ইসরাইলের যে পরিকল্পনার বিরোধী খোদ ইসরাইলিরাও

জি. মুনীর | Jul 05, 2020 10:08 pm
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু - ছবি : সংগৃহীত

 

গত জুনের প্রথম সপ্তাহে ইহুদি ও আরবরা যৌথভাবে ইসরাইলের তেল আবিবে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। আর এই সমাবেশ ছিল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ ইসরাইলের সাথে একীভূত করার ইসরাইলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। এই পরিকল্পনা ইসরাইলের ‘অ্যানেক্সেশন প্ল্যান’ নামে সমধিক পরিচিত। তা ছাড়া এ পরিকল্পনার আওতায় ইসরাইল যে ২৩৫টি ইসরাইলি বসতির ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তার বিরুদ্ধেও ছিল এই বিক্ষোভ সমাবেশ। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ২০২০ সালের ১ জুলাই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবেন। ইসরাইলিরা এই পশ্চিম তীরকে তাদের ভবিষ্যৎ ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড অর্থাৎ হার্টল্যান্ড হিসেবে দেখতে চায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ভূখণ্ডে বর্তমানে ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি বসবাস করছে।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সাথে একীভূত করার এই অবৈধ পরিকল্পনার প্রতি এক যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোনো দেশের সমর্থন নেই। পশ্চিম তীরের অবৈধ ইহুদি বসতি ও জর্দান উপত্যকা ইসরাইলের সাথে একীভূত করার ভিত্তি হচ্ছে গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত তথাকথিত ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা’। কিন্তু নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ গত ১ জুলাই শুরু করার কথা থাকলেও তা আপাতত পণ্ড হয়ে গেছে। কারণ তার কোয়ালিশন পার্টনার ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ এটির বাস্তবায়নে আপত্তি তুলেছেন, সেই সাথে তা বাস্তবায়ন শুরু করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনও পায়নি ইসরাইল। অন্য দিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এ কাজ শুরু করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। অবশ্য গত মে মাসে ইসরাইলে এক রেডিও সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘ইসরাইলি সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেÑ কখন ও কিভাবে তারা এই কাজটি সম্পাদন করবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিকল্পনা সমর্থন করলেও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক শীর্ষ নেতাই এর বিরুদ্ধে। ইউএন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, একপক্ষীয়ভাবে এই অঙ্গীভূত করা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার ওপর ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ ও দ্বিদলীয় ব্যবস্থার প্রতি এটি হবে একটি বড় আঘাত। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলেছেন, ইসরাইলের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে দখল করা ভূখণ্ডের মর্যাদা জোর করে পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আর এটি হবে ‘টু-স্টেট সল্যুশন’-এর ওপর একটি দুঃখজনক আঘাত। একইভাবে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব ফিলিস্তিন সঙ্ঘাত সম্পর্কিত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সাথে অঙ্গীভূত করলে তা ‘টু-স্টেট সল্যুশন’-কে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।

এ দিকে সৌদি আরব, মিসর ও আরব আমিরাতসহ কিছু আরব দেশ এ ব্যাপারে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণার বদলে শুধু এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে গত ৩০ এপ্রিল আরব লিগ এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পর এই পরিকল্পনাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত ক্যাভুসগলো বলেছেন, এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়ী শান্তির সব প্রত্যাশা বিনষ্ট করবে। যদি দখলদার শক্তি ইসরাইল রেড লাইন অতিক্রম করে মুসলিম দেশগুলোকে দেখাতে হবে এর পরিণতি ভালো নয়।
রাশিয়া ও চীনও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে তা মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করে তুলবে। ফিলিস্তিনে চীনের রাষ্ট্রদূত গুয়ো উয়ি বলেছেন, তিনি ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেন, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুসালেম।

 এ দিকে গত ১৬ জুন জাতিসঙ্ঘের ৪৭ জন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের এই অ্যানেক্সেশনের কাজ শুরু করার প্রতি নিন্দা জানাতে। বিশেষ করে তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনে ইসরাইলকে প্ররোচিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কার করতে হবে।

এই বিশেষজ্ঞরা তাদের আহ্বানে উল্লেখ করেন, ‘আমরা অনুতাপ প্রকাশ করছি অধিকৃত ফিলিস্তিনের আরো ভূখণ্ড ইসরাইলের অঙ্গীভূত করার অবৈধ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমর্থন ও উৎসাহ জোগানোয় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায়। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অতিশয় উৎসাহ নিয়ে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক মৌল আইন লঙ্ঘনের বিরোধিতা করা।’

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আনুষ্ঠানিক বৈধ ও রাজনৈতিক দায়িত্ব রয়েছে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক বিধিব্যবস্থা, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের মৌলনীতি লঙ্ঘনের বিরোধিতা করা এবং ফিলিস্তিনের ওপর দীর্ঘ দিনের ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসানে পাস হওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করার। কারণ যদি ইসরাইলের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তবে পশ্চিম তীর পরিণত হবে একটি ‘ফিলিস্তিনি বান্টুস্থানে’, যেমনটি বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকায় কালো আফ্রিকানদের গণ্ডিবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল সে দেশটিতে।”

