আকাশযুদ্ধের তথ্য গোপন করার চেষ্টা!
আকাশযুদ্ধের তথ্য গোপন করার চেষ্টা! - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় ব্যবহারকারী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতীয়তাবাদী সরকারের অভিযোগের পর টুইটার ২০১৯ সালের মধ্য জুনে বেশ কয়েকজন ইউজারকে সাসপেন্ড করে। এসব ইউজার সরকারি তথ্য ব্যবহার করে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সামরিক তৎপরতা ট্র্যাক করেছিল।
এই নিষেধাজ্ঞার টার্গেট ছিল তথাকথিত ‘ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স,’ বা ওএসআইএনটি। তারা টুইটারের নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীতনতার প্রতি টুইটারের দায়বদ্ধতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। একইসাথে সারা দুনিয়ার কোটি কোটি ব্যবহারকারী একটি সামাজিক মাধ্যমের ওপর ভারত সরকারের দৃশ্যমান প্রভাবও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
টুইটারের টার্গেট হওয়া সব অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে একটি বিষয় অভিন্ন। তারা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মিরের আকাশে ভারতীয় ও পাকিস্তানি জঙ্গি বিমানের সংক্ষিপ্ত তবে তীব্র সঙ্ঘাতের পর ভারতীয় দাবি নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছিল।
যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের কথিত একটি সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বোমা হামলার চেষ্টার মাধ্যমে।
পরের দিন পাকিস্তান জবাব দিতে নামলে ওই আকাশযুদ্ধ হয়। এতে অন্তত একটি ভারতীয় জঙ্গিবিমান (মিগ-২১) ভূপাতিত হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা এর পাইলটকে গ্রেফতার করে, পরে অবশ্য তাকে হস্তান্তর করে। নয়া দিল্লি দাবি করে যে তাদের বাহিন পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ জঙ্গিবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তবে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
ওএসআইএনটি অ্যাকাউন্টগুলো ঘনিষ্ঠভাবে ওই যুদ্ধ ও ভারত ও পাকিস্তানি সূত্রগুলোর দাবিগুলো চ্যালেঞ্জ করছিল। ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা সূত্র অনুসরণকারীরা সাধারণত প্রকাশিত খবর, সামাজিক মাধ্যম, বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ছবি, পাবলিক শিপ ও ফ্লাইট-ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে সামরিক অভিযানগুলো সম্পর্কে জানার জন্য।
ওএসআইএনটি বিশ্লেষকেরা এফ-১৬ ভূপাতিত করার ভারতের দাবি নিয়ে প্রথম দিনই প্রশ্ন তোলে। বরং পাকিস্তান যে ভারতীয় মিগ ভূপাতিত করেছে, তার প্রমাণ হাতের মুঠোয় ছিল।
পরে পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমানগুলোর হিসাব পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তাদের কোনো বিমান খোয়া যায়নি।
কয়েক মাস পর ভারত টুইটার ওএসআইএনটি কমিউনিটির বিরুদ্ধে আবার প্রতিশোধ গ্রহণ করে। রিপোর্টার স্নেহাশীষ আলেক্স ফিলিপ ২০১৯ সালের ১৮ জুন দি প্রিন্টে পরিস্থিতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, টুইটার বলছে যে জনপ্রিয় @ELINTNews-এর মতো হ্যান্ডেলগুলো তারা সাসপেন্ড করছে ‘ভারতীয় আইন লঙ্ঘনের জন্য।‘
প্রখ্যাত কানাডিয়ান ওএসআইএনটি বিশ্লেষক স্টিফান ওয়াটকিন্স ন্যাশনাল ইন্টারেস্টকে ভারত তাদেরকে সন্ত্রাসী বা এ ধরনের কিছু বলার কারণে এএসআইএনটি অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ফিলিপ বলেন, এই উদ্যোগের পেছনে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাত থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে থাকে ভারতীয় বিমান বাহিনী।
এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হলেও টুইটার কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে সাসপেন্ড হওয়া টুইটারগুলো প্রতিবাদ করায় দৃশ্যত কাজ হয়েছে। তিন দিন পর কয়েকটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়।
অবশ্য ভারতের জাতীয়তাবাদী সরকার আগেও এ ধরনের চেষ্টা করেছে। ২০১৭ সালে আপত্তিকর উপাদান আছে- এমন অভিযোগ করে ভারত সরকার ১০০টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য টুইটারের প্রতি আহ্বান জানায়।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট