টালমাটাল নেপালের রাজনীতি
অলি ও প্রচণ্ড - ছবি : সংগৃহীত
নেপালি রাজনীতিতে কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা ক্রমশ একটা ধাঁধা হয়ে উঠছে। আপাতত মনে করা হয়, ভারত বিরোধী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি টিকে যাচ্ছেন। তবে এর নেপথ্যে চীনা দূতিয়ালি থাকতে পারে বলেই জল্পনা।
সর্বশেষ ভারতে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাতের প্রায় এক মাসের ব্যবধানে সাবধানে একটা বক্তব্য রেখেছেন। আর তাতেই ভারতের বিভিন্ন মহল ‘বরফ গলা’র আলামত পাচ্ছেন। তবে গত সপ্তাহান্তে বড় ঘটনা ঘটে গেছে নেপালেই।
ইতিহাসে এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার কোনো রাজধানীতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ের একটি টালমাটাল পরিস্থিতিতে ভারতের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থাকা বিদ্রোহী নেতা মি. প্রচণ্ডের সঙ্গে প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ করেছেন। এটা ঘটে গত বৃহস্পতিবার। একই সময়ে নেপালে ভারতের বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস বলেছে, প্রচণ্ড সাফ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে ওলিকে সরিয়ে তাকে বসার সুযোগ দিলেই কেবল দল টিকবে। উত্তের চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, দলের ভাঙ্গন রোধই তাদের মূল লক্ষ্য। কারণ দল ভেঙ্গে গেলে একুল ওকুল সবই যাবে।
নেপালে চীনা রাষ্ট্রদূতের লক্ষ্য তাই উত্তেজনা প্রশমিত করা। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙ্গন ঠেকানো।
বিরাট কৌতূহল
নেপালি ঘটনাবলী এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বিরাট কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে । ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, দুই দেশেরই কোন ফাঁদে পা দেয়া ঠিক হবে না । স্পষ্টতই এই ইঙ্গিত মার্কিনদের দিকে। মনে করা হয়, চীন চাপ কমাতে চাইলে দিল্লি সেটা নাকচ করবে না। আর সেটা নেপালে চীনা নীতি বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হবে।
কে এই অলি
অলি সাধারণ নির্বাচনে ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার জিতে তার সমর্থক পরিধি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নেপাল ১৩ প্রধানমন্ত্রী এপর্যন্ত ২৫টি সরকার উপহার দিয়েছেন। দুই থেকে আড়াই বছরই বেশিরভাগের আয়ু। দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অলি সম্প্রতি দাবি করেছিলেন, জাতীয় সংসদের আস্থা ভোটে তিনি কেবল ৮৮ ভাগ ভোটই লাভ করবেন না। এমনকি এর বাইরে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশ সদস্য তাকেই ভোট দিতে আগ্রহী । কিন্তু শুধু দলীয় বিধিনিষেধের কারণে তারা তাকে ভোট দিতে পারছেন না।
রাজনীতির অলিগলি অলির চেনা। গোড়া থেকেই তার দলের অভ্যন্তরে তার কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার একটা প্রবণতা ছিল। কিন্তু এসব সত্ত্বেও তিনি সবসময়ই নেপালি রাজনীতির জনপ্রিয়তার শীর্ষে আসার চেষ্টা করেছেন। এবং এতকিছুর পরেও সেই ধারাটা হোঁচট খেতে খেতে হলেও এগিয়ে যাচ্ছ।
