শয়তানের সত্য কথন
শয়তানের সত্য কথন - প্রতীকী ছবি
শয়তান সদা পাপাচার, মন্দ ও অসত্য কাজের সাথে জড়িত। ভালো ও উত্তম কাজ তার থেকে আদৌ প্রকাশ পায় না। মুমিনের ক্ষতি করার কাজেই সে সদা ব্যস্ত। তবে একটি ক্ষেত্রে সে সত্য ও হক কথা বলেছে। আর তা বর্ণনা করেছেন প্রসিদ্ধ সাহাবি ও প্রখ্যাত রাবি হজরত আবু হুরায়রা রা:। তিনি বলেন, একদা মহানবী সা: আমাকে রমজানে আদায়কৃত জাকাতের মাল হেফাজতের দায়িত্বশীল নিয়োগ করেন। রাতে এক আগন্তুক এসে চুরি করে কিছু খাদ্য সামগ্রী (খেজুর) অঞ্জলি ভরে নেয়ার চেষ্টা করে। আমি দেখে তাকে পাকড়াও করে বলি যে, তোমাকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে হাজির করব। সে বলল, আমি একজন দরিদ্র ব্যক্তি, আমার পরিবার-পরিজন রয়েছে এবং আমার খাদ্যের খুবই অভাব। (তাই অপারগ হয়ে চুরি করতে এসেছি। আমাকে ছেড়ে দিন) অতঃপর আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
এরপর যখন সকাল হলো, মহানবী সা: বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার রাতের বন্দি তোমার সাথে কী আচরণ করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তীব্র অভাব ও পরিবার-পরিজনের অসহায়ত্বের কথা ব্যক্ত করেছে, তাই আমার মনে দয়ার উদ্রেক হওয়ায় তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। পুনরায় সে (মালচুরি করতে) আসবে। মহানবী সা:-এর কথা শুনে আমি নিশ্চিত বুঝেছি যে, সে আবার আসবে।
মহানবী সা:-এর কথা শুনে আমি তার প্রতীক্ষায় রইলাম। পরের রজনিতে ঠিকই সে খাদ্যসামগ্রী (খেজুর) অঞ্জলি ভরে নিয়ে চলে যেতে থাকে। অতঃপর আমি তাকে ধরে বলি, তোমাকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে হাজির করব। সে তখন বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি একজন অভাবী মানুষ এবং আমার ওপর পরিবার পরিজনের দায়িত্ব রয়েছে। (তাই চুরি করতে এসেছি) আমি আর আসব না। তার কথা শুনে আমার মধ্যে দয়ার উদ্রেক হয়, তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। সকালে রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে বলেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার বন্দি তোমার সাথে কী আচরণ করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তীব্র অভাব ও পরিবার পরিজনের কথা বলেছে, এতে আমার মধ্যে দয়া এসে গেছে, তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন সে মিথ্যা বলেছে। পুনরায় সে আসবে।
অতঃপর আমি তার তৃতীয়বার আসার প্রতীক্ষায় রইলাম। অতঃপর সে তৃতীয় রাতে এসে অঞ্জলি ভরে খাদ্যসামগ্রী (খেজুর) নিয়ে যেতে দেখে তাকে পাকড়াও করি। অতঃপর বলি, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে হাজির করব। এটি তৃতীয়বারের শেষবার। তুমি প্রত্যেকবারই বলো আসবে না, তারপরও আসো। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কতগুলো বাক্য শিক্ষা দেবো, যার মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন। আমি বললাম এগুলো কী? সে বলল, আপনি যখন বিছানায় ঘুমাতে যাবেন তখন আয়াতুল কুরসি পড়বেন। তাহলে আপনার (হেফাজতের) জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিয়োগ করা হবে। সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না। অতঃপর আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
সকালে মহানবী সা: আমাকে বলেন, তোমার রাতের বন্দী কী ব্যবহার করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা:! সে আমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দিয়েছে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। অতঃপর আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূল সা: বলেন, বাক্যগুলো কী? আমি বললাম, সে আমাকে বলেছে, যখন আপনি শয্যায় যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। সে আরো বলেছে, এর ফলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে (আপনার জন্য) একজন পাহারাদার নিয়োগ করা হবে। সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কছে আসতে পারবে না। সাহাবায়ে কেরাম কল্যাণের প্রতি অধিক লালায়িত ছিলেন। তখন মহানবী সা: বললেন, সে সত্য বলেছে, সাবধান! সে মিথ্যুক। হে আবু হুরায়রা! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে কার সাথে তুমি কথাবার্তা বলেছিলে? আবু হুরায়রা রা: বলেন, না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, সে হলো শয়তান (সহিহ বুখারি হাদিস নং ২৩১১, ফতহুল বারী চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৫৫৮)।
লেখক : প্রধান ফকিহ্, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী