ভারতের বিরুদ্ধে এবার ভুটান কার্ড খেলছে চীন!
ভারতের বিরুদ্ধে এবার ভুটান কার্ড খেলছে চীন! - ছবি : সংগৃহীত
লাদাখে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাত এখনও অব্যাহত। তারই মধ্যে পূর্ব ভুটানের একটি জঙ্গলকে কেন্দ্র করে ফের সীমান্ত বিতর্কে জড়ালো চীন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতকে চাপ দিতেই এ কাজ করছে চীন।
ভারতের পর এ বার ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্কে চীন। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতকে চাপে ফেলতেই নতুন এই কৌশল অবলম্বন করছে চীন। এর আগে নেপালের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিতর্কেও তাদের হাত রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য।
অন্য দিকে, গালওয়ান থেকে ভারত ও চীনের সেনা এক কিলোমিটার করে পিছনে গেছে বলে সূত্রের দাবি। তবে প্যাংগং কিংবা ডেপসং অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত চীন কিংবা ভারতের সেনা পিছু হঠেনি। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য ভারতের এনএসএ প্রধান অজিত ডোভালের সঙ্গে চীনের স্পেশাল রিপ্রেসেনটেটিভের বৈঠক হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
ভুটানের উত্তর ও পশ্চিম অংশের সীমান্তে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে একাধিকবার দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছে। বিশেষত ২০১৭ সালে ডোকলামে ভারত ও চীনের সেনার মধ্যে ৭১ দিন স্ট্যান্ড অফ বা মুখোমুখি সংঘাত চলার পরে বিতর্ক আরো বেড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ভুটানের পূর্ব সীমান্ত নিয়েও বিতর্ক তুলেছে চীন। এত দিন যা বিতর্কিত ছিল না।
ঘটনার সূত্রপাত গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটির বৈঠকে। মার্কিন মদতপুষ্ট এই মঞ্চ পরিবেশ বিষয়ক নানা কাজে বিভিন্ন দেশকে সাহায্য করে থাকে। সম্প্রতি সেই বৈঠকে ভুটানের পূর্ব প্রান্তে সাকতেং অভয়ারন্যের জন্য অর্থ দাবি করে। কিন্তু সেই বৈঠকেই চীন ভুটানের এই দাবির বিরুদ্ধে সরব হয়। তাদের পাল্টা দাবি, ওই অভয়ারন্য তাদের ভূখণ্ডের অংশ। ফলে ভুটান তার জন্য অর্থ দাবি করতে পারে না। বৈঠকে চীনের এই দাবিকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে ভুটানের পাশে দাঁড়ায় ভারত। শেষ পর্যন্ত ভুটানের নামে ওই অভয়ারন্যের জন্য অর্থ বরাদ্দও হয়। কিন্তু বৈঠকের বিবরণীতে চীনের বিতর্কটিকেও স্থান দেওয়া হয়।
চীনের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই ভুটানের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বিতর্ক চলছে। সাকতেং অভয়ারন্যও তারই অংশ। কিন্তু বিশেষ কিছু দেশ সেই বিতর্কে ভুটানকে উস্কানি দিচ্ছে। চীনের আঙুল যে ভারতের দিকে, তা স্পষ্ট। ভুটান অবশ্য গোড়া থেকেই দাবি করছে, দেশের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক থাকলেও পূর্ব প্রান্তে কোনো বিতর্ক নেই। শুধু তাই নয়, সাকতেং জঙ্গলের কাছাকাছি এলাকাতেও চীনের সীমান্ত নেই বলে দাবি করেছে ভুটান।
ভুটানে চীনের দূতাবাস নেই। ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে চীনের দূতাবাসের মাধ্যমেই ভুটান চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। ইতিমধ্যেই দিল্লির ভুটান দূতাবাস থেকে চীনের দূতাবাসের কাছে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, চীনের দাবি কোনোভাবেই মানছে না ভুটান। চীনও জানিয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্কে স্থায়ী সমাধান চায় চীন।
গত মে মাসের শেষ পর্ব থেকে লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিতর্ক নতুন চেহারা পায়। ভারত অভিযোগ করে, চীন তাদের সীমান্তের ভিতর ঢুকে এসেছে, স্থায়ী কাঠামো তৈরি করছে। গালওয়ান, প্যাংগং এবং ডেপসং অঞ্চলে বিতর্কিত এলাকায় মৃদু সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে ১৫ জুন রাতে গালওয়ান অঞ্চলে সংঘর্ষ তীব্র আকার নেয়। ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। তার পর থেকে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
এ দিকে এই পর্বেই নেপাল ভারত-নেপাল সীমান্তের কয়েকটি জায়গা নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নিয়ে সংসদে নতুন বিল পাশ করে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, চীনের সমর্থনেই এ কাজ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি। যা নিয়ে দেশের ভিতরেই বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় ওলি সরকারকে। সম্প্রতি ভুটানের ঘটনাতেও আসলে চীন ভারতকেই চাপে ফেলতে চাইছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। তাদের বক্তব্য, ভুটানের সীমান্তে বিতর্ক সৃষ্টি করলে পরোক্ষে তা আসলে ভারতের উপরেই চাপ বাড়াবে। ডোকলামে যে ঘটনা ঘটেছিল। ভুটান সীমান্তে ভারতীয় সেনার বিশেষ ক্যাম্পও আছে।
লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন সংঘাত কোন দিকে যায় তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে ভুটানের এই সাম্প্রতিক বিতর্ক। সূত্র জানাচ্ছে, গালওয়ান অঞ্চলে শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষই এক কিলোমিটার করে সৈন্য সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। গালওয়ান নদীর ধারে চীন যে কাঠামো তৈরি করেছিল, তাও সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এতেই লাদাখ বিতর্ক মিটবে না। ৬ জুন ভারত-চীন বৈঠকেও সেনা সরানোর কথা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে ১৫ জুন রাতের ঘটনা ঘটে। ফলে এ বারও তেমন কিছু ঘটবে না, এই নিশ্চয়তা নেই। দুই পক্ষই সে বিষয়ে সতর্ক।
অন্য দিকে প্যাংগং ও ডেপসংয়ের বিতর্ক আরো গভীর। ওই অঞ্চলে সমস্যার সমাধান না হলে গালওয়ানের সমাধান নেহাতই আই ওয়াশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বস্তুত সে জন্যই দুই দেশ ফের বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব ঠিক থাকলে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল চীনের স্পেশাল রিপ্রেসেনটেটিভের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন। ভারতের দাবি, প্যাংগং লেকের আট নম্বর পয়েন্ট পর্যন্ত তাদের এলাকা। কিন্তু চীন চার নম্বর পয়েন্ট পর্যন্ত সেনা মোতায়েন করে রেখেছে এবং স্থায়ী কাঠামোও তৈরি করে রেখেছে। ডেপসংয়েও পিপি ১১ থেকে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। সেখানেও দুই পক্ষ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। সেই সমস্যার সমাধান না হলে গালওয়ানের সমস্যারও সমাধান হবে না বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
সূত্র : ডয়চে ভেলে