তার ডাকনাম ধ্রুব। পূর্বাঞ্চলীয় নেপালের ঝাপা এলাকায় তিনি শৈশবে বেড়ে ওঠেন। তিনি মানুষ হয়েছিলেন নানীর কাছে । কারণ স্মল পক্সে তার মা যখন মারা যান, তখন তার বয়স মাত্র ৪। এবং একজন কিশোর হিসেবে ওই অঞ্চলের ‘ঝাপা বিদ্রোহ’ কিংবা কৃষক বিদ্রোহে তিনি আলোচিত হন। সেটা ১৯৬৭ সাল। ভূ–স্বামীদের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল । তার বয়স যখন ১৮ তখনই তিনি নাম লিখিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টিতে এবং তার পরপরই তিনি জীবনে প্রথম গ্রেপ্তার হওয়ার স্বাদ পান। পরবর্তীকালে তাকে দেখা হয়, তিনি একজন ‘উগ্র জাতীয়তাবাদী।’ এর একটা কারণ হয়তো এই যে, একসময় তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে সক্রিয় হন । নেপালি অভিজাত শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। আর তখন থেকেই বলা শুরু হয় যে, তিনি আসলে ভারতীয় নকশাল আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন । এবং তিনি অনেকটা ঘনঘন কারাগারে যাওয়া-আসার উপরেই থেকেছেন। জেলজীবন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের একটা উল্লেখযোগ্য সময়। হিসেব করলে সময়টা ১৪ বছরের বেশি হবে । এবং তার সহযোগীরা বলছেন,তিনি কারাগারে বসে যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, তারই প্রতিফলন ঘটছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দৈনন্দিন কর্মে।
অলিকে জানেন কয়েক দশক ধরে এমন একজন সাংবাদিক তার সম্পর্কে বলেছেন, তিনি যে কারো চেয়ে নিজের উপরই সবথেকে বেশি আস্থা রাখেন। এমনকি কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যদি একা হন, তাহলেও তিনি তার সংকল্পে অবিচল থাকার চেষ্টা করেন ।
তিনি স্বশিক্ষিত। শিক্ষা নিয়েছেন কারাগারে। কখনো কোন শিক্ষাগত ডিগ্রী নেননি। কিন্তু কারাগারে বসে অধ্যায়ন করেই তিনি দর্শন এবং ইতিহাস শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি ইংরেজি লিখতে পারেন না । কিন্তু বলতে পারেন অনর্গল।
তিনি কি ভারতপন্থী?
প্রশ্ন উঠেছে অলি ভারতপন্থী কিনা? একজন ভারতীয় বিশ্লেষক সুভাষিনী হিন্দুতে লিখেছেন, ১৯৮৭ সালে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে গঠন করেছিলেন একটি ফ্রন্ট । আর সেই ফ্রন্টের রাজনীতি পঞ্চায়েত শাসনামলের পতন ঘটিয়েছিল । এর পরেই তিনি নেতৃত্ব দেন সিপিএন– ইউ এম এল রাজনৈতিক জোটের। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন । কারণ ওই সময় তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। এবং মজার বিষয় হলো , তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকতেই ভারতের সঙ্গে মহাকালী পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। অথচ এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে নেপালি রাজনীতিতে ঝড় উঠেছিল । আর সেই ঝড়ে তার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটে ভাঙন ধরে। কারণ তাদের জোটের একটি অংশ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, ভারতের সঙ্গে যে মহাকালী চুক্তিটি করা হলো, সেটি বৈষম্যমূলক। সেটা ভারতের পক্ষেই গেছে । কিন্তু সেই সময় দেখা গেছে, অলি সেই চুক্তির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন।
আর তখন তাকে একজন ভারতপন্থী হিসেবে দেখা হতো। আজকের নেপালি রাজনীতিতে অনেকে চিন্তাই করতে পারবেন না, সেই নেতা নেপালের নতুন সংবিধান প্রণয়ন থেকে চার মাসের অর্থনৈতিক ব্লকেড শেষ করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ পর্যন্ত বনে গেছেন ভারত বিরোধী হিসেবে।
প্রশ্ন হলো করোনাকালের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় নেপালের রাজনীতিতে সর্পিল রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে?
