ভারতকে আরো অস্বস্তিতে ফেলছে নেপাল!
মোদি ও ওলি - ছবি : সংগৃহীত
নেপালের পার্লামেন্টারি স্টেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড গুড গভার্নেন্স কমিটি সম্প্রতি দেশের নাগরিকত্ব আইনবিষয়ক সংশোধনী অনুমোদন করেছে। এতে নেপালি নাগরিককে বিয়ে করা বিদেশী নারীকে নেপালের নাগরিকত্ব পেতে সাত বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অনুমোদনের জন্য বিলটি এখন নিম্ন ও উচ্চকক্ষে উপস্থাপন করা হবে।
সম্প্রতি নেপাল প্রতিবেশী ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করার প্রেক্ষাপটে নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনী আনা হলো। নেপালেরর এই কাজকে একতরফা হিসেবে অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে নেপাল।
এখন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে ভারতের সাথে নেপালের সম্পর্ক আরেক দফা অবনতি হতে পারে। এটি নেপালের তেরাই (দক্ষিণ সমভূমি এলাকায়) বসবাসরত লোকজনের মধ্যে মারাত্মক অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। সেখানে আন্তঃসীমান্ত বিয়ে সাধারণ ব্যাপার। আন্তঃসীমান্ত বিয়ের কারণে অনেক ভারতীয় সময়ের পরিক্রমায় নেপালের নাগরিকত্ব পেয়ে যায়। অনেকে আশঙ্কা করছে, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হওয়ার ফলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিরাজমান রুটি-রুজির সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নেপালিদের বিয়ে করার মাধ্যমে ভারতীয়দের নেপালের নাগরিকত্ব অর্জন করা সহজ হবে না। এতে করে তেরাই অঞ্চলের লোকসংখ্যা হ্রাস পেতে পারে।
এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে নেপালের কোনো কোনো অংশে বিক্ষোভ হয়েছে। নেপালি কংগ্রেস ও সমাজবাদী দল, রাষ্ট্রীয় জনতা পাটি নেপাল এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। তারা বলছে, এর ফলে তেরাই অঞ্চলের লোকজনের জীবন-জীবিকায় প্রভাব পড়বে। এই সংশোধনীর ফলে আন্তঃসীমান্ত বিয়েকে নিরুৎসাহিত করবে।
লিপুলেখ হয়ে চীনের সাথে ভারতকে সংযুক্তকারী একটি রাস্তা নির্মাণের পর থেকেই নয়া দিল্লির সাথে কাঠমান্ডুর সম্পর্ক অবনতি ঘটছে। ভারতের ওই রাস্তা নির্মাণের বিরুদ্ধে নেপালে বেশি বিক্ষোভ হয়েছে।
তবে নতুন সংশোধনীর ব্যাপারে নয়া দিল্লি এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
ভারত যদি এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অঘোষিত অবরোধ আরোপ করে বা তার অসন্তুষ্টির ইঙ্গিত দেয়, বা অন্য কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে, তব তা চীনের জন্য নেপালের দরজা আরো খুলে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-নেপাল সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়েছে। নেপাল সীমান্তে ভারতের এর আগের অঘোষিত অবরোধ আরোপের ফলে নেপালে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার জন্য চীনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপালের জলবিদ্যুৎ ও অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে চীন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। ২০১৯ সালে নেপালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের সময় নেপালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দেয় চীন।
ফলে ভারত যদি ২০১৫ সালের মতো আবারো অবরোধ করে, তবে বা তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তবে তা নেপালকে চীনের দিকে আরো ঠেলে দেবে। খুবই সম্ভাবনা আছে, এতে করে নেপালের আনুকূল্য হারাবে ভারত।
দি কুইন্ট