ভিপি নূরের দল কেমন হবে?
ভিপি নূর - ছবি : সংগৃহীত
দেশে আলোচিত তরুণের নাম ডাকসুর ভিপি নূরুল হক নূর। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব, পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন সমর্থনের মধ্য দিয়ে তার উত্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংক্ষরণ পরিষদ’-এর অন্যতম একজন নেতা। আলোচিত ও সংগ্রামমুখী হওয়ায় ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে গতানুগতিক ছাত্ররাজনীতির বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি নির্বাচিত হন সহসভাপতি (ভিপি)। ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েও হামলা-মামলার শিকার হন একাধিকবার। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চিত্রও আমরা দেখেছি।
ভিপি নূর জুন ২০২০ সালে তরুণদের নেতৃত্বে ও তারুণ্যের আদর্শে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন; যা নিয়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে ওঠে করোনাভাইরাসের এ দুঃসময়ে। তার দাবি, মানুষের অধিকার আদায়কে প্রাধান্য দিয়ে দল গড়বেন তিনি। তার আশা, সেই দলে থাকবে তরুণসমাজ। ৫০ বছরের নিচে যারা, তারা থাকবেন দলের মূল সাংগঠনিক কাজে। বয়োজ্যেষ্ঠরা থাকবেন উপদেষ্টা পরিষদে। তার দলে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
ভিপি নূরের দলের সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্পষ্ট ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছেন বটে। তবু তার কর্মতৎপরতা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি দল গঠনে অনড়, তা স্পষ্ট। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো নীতি-আদর্শের কথা বলে; কিন্তু তাদের গঠনতন্ত্রে যা বলা আছে তার বেশির ভাগ অনুসরণ করে না। আদর্শের বিষয়ে অসাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র বা গণতন্ত্র বললেও বাস্তবে তা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা সময়ের সাথে মানুষের যে চাহিদা তা ধারণ করব। মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাহাত্তরের সংবিধান। প্রথাগত রাজনীতি বা রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে নতুন কিছু করতে চাই।’
ভিপি নূরের রাজনৈতিক দলের নাম এখনো ঠিক হয়নি। সংবাদমাধ্যম থেকে যেটুকু জানা গেছে, নূরের দলে গণমানুষের অধিকার প্রাধান্য দেয়া হবে। তার দলের নামে ‘অধিকার’ শব্দটি থাকবে। তিনি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠন যেমনÑ ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ গড়ে তুলেছেন। কমিটি গঠন কার্যক্রম শুরু করেছেন। কমিটিতে কারা থাকছেন, কতজন থাকছেন, তার সাথে কতজন তরুণ থাকছেন, তা জানা যায়নি। মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে স্পষ্টতা আসেনি। তবে এই দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে হাঁটছে, তা স্পষ্ট। ভিপি নূর এখন পুরোদস্তুর একজন রাজনীতিক, তা প্রতীয়মান।
বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে ভিপি নূরের লড়াইয়ের চিত্র দেখে অনেকের উপলব্ধি, তিনি নতুন দল গঠন করে রাজনীতিতে টিকে যেতে পারেন। তার সাহস আছে, আঘাত সহ্য করার মনোবল আছে। বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্য থেকে এ কথা বলা যায়, বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি আদর্শের জায়গায় দেখেন না। তার আনুষঙ্গিক ভাষ্য, তরুণদের শুধু হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির মাধ্যমে তরুণদের যোগ্য নেতৃত্বে আসতে দেয় না। মাঝপথে তারা বিপদের মুখে পড়ে যায়। তরুণদের হতাশা কাজে লাগাতে চান ভিপি নূর, তার দলে তরুণদের আধিক্য দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভিপি নূর একসময় দেশের বড় নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি যেহেতু রাজনীতির মাঠে পা ফেলেছেন, অতএব সে অনুপাতে কথা বলতে হবে। সকালে বলবেন দল গঠন করব, বিকেলে বলবেন দল গঠন করব না। আবার বলবেন, এককভাবে নির্বাচনে যাবো, পরক্ষণে বলবেন, ক্ষমতায় যেতে ঐক্য গঠনের বিকল্প নেই। এমন রাজনৈতিক স্ট্যন্টবাজি মানুষ পছন্দ করে না।
ভিপি নূর তরুণদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম দাঁড় করাতে পারেন, যদি গণমানুষের অধিকার আদায়ের কথা বলেন, তবেই আগামী দিনে ভালো করতে পারবেন। দেশের জনগণ তার পাশে থাকবে। এই কাজ খুব সহজে হবে না। তাকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই দেশবাসীর আস্থা অর্জন করতে হবে। সাফল্য পেতে হলে ভিপি নূরকে মনে রাখতে হবে, মূলধারার রাজনীতিতে যথেষ্ট পরিপক্বতার পরিচয় দিতে হয়।
md.angkob12@gmail.com