উচ্চ রক্তচাপ যেসব ক্ষতি করতে পারে

ডাঃ অরূপ দাসবিশ্বাস | Jul 09, 2020 09:26 am
করোনার সময় সাবধান উচ্চ রক্তচাপ থেকে

করোনার সময় সাবধান উচ্চ রক্তচাপ থেকে - ছবি : সংগৃহীত

 

৯৯ বছর বয়সী রোগীও করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হচ্ছেন। অতএব উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে রাতের ঘুম নষ্ট করে প্রেসার বাড়াবেন না। রক্তচাপ থাকলেই সংক্রমণ উড়ে এসে জুড়ে বসবে না। সতর্ক থাকলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কম। আর হলেও তা সবার জন্য সমান জটিলতা ডেকে আনবে না।

তবে অনেকেই জানতে চাইছেন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা কীভাবে রোগের জটিলতা বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে?

 আসলে, দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে শরীরের বিভিন্ন রক্তবাহী নালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হার্ট, কিডনি, ব্রেন প্রভৃতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনা আক্রান্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত রক্তবাহী নালী ও দেহের অন্দরের দুর্বল হয়ে পড়া অঙ্গ শারীরিক জটিলতা বাড়িয়ে তোলে।

 কোনো ব্যক্তি করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পরে, ভাইরাস ওই ব্যক্তির ফুসফুসের বিভিন্ন কোষে ঢোকে ও রক্ত সংবহন তন্ত্রে প্রবেশ করে। এইভাবেই শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে আক্রমণ করে ক্ষতিসাধন করে।

 ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর দু’ভাবে গণ্ডগোল পাকাতে পারে। প্রথমত, প্রত্যক্ষভাবে কিছু অঙ্গকে অকেজো করার চেষ্টা করে। ফুসফুস ছাড়াও হৃদযন্ত্রকে আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে এই ভাইরাস। বিশেষ করে যদি আগে থেকে হৃদযন্ত্র দুর্বল থাকে, সংক্রমণের পর গুরুতর সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও থাকে বেশি।

দ্বিতীয়ত, দেহে ভাইরাস প্রবেশের পর, শরীরে একধরনের ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ তৈরি হয়। মনে রাখতে হবে, প্রদাহ তৈরি হওয়াও আসলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ। তবে প্রদাহ বেশি হলেই বিপদ।
কেন বিপদ, একটু সংক্ষেপে বলা যাক।

 শরীরে বাইরের রোগ-জীবাণু প্রবেশের পর সেগুলি প্রতিহত করতে দেহে বেশ কিছু উপকারী উপাদান বের হয়। উদাহরণ হিসেবে সাইটোকাইন নামের উপাদানটির নাম করা যায়। অনেক সময় সাইটোকাইনের মাত্রা বেশি হয়ে অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু অঙ্গের কাজকর্মে জটিলতা দেখা দেয়।

 মাত্রাতিরিক্ত সাইটোকাইন তৈরি হওয়াকে বলে সাইটোকাইন স্টর্ম। এ কারণে শরীরের ছোট-বড় বিভিন্ন রক্তবাহী নালীর যথেচ্ছ ক্ষতি সাধিত হয়। রক্তনালীর এই সমস্যাকে বলে ভাসকুলাইটিস। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত প্রবাহ কমে। বিভিন্ন শিরা উপশিরায় দেখা দেয় রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা। একাধিক জায়গায় রক্ত তঞ্চন হতে থাকায় রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী যে উপাদান, তার ঘাটতি দেখা দেয়! সে কারণে আবার লিভার, ব্রেন, হার্ট, ফুসফুসে রক্তক্ষরণের ভয় থাকে।

মুশকিল হল, আগেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে করোনা সংক্রমণের পর ভাসকুলাইটিস শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। রক্তবাহী নালীতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (প্লাক বা কোলেস্টেরলজাতীয় উপাদান জমে সরু ও শক্ত হয়ে যাওয়া) থাকলে রোগী হার্ট অ্যাটাকের সম্মুখীন হতে পারেন।

 সমস্যার বিষয় হল, ইতিমধ্যেই ভাইরাস দ্বারা ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ায় রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। সবমিলিয়ে ব্রেন, হার্ট, কিডনি, লিভার সহ দেহের বিভিন্ন জরুরি অঙ্গে রক্ত এবং অক্সিজেন প্রবাহ উল্লেখজনকভাবে হ্রাস পায়। ধীরে ধীরে অঙ্গগুলো বিকল হতে থাকে।

হাইপারটেনশন সামলাতে কী করবেন?
 নিয়মিত প্রেসার মেপে নিন  চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খান। একদিনের জন্যও বন্ধ করবেন না। প্রয়োজন অনুসারে কিছুদিনের ওষুধ আগে থেকে আনিয়ে রাখুন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ওষুধের ধরন ও মাত্রার হেরফের হতে পারে।

ডায়েট
 রান্নায় লবণ কমান। দিনে মাথাপিছু পাঁচ গ্রামের কম লবণ ব্যবহার করতে হবে।

 পাতে কাঁচা লবণ নেবেন না।

 যে সমস্ত খাদ্যে লবণ বেশি আছে, যেমন চিপস, চানাচুর এই ধরনের খাদ্য এড়িয়ে চলুন।

 অতিরিক্ত তেল আর মশলাদার খাবার এড়ান। সিদ্ধ বা সামান্য তেলে রান্না করা সব্জি শরীরে ক্যালরির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 সব্জিতে থাকে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফোলেটের মতো খনিজ ও ভিটামিন যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
 রোজ একটা মরশুমি ফল খান।

 ধূমপান সম্পূর্ণ বর্জনীয়।
 মদ্যপান কোভিড প্রতিরোধ করে না।

এক্সারসাইজ
সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট হালকা শরীরচর্চা মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সুবিধা হয়। তাই বাইরে বেরিয়ে ব্যায়াম করতে না পারলে ঘরের মধ্যেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে অতি অবশ্যই একবার পরামর্শ করে নিন। কারণ হাই প্রেসার বা হার্টের অসুখ থাকলে সব এক্সারসাইজ সব বয়সে করা যায় না। সতর্ক থাকুন। সুস্থ থাকুন।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us