কিন্তু মোদি খামোখা উল্টাপাল্টা সাহস দেখাতে গিয়ে না ডুবে যান, সে শঙ্কাও হাজির
মোদি - ছবি : সংগৃহীত
মোদির আমেরিকার পকেটে হাত ঢুকিয়ে থাকার কাজ-সার্ভিসটা করে দেন মূলত এস জয়শঙ্কর, ভারতের এখনকার বিদেশমন্ত্রী। মোদির সাথে তার এই সম্পর্ক আমেরিকায় রাষ্ট্রদূত থাকার পর তার অবসরে চলে যাওয়ার আগে আগে সেই ২০১৪ সালে। কিন্তু সেটা ছিল মোদির ক্ষমতায় আসারই বছর। মোদি যখন আমেরিকার সাথে সম্পর্ক কীভাবে শুরু করবেন, কোন দিক দিয়ে আগাবেন, এসব দুশ্চিন্তায় বে-দিশা হয়ে ছিলেন, তখন রাষ্ট্রদূত জয়শঙ্করের হোনওয়ার্ক মোদির কাছে খুবই কাজের মনে হয়। সেই থেকে জয়শঙ্কর মোদির ‘আমেরিকান পকেটে হাত ঢুকানো’র বিশেষ দূতের ভূমিকায় আছেন। কারণ, আমেরিকান ডিপ্লোমেটদের কারো কারো সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক দু’পক্ষই খুবই কাজের জিনিস বলে মানতে শুরু করেছিল। আর সেই রাষ্ট্রদূত থেকে জয়শঙ্কর এখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বলা হয়ে থাকে, চাপাবাজি বিষয়ক তার সু অথবা কু পরামর্শে আমেরিকান সেক্রেটারি অব স্টেট পম্পেও আর ট্রাম্প এক চাপাবাজির উদ্যোগ নেয়। মাইক পম্পেও জার্মানি থেকে আমেরিকার সৈন্য স্থানান্তরের কারণগুলোর মধ্যে একটা কারণ হিসেবে ‘চীন-ভারত টেনশন’ কথা কয়টা ঢুকিয়ে দেন। আর তাতেই কিছু ‘পেইড মিডিয়া’ এ নিয়ে হইচই ছড়ানো শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে তামাশার দিকটা হলো, মোদি সরকারের কেউ এ নিয়ে কোথাও কোনো মন্তব্য করেননি। কারণ তারা এই চাপাবাজিটা থেকে কিছু লাভালাভ তুলে নেয়ার চেয়েও বড় টেনশনে আছেন যে, চীন আবার এই মিথ্যা খবরে ক্ষেপে গিয়ে কিছু না করে বসে।
কিন্তু এতে চীনা প্রতিক্রিয়াটা ধরা পড়ে যখন চীনা গ্লোবাল টাইমসে এক প্রফেসর আর্টিকেল লিখে বলেন, ভারতের প্রধান সমস্যা হলো ‘উগ্র জাতিবাদ’। মানে তিনি বলতে চাইছেন মোদি সরকার চীনের বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই করে ফেলবে, সেই করে ফেলবে, বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে, মুখ তোড়া জবাব দেবো, অথবা একমাত্র ৩৬ ইঞ্চি ছাতির মোদি এমন জবাব দিতে পারেন- এ ধরনের উস্কানি দিয়ে ভোটের ইস্যু বানানোতে মোদি এক ওস্তাদÑ অথচ পুরো ব্যাপারটাই বানোয়াট। এতে সমস্যা হলো, যদি কখনো সত্যিকার পরিস্থিতি আসে আর মোদি কিছুই করতে পারেন না অবস্থা, তা হলে মোদি ইজ্জত-সম্মান হারানো এক ভয়ঙ্কর লোক হিসেবে হাজির হয়ে যাবেন। ব্যাপারটা নিয়ে চীন এতই বিরক্ত যে, এবারের বিশ ভারতীয় সেনার বিপরীতে চীনা আহত-নিহতের ফিগারটা কী তা সে একেবারেই প্রকাশ করেনি। যেন মোদির দল এ নিয়ে কোনো নির্বাচনী বীরত্বগাথা তৈরি না করতে পারে।
ঘটনা হলো, মোদিও চীনের বিরক্ত হওয়ার বিষয়টা জানেন। সম্ভবত এজন্যই মোদি স্বীকার করে নিয়ে বললেন যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে কেউ ঢোকেনি। এর উদ্দেশ্য ছিল চীনকে ঠাণ্ডা ও খুশি করা। বরং মনে ওই ধারণা যে এই মোদি উগ্র জাতিবাদী রাজনীতির লোক হিসেবে ভোটের লোভে যেকোনো গল্প বানাতে মিছা মিছা যুদ্ধ লাগিয়ে এই সেই জয় নিয়ে আসছেন বলে কোনো মকারি-যুদ্ধ খাড়া করে ফেলতে পারেন। তাই সত্যিকার ভয় দেখাতে চীন সেনা সমাবেশ করেছে। এর পালটা ভারতও করেছে। তাই সত্যিকার যুদ্ধের মুডে কেউ নেই বলেই মনে হয় যদি না ‘নেশনকে দেখানোর মুডে’ চলে যান মোদি। বিশেষত এই কোভিড ভাইরাসে কাবু হয়ে থাকার কালে।
সম্প্রতি মোদি লাদাখ সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে আবার হম্বিতম্বি। কড়া কথার মধ্যে তিনি চীনকে পরোক্ষে ‘আগ্রাসনবাদী’ বলেছেন। অর্থাৎ নাম না নিয়ে বলেছেন। আবার সেনাদের সামনে বক্তৃতায় ‘ভারত কখনো মাথা নত করেনি। এখানেও করবে না’ ধরনের গা গরম করা কথা বলেছেন। সেনাদের উত্তপ্ত করতে আর মনোবল ধরে রাখতে এমন কথা রাজনৈতিক নেতারা বলেই থাকেন বা বলতেই হয়। মোদি এরপর কিভাবে পদক্ষেপ-আচরণ করেন তা দিয়ে তার কথার অর্থ তৈরি হবে।
কিন্তু চীন ইতোমধ্যেই একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ভারত যেন কোনো স্ট্র্যাটেজিক মিস-ক্যালকুলেশন বা ভুল হিসাব না করে বসে। অর্থাৎ মোদির কথা নেহায়েত কথার কথা হিসাবে থাকাটা ভালোÑ চীন এটা বুঝিয়েছে।
মোদি আরেক তত্ত্ব কথা বলেছেন, দুর্বলরা নাকি শান্তি স্থাপন করতে পারে না। তাই তিনি ‘সাহসী’ হতে বলছেন। কিন্তু কথা হলো, দুর্বলের উল্টোটা হলো সবল হওয়া; কিন্তু মোদি খামোখা উল্টাপাল্টা সাহস দেখাতে গিয়ে না ডুবে যান, সে শঙ্কাও হাজির।
আগামী দিনে মোদি আবার ‘আমাকে কেউ মারে নাই’ ধরনের মেসেজ দিয়ে নিজেকে কারেক্ট করেন কিনা কিংবা কী বলে বসে তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com