কী ঘটতে যাচ্ছে
অলির সমর্থকদের মতে তিনি সমকালীন রাজনীতির সবথেকে মেধাবী নেতা। বহু বছর ধরে তারা তাকে দেখে এসেছেন। তিনি তার নেতৃত্বের গুণাবলীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চলেছেন । ৬৬ বছর বয়সে যদিও তার নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে তার কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ঘটনাও আছে। ২০০৭ সালে দিল্লির একটি হাসপাতালে তিনি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেছিলেন কিন্তু ভারতীয় ভাষ্যকারগণ মনে করেন, সবথেকে কৌতুহলী স্ববিরোধিতা হলো, তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের জায়গা। আদর্শিকভাবে নিশ্চয়ই তিনি ১৯৭০ দশকের সেই তরুণের ভূমিকায় নিজেকে দেখতে চান না। সেদিক থেকে আগামী ২২ এপ্রিল ( কেউ লিখেছে ১৭ এপ্রিল) তারিখটি নেপালের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদীদের সঙ্গে একীভূত হবে। তৈরি হবে একটি ইউনিট। ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল। সমালোচকরা অবশ্য বলেন, অলি তার কমিউনিস্ট নীতি আদর্শের মধ্যে ধর্ম মিশিয়ে একটা ককটেল তৈরি করেছেন । তাকে সর্বদাই ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে সরবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় । এবং তিনি যখন ওই উপসনালয়গুলোতে কথা বলেন তখন তার কণ্ঠে অবিশ্রান্তভাবে ঝরে পড়ে সংস্কৃতির শ্লোক । যখন তাকে সম্প্রতি ভারতীয় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, তার সামনে এখন চ্যালেঞ্জ কি? অলি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তার উপরে পশুপতিনাথের আশীর্বাদ রয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোনো কিছুকেই পরোয়া করেন না ।
রুটিন প্রক্রিয়া
শুক্রবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নেপালি প্রধানমন্ত্রী কে.পি শর্মা অলি বন্যা এবং করোনা মোকাবেলা দুটোই উল্লেখ করেছেন। মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন । আর সেই সঙ্গে শান্ত কন্ঠে অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, তিনি সার্বভৌমত্ব এবং জাতির আত্মমর্যাদা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ । তিনি বলেছেন রাজনৈতিক বিতর্ক ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে একটা রুটিন প্রক্রিয়া মাত্র । এই বিতর্ক চলবে । উন্নয়নও চলবে । বন্যা এবং করোনো যুদ্ধ একই সাথে চলবে । নেপালি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা অবশ্যই দৃঢ়তার সঙ্গে সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করব । নেপালি সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আমাদের দেশের আত্মমর্যাদা আমরা সংহত করব।
তবে এটা লক্ষণীয় যে নেপালি প্রধানমন্ত্রীর এই খবর পরিবেশন করতে গিয়ে দি হিন্দু এক রিপোর্টে বলেছে, নেপালি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কথাটি আসলো এমন একটা সময়ে, যখন নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী এবং তার চ্যালেঞ্জার মি. প্রচণ্ডের মধ্যকার চাপানউতোরের সম্ভবত আপাতত অবসান ঘটেছে। তবে হিন্দু এই রিপোর্টে বলেছে, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে মতপার্থক্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পৌঁছেছে ।
কারণ বিভিন্ন মহল, যার মধ্যে নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত মিজ হু ইয়াঙ্কি রয়েছেন, তারা হস্তক্ষেপ করছেন।
ভারতীয় টিভি নিষিদ্ধ
প্রধানমন্ত্রী অলির সরকার ঘোষণা করেছেন যে, জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন এবং দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে এমন কোন বিদেশী টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার নেপালে চলতে দেয়া হবে না ।
অবশ্য হিন্দুসহ ভারতের অনেক মিডিয়া বলেছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকা বেসরকারি চ্যানেলগুলো যা প্রচার করেছে, তাতে নেপালের নেতৃত্বকে টার্গেট করা ছিল এবং তা ছিল আক্রমনাত্মক।
অন্যদিকে ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের কথিত নরম সুর আর একই দিনে চীনা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল টাইমসের কয়েকটি শিরোনাম বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
