মুরাকামি ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন
মুরাকামি - ছবি : সংগৃহীত
বছর দুয়েক আগে যখন আকস্মিকভাবেই নতুন করে কবিতা লেখা এবং সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা শুরু করি তখন প্রথমেই পড়েছিলাম জাপানি ঔপন্যাসিক হারুকি মুরাকামির কয়েকটি উপন্যাস। টানা বেশ কয়েকটি উপন্যাস পড়ে ফেলেছি তখন। মুরাকামিকে দিয়ে শুরু করার কারণ, ঠিক ওই সময় ঢাকার ফুটপাথে তার উপন্যাসের পাইরেটেড কপি খুব পাওয়া যাচ্ছিল। আবার অনলাইনেও তার অনেক ফিকশন ও নন-ফিকশন তখনই পেয়ে গেলাম। আরো বছর দশেক আগে এই লেখকের নাম জেনেছিলাম সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের কোনো সাক্ষাৎকার থেকে। তখন থেকেই বলাবলি হচ্ছিল, জাপানের এই লেখক নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাবেন। সেই থেকে ইচ্ছে, মুরাকামির উপন্যাস পড়ার। সেটি পূরণ হলো দু’বছর আগে।
হারুকি মুরাকামির উপন্যাসে কল্পনার ঐশ্বর্য দেখে এক কথায় বিস্মিত ও মুগ্ধ। উপন্যাসের বিশাল ক্যানভাসে কল্পনার হাজারও রঙ চড়িয়ে কিভাবে জীবনের বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য ছবি এঁকেছেন এই জাপানি কথাশিল্পী সেটাই বিস্ময়। একটি ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিপন্ন করতে তিনি যে দূরবর্তী বিন্দু থেকে সুদক্ষ তীরন্দাজের মতো টার্গেটের কেন্দ্রবিন্দুতে আলো ফেলে এক পা এক পা করে এগিয়ে যান সে এক নিখুঁত শিল্পকর্ম বটে। নিজে বইগুলো না পড়ে শুধু অন্যের মুখে শুনে এ শিল্পের রসাস্বাদন করা কঠিন। কিন্তু মুরাকামির কাহিনীর গঠন কাঠামো, এর প্লটের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছি না। আমাদের প্রসঙ্গ একটু ভিন্ন : তার পাশ্চাত্যপ্রীতি এবং প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনের সূত্র।
মুরাকামির উপন্যাস পড়তে গিয়ে বারবার শুধু মনে হয়েছে, এখানে জাপানের জীবন কোথায়? জাপানি সংস্কৃতির পরিচয় তো পাচ্ছি না! জাপানের মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের চিন্তাচেতনা, আশা-আকাক্সক্ষা, শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত, প্রেম-প্রণয়-পরিণয়, কিংবা সংগ্রামশীলতা কিছুই তো খুঁজে পাচ্ছি না! তিনিই
প্রথম জাপানি লেখক যাকে পড়তে শুরু করেছি। কিন্তু তার লেখায় জাপানি সংস্কৃতির অনুপস্থিতি
আমাকে তীব্রভাবে পীড়া দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশে যেমন গল্প-উপন্যাসে বা নাটকে সুযোগ পেলেই নায়ক নায়িকার মনের অবস্থা বোঝাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত উদ্ধৃত করি, কদাচিৎ নজরুলের, ভারতে যেমন অহরহ রামায়ণ-মহাভারতের ঘটনা বা চরিত্রের উদ্ধৃতি দেয়া হয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচরণের ভেতর থেকে তাদের সংস্কৃতির উপাদান তুলে ধরা হয়, মুরাকামির লেখায় সেই জিনিসটি একেবারেই পাইনি। এতে নিদারুণভাবে হতাশ হয়েছি।
