ভারতের বিপরীতে চীন-পাকিস্তানের পরিকল্পনা
ভারতের বিপরীতে চীন-পাকিস্তানের পরিকল্পনা - ছবি : সংগৃহীত
ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা ভারতীয় বিশ্লেষকদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর বাচাল মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি শব্দ এখন চীনের সাথে ভারতের উত্তেজনায় দিল্লির প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৫৯টি চীনা অ্যাপস ভারতের নিষিদ্ধদ করাকে যখন পম্পেইও প্রশংসা করেন, তখন তা পরিণত হয় ভারতপন্থী বিবৃতিতে।
তবে চীনের বিরুদ্ধে বিষোদাগার ও অন্যান্য দেশকে চীনা হাই-টেক জায়ান্ট হুয়েইকে গ্রহণ না করতে বলার বিষয়টি লাদাখ সীমান্তে বর্তমান উত্তেজনা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই চলছে। ভারতের কৌশলগত বিশ্লেষকেরা স্বর্গসুখে থেকে অজানাতেই থাকছেন যে হুইয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিরোধ হলো পারস্পরিক বাজারে প্রবেশের অভাব। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভার্নমেন্টের উইলিয়াম এইচ ওভাহল্ট সম্প্রতি এ কথা লিখেছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে হুয়েই যদি তিনটি প্রধান বাজারের (যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও চীন) সবগুলোতেই প্রবেশের সুযোগ পায় এবং বিদেশী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে চীনা বাজারে পূর্ণ প্রবেশাধিকার না দেয়া হয়, তবে হুয়েই শিগগিরই বৈশ্বিক ৫জি বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করবে। সব বাজারে প্রবেশের ফলে হুয়েই তার প্রধান প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর (এরিকসন ও নকিয়া) সম্মিলিত গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেটের বেশি ব্যয় করেও টিকে থাকতে পারবে। এসব প্রতিদ্বন্দ্বী তখন আর হুওয়ের অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। তাদের আসন্ন অন্যায় ধ্বংস অগ্রহণযোগ্য... হুওয়ের বাজার প্রবেশে প্রত্যাখ্যান করা এখন যথার্থ, তবে ভবিষ্যতের সমাধানের জন্য দরজা অবশ্যই খোলা রাখতে হবে।
আবার পূর্ব চীন সাগরে জাপানের ওকিনাওয়া এলাকার নাম পরিবর্তনের ঘটনায় ভারতীয়রা বেশ উদ্দীপ্ত হয়ে এই ভেবে যে চীনের বিরুদ্ধে জাপান এখন দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলেছে। তারা মনে করছে, এতে করে বেইজিংকে অন্য দিকে মনোযোগ দিতে হবে, পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর থেকে তাদের মনোযোগ কমে যাবে, চাপ হ্রাস পাবে।
এটাও অদ্ভূত অনুমান। কারণ এই নাম পরিবর্তন ঘটেছে, অন্য একটি এলাকার সাথে এর নামের মিল থাকার কারণে। অথচ ভারতীয় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এখন বুঝি চীনের সাথে ভারতের উত্তেজনা শুরু হয়ে যাবে।
এমনকি গত মাসে প্যাসিফিক অঞ্চলে তিনটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করার মার্কিন সিদ্ধান্ত নিয়েও ভারতীয় বিশ্লেষকেরা অদ্ভূত অস্থিরতায় ভুগেছেন। তারা মনে করছেন যে চীনা বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য এসব কাজ করা হয়েছে।একটি সংবাদ মাধ্যম তো মার্কিন বিমানবাহী রণতরীগুলো ঠিক কোথায় আছে, তার প্রতিনিয়ত আপডেট দেয়া শুরু করে দিয়েছে।
এসব রণতরী সরিয়ে নেয়ার কারণ ভিন্ন। এখন পেন্টাগনের প্রধান শত্রু করোনাভাইরাস। তারা যাচ্ছে না, করোনাভাইরাসে তাদের এই মেশিনগুলো অচল হয়ে যাক। গত মার্চে ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্টে করোনা ধরা পড়েছে। এ কারণে তারা রণতরীগুলোকে করোনামুক্ত রাখতে সাগরে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
অবশ্য এসব মহা ভ্রান্তির তুলনায় চীনা স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশির মধ্যে শুক্রবারের (ওই দিনই তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়) টেলিফোন সংলাপে আরো গুরুতর বিপজ্জনক পরিস্থিতি ফুটে ওঠেছে।
ওয়াং ও কোরেশির আলাপে করোনার বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। কোরেশিকে ওয়াং বলেন যে মহামারিটি বিশ্বব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার অভিন্ন স্বার্থে পাকিস্তান ও চীনকে যৌথভাবে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।
চীনা বিবৃতি অনুযায়ী, দুই শীর্ষ কূটনীতিবিদ আঞ্চলিক পরিস্থিতি, কাশ্মির ইস্যু, আফগানিস্তান, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও কোভিড-১৯ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনা, আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্র হওয়া, জম্মু ও কাশ্মিরে বড় ধরনের গোলযোগ অব্যাহত থাকা, ইরানের সাথে চীনের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব চুক্তি ইত্যাদি আঞ্চলিক পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছে। সেইসাথে করোনা মহামারি নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে।
ওয়াং-কোরেশি সংলাপে কি ভারতের বিরুদ্ধে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আসলে চীন এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে করে তাদের পাকিস্তানকে দরকারই নেই। সামরিক ভারসাম্য ব্যাপকভাবে চীনের অনুকূলে। আর ভারতের সাথে যুদ্ধ করার মতো অবস্থায় নেই পাকিস্তানের। কাজেই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানকে টেনে আনা মানে চীনের জন্যই বোঝা বেড়ে যাওয়া।
বরং ওয়াং চান কোভিডের কারণে মন্থর হয়ে পড়া চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের কাজ আবার ত্বরান্বিত করা। পাকিস্তানও আশ্বাস দিয়েছে, তারা কাজটি আগের চেয়ে দ্রুত করে ক্ষতি পুষিয়ে নেবে।
কাজেই পাকিস্তান ও চীন যৌথভাবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবে, এমনটি মনে করা ঠিক হবে না ভারতের জন্য। তাদের আরো অনেক বড় উচ্চাভিলাষ ও অগ্রগতিমূলক এজেন্ডা রয়েছে মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য।
ইন্ডিয়া পাঞ্চলাইন