যেভাবে ধরা পড়ল রিজেন্ট হাসপাতাল ও সাহেদ

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jul 08, 2020 10:25 pm
যেভাবে ধরা পড়ল রিজেন্ট হাসপাতাল ও সাহেদ

যেভাবে ধরা পড়ল রিজেন্ট হাসপাতাল ও সাহেদ - ছবি : সংগৃহীত

 

করোনাভাইরাস শনাক্ত করার টেস্টের ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগে বন্ধ হওয়া বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালের সাতজন কর্মীকে বুধবার রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

র‍্যাব বলছে, রিজেন্ট এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে, এবং ২০১৪ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পর আর নবায়ন না করেই তারা হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

কীভাবে এসব অনিয়ম কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গেছে?

বাংলাদেশে মার্চ মাসে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং সুরক্ষা সরঞ্জামাদি সংগ্রহ ও বিতরণ নিয়ে নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

এর মধ্যে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি অভিযোগ করে, হাসপাতালে রোগী ভর্তিতে অনিয়ম থেকে শুরু করে এন-৯৫ মাস্কসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন র‍্যাব বলছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদ দিনের পর দিন অনিয়ম চালিয়ে গেছেন।

কিন্তু মার্চের ২১ তারিখে যখন এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর কোভিড-১৯ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার জন্য চুক্তি করে, তখন হাসপাতালটির বৈধ লাইসেন্স, জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়ার সক্ষমতা কিংবা পূর্ববর্তী রেকর্ড কোন কিছুই পর্যালোচনা করা হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সরকার একটি জরুরি পরিস্থিতিতে হাসপাতালটির সঙ্গে চুক্তি করেছিল, যে কারণে তখন অনেক কিছু যাচাই করে দেখা হয়নি।

"যখন রোগীর অনেক চাপ, সেসময় বেসরকারি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি এগিয়ে এসেছিলেন, জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপটে সে সময় তার সাহায্যকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। সেজন্যই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত ছিলেন।

"কিন্তু কার ভেতরে কী আছে, সেটা তো শুরুতে জানা যায়নি। যারা দুর্বৃত্ত তারা নানাভাবে ভালো জায়গায় ঢুকে 'দুর্বৃত্তপনা' করেন। আমাদের সাথেও জরুরি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তিনি (রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক) 'দুবৃত্তপনা' করেছেন," বলছেন নাসিমা সুলতানা।

কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য শুরুর দিকে সরকারের নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতালের অন্যতম এই রিজেন্ট হাসপাতাল।

র‍্যাবের অভিযান

রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং প্রতারণার অভিযোগে সোমবার র‌্যাবের একটি দল উত্তরায় অবস্থিত হাসপাতালের একটি শাখায় অভিযান চালায়। সেখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ দেয়াসহ নানা ধরণের অনিয়মের প্রমাণ পায় র‍্যাব।

মঙ্গলবার অনিয়মের অভিযোগে হাসপাতালের উত্তরা শাখা সিলগালা করে দেয় র‍্যাব। একই দিন রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর এবং উত্তরা দুইটি শাখারই কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বিষয়টি নিয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র সারওয়ার বিন কাশেম অভিযোগ করেন, বিভিন্ন অনিয়ম করে রোগীদের হয়রানি করছিল রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

"হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালের পর আর নবায়ন করা হয়নি। এবং ১০ হাজারের মত করোনাভাইরাস পরীক্ষার মধ্যে সাড়ে চার হাজারের মত পরীক্ষার কাগজপত্র আমাদের হাতে আছে, যেগুলো ভুয়া।,'' তিনি বলেন।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, যেসব সরকারি সংস্থার নামে সার্টিফিকেট দিত, তারা বলেছে ওই রিপোর্ট তারা দেয়নি।

"রোগীদের কাছ থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টের জন্য তারা দুইবার অর্থ নিত। এছাড়া এ হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবার কথা থাকলেও, প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে বেড ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বাবদ বিপুল অর্থ বিল করত,'' তিনি বলেন।

ব্যবস্থাপনার সক্ষমতায় ঘাটতি?
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, মহামারি শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্য খাত ব্যবস্থাপনায় সরকারের দুর্বল নজরদারির কারণে এ ধরণের অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগেও মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর আগে পরীক্ষা না করেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেবার অভিযোগ ওঠে জেকেজি নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলছেন, এক্ষেত্রে সরকারি মনিটরিং-এর অভাবের সুযোগ নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে।

"কোভিড-১৯ মোকাবেলায় শুরু থেকে সরকার বলেছে তারা কমিটি করেছে, সরকারের সুপারভিশন বাড়ানো হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি, হলে এ ধরণের দুর্নীতির ঘটনা ঘটত না,'' তিনি বলেন।

''একদিকে সরকারের সুপারভিশনের অভাব রয়েছে, একই সঙ্গে রিজেন্টের পক্ষ থেকেও এই জরুরি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে 'অনৈতিক' একটি কাজ করা হয়েছে।"

অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা মনে করেন, এ ধরণের দুর্নীতি আটকাতে না পারলে মহামারি মোকাবেলায় সরকারের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে জনমনে। সেক্ষেত্রে এখনি কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নেবার পরামর্শ দেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us