প্রতিটি উপন্যাসে মুরাকামির নায়ক-নায়িকারা বা প্রধান চরিত্রগুলোই যে কেবল পাশ্চাত্যের মিউজিক শোনে, পশ্চিমা লেখকদের বই পড়ে তা-ই নয়, তার ট্যাক্সি বা লরি চালকও পাশ্চাত্যের এমন শিল্পীর পিয়ানো বাদন শোনে যাদের নাম আমরা অনেকে কখনো শুনিনি। যেমন, কাফকা অন দ্য শোর (২০০২) উপন্যাসের কথা বলি। এর নায়ক কিশোর কাফকা আত্মপরিচয়ের সন্ধানে অথবা যেমনটা সমালোচকরা বলেছেন, তার বর্তমান আত্মপরিচয় থেকে মুক্তির খোঁজে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আশ্রয় নেয় দূরের কোনো এক প্রাইভেট প্রপার্টির লাইব্রেরি স্থাপনায়। সেখানে তার নতুন বন্ধু ওশিমার সাথে সঙ্গীত নিয়ে কথা হয় কাফকার। প্রায় তিন পৃষ্ঠা ধরে সে আলোচনা তুলে ধরছেন কাফকা। কোন শিল্পীর সঙ্গীত? না, তিনি হলেন শুবার্ট। এই শিল্পীর নাম কখনো শুনিনি। তাতে অবশ্য কিছু এসে যায় না। কারণ, নিজে সঙ্গীতের তেমন খোঁজখবর রাখি না। জানা গেল, ফ্রাঞ্জ পিটার শুবার্ট (১৭৯৭-১৮২৮) হলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন অস্ট্রীয় শিল্পী। মাত্র ৩১ বছরের জীবনে তিনি বছর বিশেক সঙ্গীতে সক্রিয় ছিলেন এবং বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন বলেই জানা যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের সঙ্গীতের ক্লাসিক্যাল যুগ ও রোমান্টিক যুগের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনার জন্য তাকে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু পিয়ানো বাদন, যেটির জন্য মুরাকামি তাকে উল্লেখ করেছেন বেশ অনেকবার, সেই পিয়ানো বাদনে বিশ্বের সেরা যেসব কাজ তাতে কিন্তু শুবার্টের নাম নেই। আমরা সঙ্গীত জগতের বাইরের সাধারণ মানুষ সর্বকালের যেসব সেরা পিয়ানো বাদকের নাম শুনি বা জানি তাদের মধ্যে বেটোফেন, মোৎসার্ট, বাখ, শুম্যান, দেবুসি, শোপাঁ, ক্লার্ক উল্লেখ্য। এমনকি সম্ভবত এখনো বেঁচে আছেন আর্জেন্টিনার পিয়ানো বাদক মার্থা আরগেরিশ যাকে সর্বকালের সেরাদের একজন বলা হয়। তার নামও আমরা অনেকে হয়তো শুনেছি। কিন্তু শুবার্টের নাম কখনো নয়।
তবে একটি কথা বলতেই হবে। কাফকা যে ওশিমার সাথে শুবার্টের মিউজিক নিয়ে কথা বলছে, সেই ওশিমা এমন এক রোগে আক্রান্ত যে কিনা যেকোনো সময় না ফেরার দেশে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ সঙ্গীতকারের জীবনের মতোই ওশিমার জীবনও অনিশ্চিত। মুরাকামি এখানে চরিত্রের মানসিক ও বাস্তব অবস্থা বোঝাতেই শুবার্ট ও তার সঙ্গীতের প্রসঙ্গ এনেছেন। ওশিমা তার গাড়ি খুব দ্রুত চালানোর সময় শুবার্টের মিউজিক শোনে। কারণ এই মিউজিকটা হলো খুঁতযুক্ত। অনেকটা খুবই ‘নিখুঁতভাবে অ-নিখুঁত করে’ রচিত। (এই বাক্যবন্ধ আমার নয়, কাফকার উপন্যাসে সঙ্গীতের ব্যবহারের বিষয়ে পাশ্চাত্যেরই একটি সঙ্গীতবিষয়ক ম্যাগাজিনের সম্পাদকের মন্তব্য)। এই অ-নিখুঁত বাজনা তীব্র গতিতে গাড়িচালনার সময় তাকে সজাগ ও সতর্ক রাখে। ওশিমার মুখে মুরাকামির বসানো সংলাপ দেখুন, "অষষ ঃযব ঢ়বৎভড়ৎসধহপবং ধৎব রসঢ়বৎভবপঃ. অ ফবহংব, ধৎঃরংঃরপ শরহফ ড়ভ রসঢ়বৎভবপঃরড়হ ংঃরসঁষধঃবং ুড়ঁৎ পড়হংপরড়ঁংহবংং, শববঢ়ং ুড়ঁ ধষবৎঃ. ওভ ও ষরংঃবহ ঃড় ংড়সব ঁঃঃবৎষু ঢ়বৎভবপঃ ঢ়বৎভড়ৎসধহপব ড়ভ ধহ ঁঃঃবৎষু ঢ়বৎভবপঃ ঢ়রবপব যিরষব ও’স ফৎরারহম, ও সরমযঃ ধিহঃ ঃড় পষড়ংব সু বুবং ধহফ ফরব ৎরমযঃ ঃযবহ ধহফ ঃযবৎব.”
বলতেই হবে, সঙ্গীতের প্রসঙ্গ উপস্থাপনের এটাও এক অভাবিত ও সুনিপুণ মাস্টারি। কাফকা সচেতন শিক্ষিত তরুণ। ওশিমাও। তারা শুবার্ট নিয়ে কথা বলছে, তা বেশ। কিন্তু মুরাকামির কাহিনীর সব রেস্তোরাঁয়, হোটেলে বা মিউজিক শপে জাপানি নয় বরং ওয়েস্টার্ন মিউজিক বাজে। তার নায়কেরা জাপানি কবি বা ঔপন্যাসিকের নাম নেন না, তাদের কাব্যের উদ্ধৃতি দেন না, দেন ইউরোপ আমেরিকান কবি ঔপন্যাসিকের উদ্ধৃতি। এমনকি সাধারণ একজন লরিচালক বা ট্যাক্সিচালকও যখন শুবার্ট বা অন্য কোনো পশ্চিমা শিল্পীর পিয়ানো বাদন শোনে বা এলপি কেনে, এমনকি শিল্পীর নাম পর্যন্ত বলে দেয়, তখন অবাক না হয়ে পারা যায় না। কাফকা অন দ্য শোর-এ একজন লরিচালক এবং ১কিউ৮৪-এ একজন ট্যাক্সিচালক আমাদের এমনই বিস্ময়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। ১কিউ৮৪-এ প্রধান চরিত্র এমন এক তরুণী, যে মাধ্যমিক স্কুল পাস করেছে এবং এক ধরনের বিকৃত আদর্শিক চেতনার ধারক হিসাবে বিশ্বকে শুদ্ধ করার আন্তরিক ইচ্ছে থেকেই সিরিয়াল কিলারের পেশা বেছে নিয়েছে। নারীকে ধর্ষণ করে তারপর নৃশংসভাবে হত্যাকারী, পুরুষদের বেছে বেছে হত্যা করে এই সিরিয়াল কিলার। আশ্চর্য, এই মেয়েটিও শুবার্টের নাম জানে। উপন্যাস পড়তে পড়তে মনে হয়, আমাদের দেশে একসময় শামসাদ বেগমের জনপ্রিয় গানগুলো (মনে আছে, ‘ও, মেরে পিয়া গ্যয়ে রেঙ্গুন/কিয়া হ্যায় ওঁহা সে টালফুন’) যেমন হোটেলে হোটেলে তারস্বরে বাজত, জাপানে বোধহয় এখন অলিতে গলিতে ফ্রাঞ্জ শুবার্ট বাজে।
সত্যি, বাস্তবেও সেটাই দেখালেন মুরাকামি। ৩৪ পরিচ্ছেদে দেখাচ্ছেন, উপন্যাসের একটি অস্বাভাবিক চরিত্র হোশিনো রাস্তার পাশে একটি ছোট্ট কফি শপে থেমেছে। সেখানে কফিশপের মালিক মিউজিক বাজাচ্ছেন। কোন মিউজিক? না, জাপানি নয়, সেই বিশ্ববিশ্রুত বেটোফেনের একটি বিখ্যাত বাজনা আর্চডিউক ট্রায়ো। একেবারে ছেলেবেলায় একটি ঘটনায় অচেতন হয়ে পড়ে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে হোশিনো। সে এখন তার পরিপার্শ্বের সাথে একেবারেই বেমানান এক অস্তিত্ব। কিন্তু বেটোফেনের বাজনা শুনে বহু যুগ পর তার সেই শৈশবের স্কুলের দিনগুলো মনে পড়ে যায়। স্মৃতিহারা মানুষেরও মস্তিষ্কের গোপন কোনো কন্দরে কি স্মৃতির অণু-পরমাণু বেঁচে থাকে? আর সেই স্মৃতিকণা জেগে ওঠে শৈশবে শোনা কোনো সঙ্গীতের পুনঃশ্রুতিতে? আশ্চর্যই বটে!
