চীন-ভারত উত্তেজনার যাঁতাকলে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো
চীন-ভারত উত্তেজনার যাঁতাকলে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো - ছবি : সংগৃহীত
চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের প্রতিবেশীদেরকে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের ক্রসফায়ারে এড়াতে সতর্কভাবে চলতে বাধ্য করবে।
দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ছোট দেশ- নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা- দিল্লি ও বেইজিংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে থাকতে চেয়েছে। উল্লেখ্য, এসব দেশে দিল্লির দীর্ঘ দিনের প্রভাব ছিল, আর বেইজিং এসব এলাকায় বিপুলভাবে বিনিয়োগ করে আসছে।
কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ তাদের কাছে এই নিরপেক্ষতা অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
জওহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক গীতা কোচার বলেন, এই অঞ্চলের অনেক দেশ চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করছে। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যকার বর্ধিত উত্তেজনা সম্পর্কের ভারসাম্য বদলে দিয়েছে, প্রতিটি রাষ্ট্র এখন ভয় আর উদ্বেগের সাথে চীনকে লক্ষ্য করছে।
চলতি সপ্তাহে বেইজিং ও নয়া দিল্লি সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে এর আগে চার দশকের মধ্যে তাদের সীমান্ত সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে, ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষও হয়।
তবে ভারতের অভ্যন্তরে সৃষ্ট চীনবিরোধী উত্তাপের রেশ ধরে ভারত সরকার চীনা পণ্য বয়কট ও চীনা বিনিয়োগ সীমিত করার আহ্বানের মধ্যে ৫৯টি চীনা অ্যাপস নিষিদ্ধ করে।
ভূমিবেষ্টিত হিমালয়ের দেশ ভুটানের উত্তর দিকে চীন, দক্ষিণ দিকে ভারত। তারাও ভুটানের নিয়ন্ত্রণে থাকা সাকতেং ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙচুয়ারির একটি পরিবেশ প্রকল্পের বিরুদ্ধে চীনা আপত্তিতে উত্তেজনা অনুভব করছে।
জুনে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটিতে বেইজিং দাবি করে যে অভয়ারন্যটি চীন ও ভুটানের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড। কিন্তু ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা জানায়, এটি ভুটানি ভূখণ্ড, চীন আগে কখনো ভুটানের সাথে আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করেনি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক রিসার্চ ফেলো জেফ স্মিথ বলেন, বেইজিং দুই মাসের মধ্যে গালওয়ান উপত্যকার পুরোটা ও পূর্ব ভূটানের বিশাল অংশের ওপর তার নতুন দাবি উত্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, একসময় মনে হচ্ছি, ভুটানকে প্রলুব্ধ করে থিম্পু ও দিল্লির মধ্যে দেয়াল সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে চীন। কিন্তু এই দাবির ফলে তার অবসান ঘটবে।
স্মিথ বলেন, ভুটান ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও বেইজিং বা নয়া দিল্লি কাউকে রাগানোর কাজ থেকে বিরত থাকবে। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো দেশ চীনা পণ্য বয়কটের ভারতীয় আহ্বানে সাড়া দিতে আগ্রহ পাবে না। তাছাড়া চীনের অর্থনৈতিক শাস্তি প্রতিরোধ করার মতো অর্থনৈতিক অবস্থাও নেই এসব দেশের।
কোচার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত ও চীনের সাথে সীমান্ত থাকা নেপাল ও ভুটান, দীর্ঘ দিন ধরে বড় শক্তিগুলোর সাথে ভারসাম্য বজায় রেখেছিল। তারা নিরাপত্তার ব্যাপারে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা সুযোগগুলো গ্রহণ করছিল।
কিন্তু কোনো কিছুই বিনামূল্যে আসে না।চীন ও ভারত প্রতিযোগিতা না করে সঙ্ঘাতের দিকে যাওয়ায় এসব দেশকে এখন সতর্ক থাকতে হবে।
আবার সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ভারতে নিযুক্ত সাবেক চীনা কূটনীতিবিদ বলেন, চীন ও ভুটানের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ সহজে মিটবে না। কারণ নয়া দিল্লি এই সীমান্ত আলোচনায় হস্তক্ষেপ করবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বিপুল প্রভাব চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করবে।
দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধে বেশ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করছে।
এসসিএমপি