শাহেদকে কেন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না?
শাহেদ - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো: শাহেদ আত্মগোপনে গেছেন বলে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব জানিয়েছে।
বাহিনীটির কর্মকর্তারা বলেছেন, তার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
একইসাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, মো: শাহেদ দেশের ভিতরেই পালিয়ে রয়েছেন।
মো: শাহেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা এবং দুর্নীতির তদন্ত করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে।
কিন্তু অভিযোগ ওঠার দু'দিন পরও তাকে যে গ্রেফতার করা যায়নি, সে ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীদের অনেকে।
রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। তাকে হাসপাতালটির মালিক মো: শাহেদের সহযোগী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে র্যাবের পক্ষ থেকে।
গত দু'দিনে আরো ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গ্রেফতারকৃতদের সকলেই হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারী।
চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে র্যাবের মামলায় এই গ্রেফতারকৃতরাও অভিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু মূল অভিযুক্ত মো:শাহেদ এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
মো: শাহেদ বিভিন্ন সময় শাহেদ করিম নাম ব্যবহার করেছে বলে র্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো: শাহেদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
"শাহেদ করিমকে গ্রেফতারের জন্য আমরা সর্বাত্মকভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। তাকে ধরার জন্য সারাদেশেই র্যাব সজাগ আছে। সে যেন কোনভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য র্যাব সতর্ক অবস্থায় আছে।"
তিনি আরো জানিয়েছেন যে, প্রতারণার মামলার তদন্তের দায়িত্ব যেন র্যাব পায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তারা সেই অনুরোধ জানাবেন।
মো: শাহেদকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও এখন জোরালো আলোচনা চলছে। বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থেকে মো: শাহেদ মহামারির মধ্যে চিকিৎসার নামে অসহায় মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। সেজন্য তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
বৃহস্পতিবার এনিয়ে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবার সরকার স্বাস্থ্যখাতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে সিলগালা করে দেয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিককে নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিজেন্ট হাসপাতাল এবং মো: শাহেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পদক্ষেপ নিয়েছে গোয়েন্দা শুল্ক বিভাগ।
এখন দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকও মো শাহেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালানোর কথা বলেছে। দুদকের সচিব দিলওয়ার বখত বলেছেন, দুর্নীতির বিষয়ে তারা অনুসন্ধান করবেন।
"পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য এসেছে, সেগুলো দুদকের নজরে এসেছে। দুদক তা অনুসন্ধানের ব্যাপারে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আশা করি শিগগিরই অনুসন্ধান শুরু করা যাবে। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হওয়ার পর সরকারের টাকা নিয়েও রিজেন্ট হাসপাতাল মানুষের কাছে টাকা নিয়েছে। এই অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান করবে।"
চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে দেশে আলোচনার শীর্ষে থাকা মো: শাহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে যে খুঁজে পাচ্ছে না-এনিয়েও নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীদের অনেকে মো: শাহেদকে গ্রেফতারের প্রশ্নে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান বলেছেন, মো: শাহেদকে ধরা যাচ্ছে না- এটা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
"হাসপাতালের কয়েকজনকে ধরেছে। কিন্তু মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না-এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে করছি না। কারণ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া বেশ কঠিন।"
এলিনা খান মনে করেন, করোনাভাইরাসের ভুয়া পরীক্ষার জন্য কেউ মারা গেছে কিনা বা সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে- মো: শাহেদ এবং রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারেও তদন্ত করা উচিত।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, মো: শাহেদ দেশের ভিতরেই পালিয়ে রয়েছেন এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকার ''কোনো ছাড় দেবে না'' বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
সূত্র : বিবিসি