এতে বলা হয়, ভারত মহাসাগরে মালাবার নৌমহড়ার প্রস্তুতি চলছে। এবারে মালাবার ড্রিলে অস্ট্রেলিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে নতুন দিল্লির স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। মালাবার ড্রিল ভারত প্রথম শুরু করেছিল ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে । তারপর ২০১৫ সালে যুক্ত হয় জাপান । আর এবার তারা যুক্ত করতে চাইছে অস্ট্রেলিয়াকে ।
গত ১১ জুলাই ভারতে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত যখন ঐক্যের কথা বলছেন, ঠিক সেদিন গ্লোবাল টাইমসে চীনা নিরাপত্তা গবেষক লিখেছেন, ভারতের উচিত হবে না আঞ্চলিক জোট আর সি ই পি তে যোগ না দিতে চীনের আচরণকে দায়ী করা। করোনাকাল এবং চীনের সঙ্গে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার পরে দিল্লি বলেছিল, সে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের (আর সিইপির) বৈঠকে যোগ দেবে না। এখন গ্লোবাল টাইমস বলছে, যদিও চীন এবং ভারতীয় সৈন্যরা সীমান্ত থেকে তারা তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছে কিন্তু মনে করা হচ্ছে, ভারত তার চীন বিরোধী কৌশল থামাবে না । বরং অধিকতর জোর দিয়ে বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাবে।
গত জুনে আরসিইপির ১০ম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক বসার কথা ছিল । এই আঞ্চলিক জোটে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এর সদস্যপদ গ্রহণ করুক, সেটাই চীনের কূটনীতি । কিন্তু ভারত তখন তাতে না করেছিল । গ্লোবাল টাইমস বলছে, এখনো আবার তারা ‘না’ করছে । এ বিষয়টিকে চীন বলছে, আরসিইপিতে যোগদানের দরোজা ভারতের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।
২০১৯ সালের নভেম্বরে একটি আরসিইপি সামিট থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন । ১১জুলাই গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, ভারতীয় গণমাধ্যম এই জোট গঠনকে আঞ্চলিক চীনা কর্তৃত্ববাদ এবং চীনা দাদাগিরি বলে সমালোচনা করতে অভ্যস্ত। এটা আসলে ভারতীয় ভাবাবেগের একটা প্রদর্শনী।
ফুদান ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজে কর্মরত ওই চীনা গবেষক লিখেছেন, জুনের সীমান্ত সংঘাতের পরে ভারতীয় কূটনীতি ক্রোধের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সম্পর্কের বিভিন্ন স্তরে তার আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
ওই চীনা গবেষক মন্তব্য করেন, ভারত যদি তার এমন অযৌক্তিক আচরণ অব্যাহত রাখে, এর ফলে তারা শুধু আঞ্চলিক স্বার্থকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। তার নিজের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে ।
গ্লোবাল টাইমস ভাষ্য বলছে, চীন ভারতের শত্রু নয়। চীন ভারতের শত্রু হবে না । ভারতের প্রকৃত শত্রু ভারত নিজেই।
ওই ভাষ্যকার আরো বলেছেন, ভারত যখনই তার শক্তিশালী প্রতিবেশীর কাছ থেকে বড় রকমের বাধা পায় তখন যৌক্তিক আচরণ করার চেয়ে তার দিক থেকে জাতীয়তাবাদ চাঙ্গা করা হয়। এবং চীনকে দায়ী করার আবেগ তীব্রভাবে চোখে পড়ে।
মনে করা হয়, চীন ও ভারতের মধ্যে এধরণের টানাপোড়েন চলতে থাকবে। এমনটা অতীতে বহু ঘটেছে। কিন্তু ভারতে চীনা বিনিয়োগ বড়মাপে বেড়েছে।
তবে কথা হলো, নেপালে তথা এই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনা ফ্যাক্টর আর কোনো লুকোছাপার বিষয় নয়। নেপাল থেকে এর নবসূচনা।
নেপালি ক্ষমতার লড়াইয়ে অলি না প্রচন্ড, সেই প্রশ্ন অমীমাংসিতই থাকছে ।
হিন্দুস্তান টাইমস'র ১০ জুলাইের প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির স্থায়ী কমিটির বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। অলির স্বস্তি বেড়েছে। কাঠমান্ডুতে ভারতের বিরুদ্ধে যখন অস্ত্রের নিশানা চলছে, তখন সেখানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত মিজ ইয়াঙ্কির বিরুদ্ধে কেউ একটি শব্দও উচ্চারণ করছে না । দল-মত নির্বিশেষে এই জাতিরাষ্ট্রের সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চীনা রাষ্ট্রদূতকে বরণ করে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, অলির নিজদলীয় প্রতিদ্বন্দী প্রচণ্ড ক্ষমতার ভাগ চান। সমঝোতা ছিল আড়াই বছর করে ভাগাভাগি হবে। সেটা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু অলি ক্ষমতা ছাড়ছেন না। প্রচণ্ড তাই উতলা।
চীনা রাষ্ট্রদূতকে প্রচণ্ড বলেছেন, দলকে টেকাতে অলিকে যেতে হবে। তবে মি. প্রচণ্ড প্রকাশ্যে বলছেন, মি. অলির ভারত বিরোধীতা রাজনৈতিকভাবে ভুল, কূটনৈতিকভাবে অযথার্থ। তাই তার পদত্যাগ করা উচিত।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর