আফগানিস্তান : শেষ হাসি তালেবানের

সালমান রাফি শেখ | Jul 07, 2020 05:24 pm
আফগানিস্তান : শেষ হাসি তালেবানের

আফগানিস্তান : শেষ হাসি তালেবানের - ছবি : সংগৃহীত

 

আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য হত্যায় কথিত রুশ সম্পৃক্ততা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি ‘ফাঁস’ হওয়া খবরটি আফগান শান্তিপ্রক্রিয়াকে জটিল করেছে, এমনকি যদি এর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র রাশিয়ার মানহানিই হয়ে থাকে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে ‘রুশোফোবিয়া’ কতটুকু প্রাতিষ্ঠানিকরণ হয়েছে, তাও বোঝা যাচ্ছে। প্রতিবেদনটি এমন একসময় প্রকাশিত হয়েছে, যখন তালেবান বলে দিয়েছে যে তারা মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলা বা তাদের হত্যা করবে না। ফলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিকে রাজনৈতিক উস্কানি হিসেবে দেখা যেতে পারে। কারণ পুনঃনির্বাচনকে সামনে রেখে আফগানিস্তানে এন্ড-গেম খেলতে নামা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এ ধরনের প্রতিবেদনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে নিহত মার্কিন সৈন্যদের মায়েরা রুশ সম্পৃক্ততার তদন্ত দাবি করা শুরু করেছেন। এই দাবি গতি পেলে, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটরা ইতোমধ্যেই সোচ্চার হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরেকটি ‘রাশিয়াগেট’ সঙ্কটে পড়বেন, নির্বাচনের আগে তাকে এর সুরাহা করতে হবে।

আর ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে চূড়ান্ত কাজ হলো আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের কাজটি সম্পন্ন করা।
পাশ্চাত্যের মূলধারার কিছু কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখনো আফগানিস্তান থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের বিষয়টি ভাবছে। এর জন্য প্রয়োজন হলে আফগানিস্তানকে অনিশ্চিত অবস্থায় রেখেও যুক্তরাষ্ট্র সরে যেতে পারে। কারণ আফগানিস্তান সমস্যার সমাধানের চেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আর কাবুল ও তালেবান উভয়েই হোয়াইট হাউজের জরুরি অবস্থার বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। নির্বাচন ও সেইসাথে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে ট্রাম্প খুব দ্রুত আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার চান।এর ফলে আলোচনার টেবিলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি ও মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের রূপরেখা ছাড়া সর্বদলীয় আলোচনায় অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা হওয়ার সুযোগ খুব কমই আছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি তার উপদেষ্টাদের বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত প্রত্যাহারই প্রমাণ করতে পারে যে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি ছিল মনগড়া। মিডিয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট পরিষ্কার করেছেন যে তিনি আফগানিস্তান পরিস্থিতির নিয়ে সামান্যই চিন্তা করেন, তার যদি মনে হয় যে নভেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহার হলে তার নির্বাচনে সুবিধা হবে, তবে তিনি তাই করবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন এ অনুযায়ী প্রক্রিয়ার কাজ করে দোহা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করেছেন। বস্তুত, সম্প্রতি তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে আলাপকালে মাইক পম্পেইও এই একটিমাত্র বিষয় নিয়েই আলোচনা করেছেন।

আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ দোহায় চলে গেছেন তালেবানের সাথে আলোচনা করে যুদ্ধ অবসানের পন্থা নির্ধারণ করার জন্য।
অবশ্য, ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বিতর্ক সৃষ্ট হওয়ায় এবং তালেবানকে আস্থায় আনতে পারলেও এই নিশ্চয়তা নেই যে আফগানিস্তানের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সাথে মার্কিন সম্পর্ক যুদ্ধের সত্যিকারের ফলাফলে তাৎপর্য কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে।
আফগানিস্তানে ২০১৬ সাল থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলা রাশিয়া নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের ওপর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আফগানিস্তানে মার্কিন স্বার্থের ব্যাপারে রাশিয়ার অবস্থান এর ফলে আরো কঠোর হবে। এর ফলে আফগানিস্তান মার্কিন বাহিনীর জন্য আরো কঠিন হবে, তালেবান আরো শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ককে বর্তমানে কোনোভাবেই ইতিাবাচক বলা যায় না। রাশিয়া, চীন ও এমনকি বর্তমান ইরান সম্ভবত নিজেদের জন্য এমন অবস্থা সৃষ্টি করে নেবে, যার ফলে তালেবানের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কিছুই করার থাকবে না। খুব সম্ভবত এর ফলে যুদ্ধপরবর্তী অবস্থায় তালেবান সর্বোচ্চ সুবিধা পেয়ে যাবে।

এই শক্তিগুলোর সবার আফগানিস্তানের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ রয়ছে, তারা তালেবানের সাথে আরো সুসম্পর্ক চাচ্ছে, মধ্য এশিয়া ও এর বাইরে চরম ইসলামপন্থীদের সম্ভাব্য বিস্তার ঠেকাতে তালেবানের সহায়তা কামনা করতে যাচ্ছে।

রাশিয়া, চীন ও ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কে আলোকে নিশ্চিতভাবেই বলা যঅয়, আপগান সঙ্ঘাতে ট্রাম্পের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি ইতোমধ্যেই কানাগলিতে ঠেকে গেছে।
যে কয়েকটি দেশ ট্রাম্পের আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণে শরিক ছিল, তার মধ্যে কেবল পাকিস্তানই কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য মিত্র হিসেবে বহাল রয়েছে। কিন্তু এই পাকিস্তানও ২০২০ সালের পর আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি বা অনির্দিষ্ট মেয়াদে মার্কিন উপস্থিতি চায় না। এর ফলে ট্রাম্পের কাছে দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহার ছাড়া আর বাস্তব কোনো রাজনৈতিক সমাধান দেখা যাচ্ছে না। আর তালেবানের কাছে বিজয় উদযাপন ও উল্লাস করার সব কারণই আছে।

সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us