মালাক্কা প্রণালীতে চীন-ভারত দ্বৈরথ!

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jul 09, 2020 10:23 pm
মালাক্কা প্রণালীতে চীন-ভারত দ্বৈরথ!

মালাক্কা প্রণালীতে চীন-ভারত দ্বৈরথ! - ছবি : সংগৃহীত

 

বহু বছর ধরে চীনের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত সুবিধা উপভোগ করে এসেছে ভারত। চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য মালাক্কা প্রণালীকে ব্যবহার করে, যেটার অবস্থান মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার মাঝখানে। ভারত মহাসাগরে ভারতের যে স্বাভাবিক অবস্থান, সেখানে মালাক্কা প্রণালীর মুখে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তাদের ঘাঁটি রয়েছে। যে কোন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই নৌ রুটটি ভারত বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু চীন হয়তো সময়ের সাথে সাথে এই সীমাবদ্ধতাটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এ অবস্থায় নৌ বিশ্লেষকরা এই হুমকির অর্থ ভালোই বোঝেন। ৫ জুলাই প্রসিদ্ধ নৌ বিষয়ক লেখক ও হারপুন ওয়্যার গেমের স্রষ্টা ল্যারি বন্ড ট্যাক ওপস পডকাস্টে আলোচনার সময় বলেন যে, চীনের সত্যিকারের উদ্বেগ রয়েছে যে ভারত এই প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে। “ভারত যদি চীনের সাথে বাণিজ্য ছিন্ন করতে চায়, তাহলে তাদেরকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো মালাক্কা প্রণালীতে কতগুলো জাহাজের ব্যারিকেড দিতে হবে। এটুকুই যথেষ্ট, ওই নৌপথ দিয়ে আর কোন নৌযান চলতে পারবে না”।

ঐতিহাসিকভাবে, পারস্য উপসাগর, ভেনেজুয়েলা ও অ্যাঙ্গোলা থেকে চীনের আমদানি করা তেল এই পথেই পরিবাহিত হচ্ছে। তবে, প্রণালী বন্ধে ভারতের প্রচেষ্টা যাতে কার্যকর না হতে পারে, সে জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন।

‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ অংশ হিসেবে পাকিস্তানে নতুন বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই সাথে আর্কটিকে নর্দার্ন সি রুট খোলার মাধ্যমে ‘পোলার সিল্ক রোড’ চালু হবে। মালাক্কার সীমাবদ্ধকা কাটিয়ে উঠতে এগুলো সাহায্য করবে।

পাকিস্তানের নতুন বন্দরটি গড়ে উঠছে দেশের পশ্চিম প্রান্তে, গোয়াদরে। সেখানে পরিবাহিত পণ্যগুলো পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে চীনে নেয়া হবে, যেটা চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের অংশ। ৮ জুন পাকিস্তান সরকার ৭.২ বিলিয়ন ডলারের রেলওয়ে আপগ্রেড করেছে যেটা গোয়াদরের সাথে চীনের কাশগরকে সংযুক্ত করবে। বন্দরটি এখনও পূর্ণ মাত্রায় সক্রিয় হয়নি, কিন্তু এর গন্তব্যটা স্পষ্ট।

গোয়াদর বন্দর অবশ্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলার শিকার হতে পারে। কিন্তু এতে রাজনৈতিক ও সামরিক ঝুঁকি রয়েছে, কারণ এটার অবস্থান তৃতীয় দেশে। মালাক্কা প্রণালির মতো এই বন্দরটিকে ব্লক করে দেয়ার বিষয়টিও ভাবা হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মালাক্কা প্রণালী থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি সরঞ্জামকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।

তাছাড়া গোয়াদর দিয়ে পণ্য পরিবহনে ভারতের বাধা দেয়ার সক্ষমতাটাও জটিলতার মধ্যে পড়ে যাবে, কারণ ভারত মহাসাগরে চীনের নৌ উপস্থিতি বেড়ে গেছে। বাস্তবে মালাক্কা প্রণালীর জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। আফ্রিকার জিবুতিতে চীন এরইমধ্যে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। এটা স্বাভাবিক যে চীনা নৌবাহিনী, সেখানে আরও বহর গড়ে তুলবে। তাছাড়া চীনা সাবমেরিনগুলোও এই এলাকায় নিয়মিত হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

মালাক্কা প্রণালীর বাইরে অন্য রুটগুলো হলো নর্দার্ন সি রুট, যেটা রাশিয়ার চারপাশ দিয়ে গেছে। চীনের ২০১৮ সালের আর্কটিক নীতিতে এই রুটের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “ভৌগলিকভাবে চীন ‘আর্কটিকের কাছাকাছি অবস্থিত রাষ্ট্র’। নীতি বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আর্কটিক নৌ রুটের উন্নয়ন করে ‘পোলার সিল্ক রুট’ নির্মানের জন্য সব পক্ষের সাথে মিলে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী চীন”।

তাই, সব মিলিয়ে বলা যায় চীনের কাছে মালাক্কা প্রণালীর কৌশলগত গুরুত্ব সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকবে। সেখানে চীনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার মতো শক্তি তখনো ভারতের থাকবে, কিন্তু সেটা চীনের উপর আর আগের মতো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us