এরপর ১৩৮ পৃষ্ঠায় আছে একটি অতি সাম্প্রতিক গানের উল্লেখ। সেটি হলো আমেরিকান শিল্পী প্রিন্স রজার্সের ‘লিটল রেড করভেট’। ১৯৮৩ সালে এই গানটি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিয়েছিল। নিছক যৌন অভিজ্ঞতা নিয়ে এই গান। হ্যাঁ, যৌনতা। মুরাকামির উপন্যাসের এক প্রবল ও তীব্রতর উপাদান। যে অবাধ ও খোলামেলা যৌনতা তার উপন্যাসে পাতার পর পাতাজুড়ে ছড়িয়ে আছে, তা কোনোভাবেই এশীয় কোনো দেশের সংস্কৃতির সাথে মানায় না। আমার জানা নেই, জাপানিদের জীবনযাত্রায় যৌনতার প্রকাশ কতটা এবং কিভাবে? তবে তা যে পাশ্চাত্যের মতো অবাধ নয়, আমি নিশ্চিত।
একসময় মনে হয়েছিল, পাশ্চাত্যের শিল্প-সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের এই লাগামহীন ব্যবহার সম্ভবত মুরাকামির নোবেল পুরস্কার বাগানোর একটা কৌশল। অর্থাৎ পাশ্চাত্য তোষণ। দৃষ্টান্ত তো হাতের কাছে। আমাদের কবিগুরু যেটা করে ‘সফল’ হয়েছিলেন। মুরাকামির ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন, সে সম্পর্কে
খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখি, বিশ্বের বহু পাঠক এই বিষয়টি লক্ষ করে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সবাই একমত যে, মুরাকামির উপন্যাসে জাপান নেই। জাপানি জীবন ও সংস্কৃতি নেই। তার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য তোষণের এই অভিযোগ জাপানিদেরও। তাকে এ বিষয়ে সব সময়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে এবং জবাব দিতে হয়েছে। সম্ভবত মুরাকামির পাশ্চাত্যে প্রবাস যাপন এবং দেশে থাকতে স্ত্রীর সঙ্গে মিলে একটি মিউজিক (জাজ) ক্লাব পরিচালনার ঘটনা তার উপন্যাসে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের একটি কারণ হতে পারে। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।
মুরাকামির উপন্যাসের ভাষা সম্পর্কে জাপানের একজন আলোচক বলেছেন, তার ভাষা হলো ‘হন্যাকুচো’ (যড়হুধশঁপযড়) টাইপের। অর্থাৎ ইংরেজি বই জাপানিতে তরজমা করলে যেমন লাবণ্য হারায়, মুরাকামির ভাষা হলো সেই রকম। সব বড় লেখকের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরার লোক থাকে। তার ক্ষেত্রেও আছে। বলা হয়, মুরাকামি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে জাপানি সংস্কৃতির মেলবন্ধন রচনা করেছেন। তার ভাষা হলো তার বলা কথাগুলোকে যথাযথভাবে পাঠকের মনে দাগ কাটতে পারার উপযোগী। এটি ক্লাসিক জাপানি ভাষায় হয়তো সম্ভব হতো না। কিন্তু আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, মুরাকামি নিজের ভাষার উন্নয়নে কোনো অভিনব শৈলী যোগ করতে পারেননি। জাতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনেও তেমন কোনও ভূমিকা রাখেননি। এটি আমার এই মুহূর্তের ভাবনা। তাকে ভালো করে বোঝার জন্য নিঃসন্দেহে আরো পড়া দরকার।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, যেটিকে তার নোবেল বাগানোর কৌশল ভেবেছিলাম, সেই পাশ্চাত্য তোষণই তার নোবেল না পাওয়ার স্থায়ী কারণ হয়ে থেকে যেতে পারে। তিনি কখনো নোবেল প্রাইজ পাবেন না এমন বলার সুযোগ অবশ্য নেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকার শীর্ষে তার নাম। ২০১৮ সালে তাকে বিকল্প নোবেল দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। তিনি নেননি। সবিনয়ে বলেছেন, তিনি আলোকবর্তিকার নিচে আসতে চান না। আপন মনে লেখালেখিতেই আত্মনিবেশ করতে চান।’ আসলে বিকল্প নয়, আসল নোবেলই তার কাক্সিক্ষত। নোবেল পুরস্কার দেয়াই হয় সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য। সেটি হতে পারে মানবিক সত্তার আদর্শিক চেতনার অতলস্পর্শী অভিনব উপস্থাপন; ভাষার ক্ষেত্রে অনন্য শৈলীর সংযোজন), মানবজাতির জন্য বৃহত্তর কল্যাণের অঙ্গীকার তুলে ধরতে সক্ষম এমন সাহিত্যকীর্তির জন্য। ২০১৭ সালে জাপানের ঔপন্যাসিক কাজুও ইশিগুরোকে নোবেল দেয়া হয়। তাঁর প্রশংসাপত্রে নোবেল অ্যাকাডেমি বলেছিল, ‘ইশিগুরো তার মহত্তর আবেগসঞ্জাত উপন্যাসগুলোতে বিশ্বের সাথে আমাদের সংযোগ সম্পর্কিত বিভ্রমাত্মক অনুভবের নিচে এক অতল গহ্বর বা মৃত্যুলোক উদ্ঘাটন করেছেন।’ এই উদ্ঘাটন বা উন্মোচনই একজন সাহিত্যিকের মূল কাজ।
নোবেল পুরস্কার পান বা না পান, হারুকি মুরাকামিকে সব সময়ই সালাম, তার কল্পনার বিপুল ঐশ্বর্যের জন্য এবং মানবিক চরিত্রের জটিল সম্পর্কসূত্রগুলোর অভিনব উদঘাটন প্রক্রিয়ার জন্য। তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই এখনো পড়া বাকি। সেগুলো পড়া হলে আশা করি তাকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ তৈরি হবে।