তাদের বক্তব্যের সার কথা হচ্ছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো হয় ও জাতিসঙ্ঘে নানা প্রস্তাব পাস হয়, কিন্তু তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুসালেম ও ১৯৮১ সালে সিরিয়ার গোলান মালভূমি ইসরাইলের সাথে একীভূত করার ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ নিন্দা জানালেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জাতিসঙ্ঘ কিংবা আন্তর্জাতিক সমাজ। তবে এই বিশেষজ্ঞরা তাদের লিখিত আহ্বানে উল্লেখ করেছেন, এবারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভিন্ন কিছু করতে হবে। আন্তর্জাতিক সমাজকে দায়িত্ব নিয়ে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অবসান ঘটাতে হবে ফিলিস্তিনের ওপর এ দীর্ঘ দিনের দখলদারিত্বের।

আসলে এভাবে কোনো ভূখণ্ড দীর্ঘ দিন জোর করে দখলে রাখা আন্তর্জাতিক আইনে গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষজ্ঞদের এ বিবৃতিতে উল্লেখ আছে, রাষ্ট্রগুলোর কর্তব্য হবে, এমন কোনো দেশকে স্বীকৃতি ও যেকোনো ধরনের অবৈধ কাজ সহায়তা না দেয়া। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও অবৈধ ইহুদি বসতির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে এ ধরনের অবৈধ কাজ। এ ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তব শিক্ষা হচ্ছে, কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু সমালোচনা করে ইসরাইলকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে ফেরানো যাবে না। ফিলিস্তিনের ওপর দখলদারিত্বেও অবসানও ঘটানো যাবে না। সুদীর্ঘকালের এই দখলদারিত্বের সময়ে ফিলিস্তিনিদের যাবতীয় মানবাধিকার লঙ্ঘন, আটক ও তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন, চলাচলের ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং এমনকি শিশুদের আটকে রাখার ঘটনা ঘটে চলেছে অবাধে। আলোচ্য অ্যানেক্সেশন প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে ইসরাইলে এসব অপকর্ম আরো বেড়ে যাবে। তখন দেখা যাবে দু’জন মানুষ বাস করছে একই রাষ্ট্রে। তাদের শাসক এক। কিন্তু দু’জনের অধিকারে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আর এটিই হচ্ছে একুশ শতাব্দীর ইসরাইলি বর্ণবাদের নমুনা।

এ দিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক হাজারেরও বেশি পার্লামেন্টারিয়ান এক চিঠিতে দৃঢ়তার সাথে ইসরাইলের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ২৫টি দেশের ১০৮০ জন ইউরোপীয় পার্লামেন্টারিয়ান। এ চিঠি তৈরিতে যারা উদ্যোগ নেন তাদের মধ্যে রয়েছেন চারজন বিখ্যাত ইসরাইলি ব্যক্তিত্ব। এদের মধ্যে আছেন নেসেটের সাবেক স্পিকার আব্রাহাম বার্গ এবং ইসরাইলের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাইকেল বেন-ইয়ার।

এসব আইনপ্রণেতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা নিয়ে। এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চরম পরিণতি ডেকে আনবে উল্লেখ করে তারা বলেছেন, ইউরোপকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ‘অ্যাক্টরদের’ একসাথে আনার ব্যাপারে এবং তাদের কাজ করতে হবে ‘টু-স্টেট’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের অবসানের লক্ষ্য নিয়ে।

 তারা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের উপস্থাপিত ‘ভিশন ফর পিস প্ল্যান’ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘প্যারামিটার ও প্রিন্সিপল’ থেকে বিচ্যুত। এই পরিকল্পনা হচ্ছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর থেকে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা। 

এটি স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ফিলিস্তিনিরা কিছুই পাওয়ার আশা করতে পারে না। ট্রাম্প প্রশাসনই নির্লজ্জের মতো ইসরাইলের যাবতীয় দুষ্কর্মের সহযোগী ও প্ররোচনাদাতা হিসেবে কাজ করে আসছে। সামনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সে নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। তিনি ছিলেন ওবামার আমলের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এখন প্রশ্ন উঠেছে, জো বাইডেন নির্বাচিত হলে তিনিও কি ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে কানে তুলো দিয়ে বসে থাকবেন? অবশ্য তিনি বিশ্বাস করাতে চাইছেন যে, তিনি ইসরাইলের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আই ডু নট সাপোর্ট অ্যানেক্সেশন’। কিন্তু এক মাস আগে বাইডেনের সিনিয়র ফরেন পলিসি অ্যাডভাইজর টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, কোনো অবস্থায়ই, এমনকি পশ্চিম তীর ইসরাইলে একীভূত হলেও জো বাইডেন আমেরিকায় সামরিক সহায়তা কমানো সমর্থন করবেন না।

আমেরিকান নেতারা ইসরাইলি নীতির ব্যাপারে কী মনোভাব গ্রহণ করবেন তার প্রতিফলন রয়েছে সম্প্রতি জো বাইডেনের কাছে পাঠানো ১০০টি গোষ্ঠীর এক চিঠিতে। এই চিঠিতে তারা তাকে বলেছেন, ইসরাইলি সরকার ও ফিলিস্তিনি জনগণ প্রশ্নে তাদের নীতি-অবস্থান স্পষ্ট করতে। যার ভিত্তি হবে সবার জন্য ন্যায়বিচার ও সমতার নীতি। যেসব সংগঠন এই চিঠির প্রতি অনুসমর্থন জানিয়েছেন তাদের মধ্যে আছে আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটি, আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইন, যুদ্ধবিরোধী ও সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ‘কোডপিঙ্ক’, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর), ‘ইফ নট নাউ’ এবং ‘ভয়েস ফর পিস’। এসব গোষ্ঠী মনে করে ইসরাইল বা ফিলিস্তিন প্রশ্নে জো বাইডেনের নীতি হবে বারাক ওবামার মতো, যিনি মাঝে মধ্যেই ইহুদি বসতি ও ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণ করতেন।

এ দিকে জো বাইডেনের অবস্থান দুঃখজনকভাবে স্পষ্ট হয়ে যায় গত ১৮ মে তার ক্যাম্পেইন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘জো বাইডেন অ্যান্ড দ্য জিউইশ কমিউনিটি : অ্যা রেকর্ড অ্যান্ড অ্যা প্ল্যান অব ফ্রেন্ডশিপ, সাপোর্ট অ্যান্ড অ্যাকশন’ শীর্ষক বিবৃতি থেকে। এতে বলা হয়, তিনি রাজনৈতিক কারণে সেসব দেশের ও সংগঠনের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখবেন, যেগুলো ইসরাইলকে বয়কট করে এবং এতে তিনি উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসকেই বেছে নিয়েছে। তখন তার এ বক্তব্যের প্রবল প্রতিবাদের মুখে কয়েক দিনের মধ্যে ‘ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাস বেছে নিয়েছে’ কথাটি এই বিবৃতি থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এই বিবৃতি থেকে যায় ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি বাইডেনের সমর্থনের এক টেস্টামেন্ট হিসেবে।

সে কারণেই উল্লিখিত ১০০টি গোষ্ঠী অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই বাইডেনের কাছে এই চিঠি দিয়েছেন। এ চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সীমাহীন কূটনৈতিক সমর্থন ও ব্যাপক সামরিক অর্থসহায়তা ফিলিস্তিন দখল ধরে রাখতে, অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ, ১৩ বছরব্যাপী অবরোধ আরোপ, গাজা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, সরকারিভাবে অইহুদি ইসরাইলি নাগরিকদের সমানাধিকার লঙ্ঘনমূলক আইন পাস করতে দেশটিকে সাহসী ও সমর্থ করে তুলেছে। আর ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র এসব কিছু করছে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রলেপ দিয়ে।

চিঠিতে তারা ন্যায় ও সমতাভিত্তিক কিছু যৌক্তিক পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টকে। এর মধ্যে আছে সুস্পষ্টভাবে ইসরাইলের পূর্ব জেরুসালেমসহ পশ্চিম তীর দখলের বিরোধিতা করতে হবে; গাজা উপত্যকায় অবৈধ অবরোধ তুলে নিতে হবে; ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা ও যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনে চলাসাপেক্ষে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দিতে হবে; ইসরাইলকে বলতে হবে ‘জিউইশ নেশন স্টেট বেসিক ল’ বাতিল করার জন্য; ইসরাইলের অইহুদি নাগরিকদের জন্য সমানাধিকার বলবৎ করতে হবে; আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকার বাস্তবায়নের প্রতি সমর্থন জানাতে হবে; মার্কিন দূতাবাস পূর্ব জেরুসালেম থেকে তেল আবিবে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রতি ঘোষণা করতে হবে; জেরুসালেমের পূর্ব মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে; ঘোষণা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আনা যুদ্ধাপরাধ মামলা তদন্তে পূর্ণ সহায়তা দিতে হবে; অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ইসরাইলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি বাতিল করতে হবে। জো বাইডেনই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কিংবা অন্য কেউ হন, নির্বাচিত হলে তাকেই এসব কাজ করার প্রতিশ্রুতি ঘোষণার তাগিদ দিয়েই জো বাইডেনের কাছে তাদের এই চিঠি।

অন্য দিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ১২০ জন বিধায়ক ও ৩০ জন সিনেটর একটি চিঠি দিয়েছেন আলোচ্য ইসরাইলি পরিকল্পনার বিরোধিতা করে।

বাস্তবতা হচ্ছে, এই অ্যানেক্সেশন প্ল্যানের ব্যাপারে ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্র এক দিকে আর সারা দুনিয়া এক দিকে। এমনি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বকে উপেক্ষা করে ইসরাইল যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ফেলে, তবে তা হবে ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্ব সমাজের এক চরম পরাজয়। বিশ্বসমাজকে বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us