ট্রাম্প-শি’র দ্বন্দ্বের প্রভাব মোদির ওপর!
ট্রাম্প-শি - ছবি : সংগৃহীত
চলমান বৈশ্বিক করোনা সঙ্কটের এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প চীনকে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করে এর নাম দেন চায়না ভাইরাস। ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা করোনা নিয়ে বড় ধরনের চীনবিরোধী অর্থনৈতিক ও কৌশলগত যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দেন। আর এই যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ভারতকে ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয় যে, পশ্চিমা কর্পোরেট বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ চীন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে তা ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশে নিয়ে যাবে। একই সাথে চীনের বিরুদ্ধে শুরু করা হবে বাণিজ্য লড়াই। এই লড়াইয়ে ভারতের সহায়ক ভূমিকা রাখার বিষয়টি নানা তৎপরতায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
দিল্লির নীতি প্রণেতারা মনে করছেন, চীনে করা পশ্চিমা বিনিয়োগ ভারতে আসার সাথে সাথে পশ্চিমের বাজার চীনের জন্য অনেকখানি সঙ্কুচিত হয়ে আর তা প্রসারিত হবে ভারতের জন্য। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থানের যে স্বপ্ন দেশটির জনগণকে মোদি সরকার দেখাচ্ছেন সেটি বাস্তবে রূপ লাভ করবে। এর সাথে সাথে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং বৈশ্বিক ফোরামে ভারতের অবস্থান মজবুত হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গ্লোবাল টাইমসের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে একটি সুর পাওয়া যায় যে, নয়াদিল্লিকে যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী ভূমিকার অংশ হওয়ার ভাবনা পরিত্যাগ করে এশীয় সহযোগিতার বিষয় চিন্তা করতে হবে। এ দু’টি চীনা সূত্র থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ভারতের অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির উন্নতি ঘটুক তা নিয়ে চীনের কোনো চিন্তা বা উদ্বেগ নেই। বেইজিংয়ের আপত্তি দিল্লি যেন চীনবিরোধী তৎপরতার টুলসে পরিণত না হয়।
ডোকলাম সঙ্কট অথবা গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সবটার মূল হলো ভারতের পাশ্চাত্যাশ্রয়ী কৌশলগত নতুন ভূমিকা। দুই দেশের সীমান্তে যেসব উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় তার পেছনে কোনো সময় ভারত থেকে আর কোনো সময় থাকে চীন থেকে মদদ। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধ ভারতীয় মনস্তত্বে বড় প্রভাব ফেলে। এই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার হুমকির প্রেক্ষিতে বেইজিং যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এবং অরুণাচলের দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যায়। এ ঘটনার পরে উল্লেখযোগ্য রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাত হয় ১৯৭৫ সালে, যেখানে ৫ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী মারা যায়। এর পর দুই দেশের সীমান্তে হাতাহাতি ও মুখোমুখি হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে কিন্তু ২০ জনের বেশি প্রাণহানির যে ঘটনা গালওয়ান উপত্যকায় ঘটেছে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর পরের উত্তেজনাও তারই ধারাবাহিকতায় ঘটছে।
নতুন উত্তেজনা
ভারত-চীনের মধ্যে নতুন করে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে তার পেছনে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে পাশ্চাত্যের প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে সমৃদ্ধকরণের দৃষ্টিভঙ্গির ভূমিকা রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের এক ধরনের যুদ্ধপ্রস্তুতির বিষয়ও রয়েছে। ভারতে মোদি শাসনের গত কয়েক বছরে সরকার সব স্থল সীমান্তে সড়ক অবকাঠামো তৈরি করেছে যার সাথে সেনা ও বিমান ঘাঁটির প্রত্যক্ষ সংযোগ তৈরি করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরে গোয়েন্দা তৎপরতার সক্ষমতাও দিল্লি অনেক বাড়িয়েছে। এই সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির বিষয়টি প্রতিবেশী অনেক দেশের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস রিপোর্ট করেছেÑ ভারত লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা দিয়ে একটি কৌশলগত রাস্তা তৈরি করছে এবং এই অঞ্চলকে একটি আকাশপথের সাথে সংযুক্ত করছে, চীন যার বিরোধিতা করেছে।
একই ধরনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির তৎপরতা চীনের বা পাকিস্তানের নেই এ কথা বলা যাবে না।
তবে পাশাপাশি বৈরী মনোভাবের দুই প্রতিবেশীর এক দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি অন্য দেশকেও সমর প্রস্তুতির দিকে নিয়ে যায়।