১৯৫৯-৬০ সালের সীমানা ভারতকে বাধ্য করছে চীন!
লাদাখ - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় আর্মির সাবেক এক অফিসার পারভীন সোয়ানি, এখনকার সময়ে তিনি একজন সামরিক অ্যানালিস্ট, ‘ফোর্স’ নামে এক ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও বই লেখক। এ সময় তার প্রতি একাডেমিক লোকের আগ্রহের মূল কারণ হলো, তার খাড়া কথা খাড়া বলতে পারা এবং ‘জাতীয় স্বার্থের নামে মিথ্যা অপেশাদারিত্বের আবেগ’-এর বাইরে পরিস্থিতি মূল্যায়নের এক পদ্ধতি ধরে এগিয়ে চলা। তিনি নিয়মিত ওয়েবে ‘ওয়্যার’ (ডওজঊ) পত্রিকায় আর্টিকেল লিখছেন। তিনি লিখেছেন, লাদাখে চীন-ভারতের এলএসি (খঅঈ) নামের সীমানা ঠিক কোনটা? এর সবচেয়ে পুরনো হলো ১৯৫৯-৬০ সালেরটা। এ ছাড়া পরে ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০৫, ২০১২, ২০১৫ ইত্যাদি অনেক আছে। পারভীন বলছেন, চীন এখন সেই ১৯৫৯-৬০ সালেরটার ভিত্তিতেই সব এলাকা মাপছে আর ওই ম্যাপ অনুসারে এলাকা নিজের দখলে নিয়েছে। তবে এটাও অস্থায়ী সীমানা। আর অস্থায়ী সীমানা মানেই এলএসি। এলএসি শব্দের ‘এ’ হলো, এটা ‘অ্যাকচুয়াল’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ ‘এখন যেভাবে যার দখলে’ আছে।
সবচেয়ে বড় কথা চীন ভারতকে এবার ১৯৫৯-৬০ সালের ভিত্তিকেই মানতে চাপ দিয়ে আসছিল। আর মোদি চীনের সেই দাবি মেনে নিয়ে এখন বলছেন, আমাদের কোনো ভূখণ্ড কেউ নেয়নি। আমাদের এলএসি আমাদের ঠিকই আছে। কিন্তু সেটি কী করে সত্যি হয়? তাই পারভীন সোয়ানি লিখছেন, ‘মোদি ভারতে একটা ধারণার আবহ তৈরি করে চলতি জটিলতা পার হয়ে যেতে চান। সে কথা দুটো হলো, এলএসি অমান্য করা যায় না। আর ভারতের কোনো ভূখণ্ড চীনা সেনাদের কাছে ভারত হারায়নি।’ কিন্তু তাতে এটা অবশ্য আরেক কথা যে, কে আর এরপরে জিজ্ঞাসা করতে আসছে, এই লাইন মানে এলএসির লাইন, এটা কোন সালেরটা? ‘১৯৯৩ সালের এলএসি লাইন নাকি চীনের ১৯৬০ সালের দাবি করা এলএসি লাইন?’ এই প্রশ্নটাকে উহ্য রেখেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তার অভ্যন্তরীণ ভোটার বা শ্রোতার সাথে চাতুরীটা করেছেন। আপাতত নিজের মুখ রক্ষা করেছেন। তাই তিনি গালওয়ান উপত্যকা ও টহল দেয়ার ভূখণ্ডপথ ছেড়ে চলে এসেছেন। কেবল মুখরক্ষার একটা কথা বলে বেড়াচ্ছেন যে, এটা ‘সাময়িক’, অস্থায়ী। পারভীন এমনকি আরো বলছেন, মোদির যে নিয়মিত রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কী বাত’, সেখানেও গত ২৮ জুন মোদি দাবি করেছেন- ‘গালওয়ান যুদ্ধ জয় করা গেছে’। আর বেশির ভাগ মিডিয়াই সরকারের ‘এই লাইন’ তোতা পাখির মতো আউড়িয়ে যাচ্ছে।
৬ জুলাই বেলা ১টায় পারভীন সোয়ানির টুইটারে আর বিকেলে ওয়্যার ওয়েব পত্রিকায় তার লেখা আর্টিকেলে তিনি পরিষ্কার করে এসব কথা লিখেছেন। মোদির কাণ্ড ফাঁস করে দিয়েছেন।
এতে আমরা না হয় সবাই জানলাম। কিন্তু এরপর কী? বলাই বাহুল্য, এরপরের ঘটনা হলো নি¤œচাপ বা ডিপ্রেশনÑ মানে প্রবল হতাশা নেমে এসেছে। এতে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাশায় প্রভাবিত অংশ হলো সাংবাদিক আর পড়ালেখা জানাদের মধ্যে যারা এই খবরাখবরগুলো রাখেন তারা।
আর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে হতাশা তা কাটাতে অন্তত কিছু ক্ষোভ প্রকাশের একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা হলো চীনের তৈরি প্রায় ৫৯টা মোবাইল ‘অ্যাপ’ বা অ্যাপ্লিকেশনÑ ভারতের সরকার ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তাতে অবস্থা এমন যেন, এটা দিয়েই চীনের ওপর কিছু ‘গোলাবর্ষণ করা গেছে’। যদিও এতে সবচেয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এসেছে টিকটক অ্যাপ বন্ধ হওয়াতে। কারণ, এটা ব্যবহার করে ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ বাসায় বসে তৈরি করা যেত, যা ফেসবুকে প্রকাশ করলে ওর বিজ্ঞাপনের আয় থেকে তরুণেরা হাতখরচের পয়সা জোগাড় করতে পারত। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তারা বলতে চেয়েছে, দেশের যুদ্ধ বা স্বার্থ নিয়ে সরকারের যা মন চায় করুক তাদের কোনো আপত্তি নেই; কিন্তু তারা যা থেকে কিছু অর্থ আয় করত তার ওপর হাত দেয়া কেন? সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তাদের স্বার্থের কথা কেউ আমলে নেয়নি কেন?