বৃষ্টির ফজিলত ও দোয়া
বৃষ্টি - ছবি : সংগৃহীত
প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তায়ালার, যিনি এই ধরাকে করেছেন সৃজন। সেই সাথে দান করেছেন কালের আবর্তন। কী অপরূপ ডেকোরেশন। আঁধার দিয়ে রাতকে সজ্জিত করেন, আবার আলো দিয়ে দিনকে করেন সুশোভিত। আবার এই ধারাবাহিক সময় গণনার জন্য শিক্ষা দিলেন মাস, বছরের হিসাব। বছরের মাসগুলোকে পৃথক রহমত দ্বারা বেষ্টিত করলেন। যাতে একের পরে আরেকটা রহমতের মধ্যেই তাঁর বান্দাহরা বেষ্টিত থাকে। এসব কিছুই আবার একাংশ অধিক হারে উপভোগ্য আমাদের এই মাতৃভূমি বাংলাদেশে। কারণ, আমাদের ছোট্ট এই দেশে দুই মাস অন্তর প্রকাশ পায় প্রকৃতির নতুন রূপ। যা মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত।
বর্তমানে আমাদের দেশে চলছে দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। যা এক দিকে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর চলাচলের জন্য বিশেষ কষ্টকর সময়। রাস্তায় কাদা, বাড়িতে কাদা, বের হলেই বিরক্তিকর অবস্থা। শহরের মানুষের জন্যও ভোগান্তির শেষ নেই। শিশুকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিজের অফিসে যাওয়া সবখানেই কাকভেজা ভিজতে হয়।
তার পরও এ ঋতুতে রয়েছে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত। এ ঋতুতে আমরা দেখতে পাই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। ডালি ডালি মেঘে ভরা আঁকাশ, কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টি।
এই বৃষ্টির মাধ্যমে জমিন ফিরে পায় সতেজতা। গ্রীষ্মের রোদে যখন পুরো জমিন ফেটে চৌচির হয়ে যায়, হাহাকার করে এক ফোঁটা পানির জন্য, তখনই মাটির বুকফাটা আর্তনাদকে সান্ত্ব—না দিতে অবতরণ করে বর্ষাকাল।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহ আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর তা দিয়ে জমিনকে তার মৃত্যুর পর সজীব করেছেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে সেই কওমের জন্য যারা শোনে।’ (সূরা নাহল : ৬৫)
নদীমাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশ। এখানে বর্ষাকালে নদী, নালা, খাল, বিল ও পুকুরগুলো ফিরে পায় যৌবন। নদীর মাঝে চলতে থাকে নানা প্রকৃতির নৌযান। কোনোটা ইঞ্জিনচালিত বৃহদাকারের, আবার কোনোটা ছোট আকারের। আবার কখনো দেখা মেলে দৃষ্টিনন্দিত পাল খাটিয়ে চলতে থাকে নানা রকমের নৌকা। এসব এ বর্ষাকালের অপরূপ সৌন্দর্যের নিদর্শন।
এই বর্ষায় প্রকৃতি সজ্জিত হয় নানা ফুলে ফলে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জাম্বুরাসহ এমন অনেক ফল রয়েছে, যা বর্ষাকালের রহমত হিসেবে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাহদের দান করেছেন।
শুধু তাই নয়, আমাদের অপরূপ সৌন্দর্যের এই বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। যা এই বর্ষাকালের অপার কৃপা। বসন্ত যদিও ঋতু বর্ষাকালকে নিয়েও কবিতার জগতে কবিদের আনাগোনা কম নয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে বৃষ্টির চমৎকার খবর দিয়েছেন, এটিকে তিনি জ্ঞানপিপাসুদের জন্য নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে তিনি ভয় ও ভরসাস্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান, আর আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দিয়ে জমিনকে মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য যারা অনুধাবন করে।’ (সূরা রুম : ২৪)
বিশ্বনবী সা: বৃষ্টিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি যখন আসমান থেকে আগমন করে তখন তা আল্লাহর কাছ থেকে আসে।
তাই বৃষ্টির স্পর্শ নেয়া মানে আল্লাহর রহমতের স্পর্শ নেয়া। সে ব্যাপারে বিশ্বনবী সা: নিজের আমল দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন।
হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সা:-এর সাথে ছিলাম, এমন সময় বৃষ্টি শুরু হলো। তখন বিশ্বনবী সা: তাঁর কাপড় কিছুটা খুলে দিলেন। ফলে তাতে বৃষ্টির পানি পৌঁছল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসূল সা: এরূপ কেন করলেন? তিনি বললেন, কেননা এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবাগত। (মুসলিম শরিফ : ১৯৬৮)
এছাড়া বিশ্বনবী সা: বৃষ্টির সময় পড়ার জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলো, আল্লাহুমা ছায়্যিবান নাফিয়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! এমন বৃষ্টি দান করুন যাতে ঢল, ধস বা আজাবের মতো কোনো অমঙ্গল নিহিত নেই। (বুখারি : ১০৩২)
আবু দাউদ শরিফের একটি বর্র্ণনায় এসেছে, দুই সময় এমন রয়েছে যখন দোয়া করলে তা খুব কমই ফেরত দেয়া হয়।
এক. বৃষ্টির সময় যখন কোনো বান্দাহ দোয়া করে। দুই. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়। (আবু দাউদ শরিফ : ২৫৪০)
সুতরাং বর্ষাকালকে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাহদের জন্য রহমতস্বরূপ দান করেছেন। আমাদের তার যথাযথ কদর করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : প্রধান মুফতি, কাশফুল উলুম নেছারিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স, নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর