ভারত কেন টিকটক নিষিদ্ধ করল
ভারত কেন টিকটক নিষিদ্ধ করল - ছবি : সংগৃহীত
ভারত সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে মোবাইল ফোনের ৫৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এগুলো ভারতের অখণ্ডতা ও স্বার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। নয়া দিল্লির প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বেইজিংয়ের নাম নেয়া হয়নি। কিন্তু ৫৯টি অ্যাপের যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেগুলো পরিচালনা করে চীনা কোম্পানি। এতেই বুঝা যায় ইচ্ছাকৃতভাবে চীনকে টার্গেট করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ সফটওয়্যারের মধ্যে ভিডিও-শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকও রয়েছে, যা ভারতে ৬০০ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে; ইউসি ব্রাউজার, এই ইন্টারনেট ব্রাউজারটি খুবই কম ডেটা ব্যবহার করে। ফলে কমদামি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ভারতীয়দের কাছে এটা খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া আছে শেয়ারইট, বাইডু, ওয়েইবু ও উইচ্যাটের মতো অতিপরিচিত অ্যাপ।
ব্যবস্থা গ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে ভারত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৯এ ধারা তুলে ধরে। কিন্তু ভারতীয় আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তটি গোপনীয় রাখা যেতো। চীনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ব্যবস্থা নেয়াটাই আসল কথা। গত মাসে চীনা সেনাদের সঙ্গে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শিকার হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাপক চাপে পড়েছে নয়া দিল্লি। বাণিজ্যের ব্যাপারে এর বিকল্পগুলো সীমিত এবং সম্ভাব্য আত্ম-ঘাতি। সামরিক ব্যবস্থা আরো বিপজ্জনক। ফলে চীনের কারিগরি রফতানি খাতটিই মোক্ষম টার্গেট, এ খাতকেই কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে ভারত।
ভারতের জন্য সোমবারের সিদ্ধান্ত একটি বড় বিষয় হলেও চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি অন্যান্য যেসব দেশ চীনা টেক ফার্মগুলো নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাদের জন্যও এটি একটি নজির হতে পারে।
চীনের উপর প্রভাব। টিকটক ও ইউসি ব্রাউজারের মতো অ্যাপের ক্ষেত্রে ভারত হলো চীনের সবচেয়ে বড় বিদেশী বাজার। চীনা অ্যাপ থেকে ভারতের রাজস্ব আয় সামান্যই। এরপরও ভারতের বাজার ক্রমেই বাড়ছে। ভারতীয়রা যত ধনী হবে মাথাপিছু ব্যবহারকারি থেকে রাজস্ব আয়ও তত বাড়বে। সিএনএন বলছে ভারতের ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী বাজার এ বছর ২৬% বাড়তে পারে। নয়া দিল্লির ব্যবস্থা এই বাজার বন্ধ করে দিয়েছে। চীনা সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের বিরুদ্ধেও তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। বিশেষ করে ৫জি পণ্য। চীনা প্রযুক্তির সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি সম্পর্কে ভারতীয়রা আরো বেশি সচেতন হয়ে উঠছে।
এই সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ে ও জিটিই-কে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে মার্কিন ইন্টারনেট প্রভাইডাররা এসব কোম্পানির সরঞ্জাম কিনতে ফেডারেল ভর্তুকি পাবে না।
ভারতের উপর প্রভাব। নয়া দিল্লির সিদ্ধান্ত ভারতীয়দেরও ক্ষতি করবে। এই উদ্যোগ দেশের যুদ্ধংদেহী মিডিয়াকে হয়তো কিছুটা শান্ত করবে কিন্তু টিকটক নিষিদ্ধ করায় হাজার হাজার ভারতীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা তাদের জীবিকার জন্য চীনা অ্যাপটির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। টিকটকের ভারতীয় বিকল্প রোপোসো এখন নতুন ব্যবহারকারী পাওয়ার আশা করছে। ভারতে আরেকটি জনপ্রিয় ব্রাউজা অ্যাপ হলো ক্রোম। ফলে ইউসি ব্রাউজার নিষিদ্ধ করায় গুগুল লাভবান হতে পারে।
সূত্র : এসএএম