্রেলিয়া ও জাপান তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি ও আরো আগ্রাসী সামরিক নীতি গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছে। এশিয়া-প্যাসিফিকে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই দুই দেশ চীনের দ্রুত সামরিক সম্প্রসারণ থেকে নিজেদের রক্ষার কথা চিন্তা করে এই ঘোষণা দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া জুনের শেষ দিকে ঘোষণা করেছে যে আগামী দশকে তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় ৪০ ভাগ বাড়াবে। এতে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন স্পষ্টভাবেই বরেন, কোভিড-১৯-পরবর্তী বিশ্ব অবশ্য হবে অনেক গরিব, অনেক বিপজ্জনক ও অনেক বিশৃঙ্খল। আর এসব কারণেই দেশকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।

দিক পরিবর্তন অস্ট্রেলিয়ার
এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো অস্ট্রেলিয়া এবং এই দুই দেশের সহযোগিতা অস্ট্রেলিয়ার নতুন কৌশলগত চিন্তাধারার মূল বিষয় হিসেবে বিরাজ করছে।
গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, দেশে মার্কিন সৈন্য মোতায়েন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ক্রয় এখনো প্রধান যৌথ ধারণা হয়ে আছে। উভয় দেশেরই এই অঞ্চলের কৌশলগত লক্ষ্য পরস্পরকে ছাড়িযে যায়, বিশেষ করে যখন অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণশীল চীনা আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিরোধের প্রশ্ন যখন আসে।
আবার ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান দোলাচলে থাকা পররাষ্ট্রনীতির ফলে এই অঞ্চলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ মেয়াদি প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তার মিত্ররা সবসময় নার্ভাস থাকছে। দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান ও ভারত সীমান্তে চীনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তায় অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, চীন তার সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের সীমা কমিয়ে আনায় যুদ্ধের শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।

এই বিষয়টি মাথায় রেখে অস্ট্রেলিয়া দৃঢ়তার সাথে তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন করছে, অত্যাধুনিক, সুপার-কোয়েট ফরাসি সাবমেরিনের অর্ডার দিচ্ছে, প্রথম ব্যাচ আমেরিকান স্টিলথ জেট গ্রহণ করছ, আধুনিক রণতরী বাড়াচ্ছে। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই প্রতিরক্ষা তহবিলের একটি বড় অংশ যাবে নৌবাহিনীর পেছনে।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক, স্টিলথি দূরপাল্লার জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে সম্মত হয়। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার হারপুন ক্ষেপণাস্ত্রের তিনগুণ দূরত্বে, ৩৭০ কিলোমিটার দূরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে আঘাত করে সেগুলো ডুবিয়ে দিতে সক্ষমতা অর্জিত হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্র বিমান বা জাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা যায়, শত্রুর রণতরী ফাঁকি দিতে সক্ষম এবং আক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আগেই আক্রান্ত হয়। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনী বড় ধরনের আক্রমণাত্মক শক্তি অর্জন করেছে।

জাপানের গেম-চেঞ্জার
জাপান সবসময়ই সম্ভাব্য আগ্রাসীদের থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে থেকেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপান শান্তিবাদী থাকার যে চেষ্টা করে আসছিল, সাম্প্রতিক সময়ে তার অবসান ঘটছে। এখন তারা প্রথমে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করতে চাচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান হারে উত্তপ্ত হতে থাকা এই অঞ্চলে জাপানের সামরিক বাজেট টানা অষ্টমবারের মতো বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্টিলথি এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান ও আগাম সতর্কতা বিমান কিনছে। জাপান কেবল চীনের উত্থান নয়, উত্তর কোরিয়াকে নিয়েও শঙ্কিত। উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা আবার শুরু করতে থাকায় জাপান এখন শত শত কিলোমিটার দূরের টার্গেটে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করতে চাচ্ছে।

অর্থাৎ যে জাপান ছিল রক্ষণাত্মক অবস্থানে, তারা এখন আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে চাচ্ছেন, লড়াই যাতে জাপানি উপকূল থেকে দূরে হয়। কোনো ক্ষেপণাস্ত্র যদি উড়িয়ে দিতে হয়, তবে সেটা যেন অন্য কোনো দেশে হয়, জাপানে যেন না হয়।
জাপান ইতোমধ্যেই তার প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তি বাড়িয়েছে। এর হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার ইজুমোকে সংস্কার করে স্টিলথি এফ-৩৫বি জেটের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফলে একটি কার্যত বিমানবাহী রণতরীতে পরিণত হবে।

কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে চীন ও উত্তর কোরিয়ার আক্রমণ পাল্লার মধ্যে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি স্থাপন করতে চাচ্ছে। তবে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের কেউই মার্কিন এসব ক্ষেপণাস্ত্র তাদের মাটিতে রাখতে আগ্রহী নয়। তারা চীনা সামরিক সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগে থাকলেও এই অস্ত্র তাদের জন্য নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছে।
চীন দক্ষিণ চীন সাগর ও এর বাইরে তার ঘাঁটি, নৌবাহিনী ও দূরপাল্লার বিমান বাহিনী জোরদার করায় প্রতিবেশীরা নিজেদের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়তে চাচ্ছে। গত জুনে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত একটি নৌ ও লজিস্টিক্যাল সহযোগিতা প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেছে।

জাপানও চাচ্ছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আসিয়ানের অন্যান্য দেশের সাথে তার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে। তার লক্ষ্য এসব দেশের সহযোগিতায় তার পক্ষে চীনকে মোকাবেলা করা আরো সহজ হবে।
ক্রমবর্ধমান হারে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই মহাদেশে অনেক নাজুক ও দুর্বল এই জোট আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে। আমেরিকান সমর্থন হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এই জোট তার প্রতিপক্ষের ওপর আরো কার্যকরভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হবে।

অনেক সমালোচনা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন যে এ ধরনের আক্রমণাত্মক সামরিক অবস্থানের ফলে চীনকে তার আক্রমণাত্মক সক্ষমতা বাড়াতেই উৎসাহিত করবে। চীন তার আগ্রাসী প্রতিবেশীদের প্রতিরোধ করতে তার সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

সূত্র : আল জাজিরা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us