জালে পেচিয়ে পড়েছেন মাহাথির!
মাহাথির - ছবি : সংগৃহীত
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে মাহাথির আরেক দফা প্রধানমন্ত্রী হতে চান। কিন্তু আনোয়ার ইব্রাহিমের পিকেআর এতে কোনো সমর্থন এ পর্যন্ত দেয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইয়াসিনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য বিরোধী দলগুলোকে এক জোট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি সাবেক জোটের দলগুলোর সমর্থন পাচ্ছেন। মাহাথির বিশ্বাস করেন বর্তমান সরকারকে ফেলে দিতে যথেষ্ট পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন তার প্রতি রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার পড়ে গেলে পরবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এটাই মালয়শিয়ার রাজনীতিতে মুখ্য।
মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে নতুন কোনো দৃশ্যপট ভেসে উঠছে না, ধূম্রজাল বিস্তৃত হচ্ছে। মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের সরকার কত দিন থাকবে, এক বা দুই বছর? মনে হচ্ছে নেতারা জনগণকে রাজনীতি শেখাচ্ছেন এবং বলছেন, এই তিনজন থেকে একজন প্রধানমন্ত্রী বেছে নাও। আর উত্তপ্ত আবহাওয়ায় মুহিউদ্দিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অনেক, অফুরন্ত। কোনো নির্বাচন ছাড়া বা কারো ইস্তফা দেয়া ছাড়া এই পদে কেউ আসীন হতে পারেন না।
পাকাতান হারাপানের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কলহ এখন এত বেশি যে, ভোটাররা দলের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। মাহাথির নিজেই বলেন, ‘পাকাতান হারাপান বলে এখন কিছু নেই।’ জনগণ মনে করে মাহাথির ও আনোয়ারকে একত্র হয়ে সামনে চলার পথ স্থির করতে হবে। নতুবা এই অস্থিরতা আরো চলবে এবং আমিরাতসহ অন্যান্য বহিঃশক্তি মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করবে। মাহাথির এবং আনোয়ার উভয়ে জনমানুষের পরিচিত ও প্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। উভয়ে মিলে মালয়েশিয়ার হাল ধরবেন এমনই আশা বেশির ভাগ জনগণের। আনোয়ারের সমর্থকরা মনে করেন, আনোয়ার মাহাথিরের চেয়ে কোনো অংশে কম নন। সেটি তিনি প্রমাণ করেছেন বড় বড় রাজনৈতিক গ্রুপ ও দলকে বশ করার মাধ্যমে। যেমন, বারিসন বা পার্ট বারিসন সাবাহ, পিবিবি বা পার্ট পেসাকা ভূমিপুত্র বারসাতু, জিপিএস বা গাবুংগাম পার্টি সারাওয়াক, এমনকি সারাওয়াক গভর্নরও। এসব পার্টি ও নেতার নিজস্ব ভিশন থাকা সত্ত্বেও তারা আনোয়ারকে সমর্থন দিয়েছেন। এসব বিষয়ে ‘ওস্তাদ ব্যক্তিত্ব’ কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি আগেও এসব করে দেখিয়েছেন। আনোয়ার এবার সেটা দেখালেন।
ডা: মাহাথির মানুষকে কাছে টানার এই সময়ে নিজের নির্বাচনী দ্বীপ এলাকায় কোভিড-১৯-এর কারণে যেতে পারছেন না। তবু তার অনেক সিডিউল আছে, দোকানপাট দেখা, পশুর খামারের খবর নেয়া, ছেলে মোখজানি মাহাথিরকে নিয়ে ভুট্টা প্রকল্পের কাজ দেখা, বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে আলাপ আলোচনা করা, প্রিভূমি বারসাতুর লোকজনের সাথে সভা করা, যদিও এই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আবার সে পদের চেষ্টা করা, এই আবর্ত তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। তবে জনগণের কোনো প্রতিবাদ নেই, কেন তিনি তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী হতে চান। মাহাথির মনে করেন, তার কমপক্ষে আরো ছয় মাস সময় দরকার কিছু কাজ গুছিয়ে আনার জন্য যেসব অনাচার করেছেন নাজিব রাজাক এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন, তারপর আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া যায়। তবে কথা হলো, ছয় মাসে এমন কী কাজ করবেন যা মাহাথির ২২ মাসেও সম্পন্ন করতে পারেননি!
পাকাতানের সাথে মাহাথিরের এখন সুসম্পর্ক নেই। প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বস্ত একটি জরিপ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট কোস্ট জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে, মাহাথিরের গ্রহণযোগ্যতার রেটিং মালয়ীদের মাঝে ৩৫ শতাংশ, ভারতীয়দের মাঝে ২৮ শতাংশ এবং চীনাদের কাছে ৩৬ শতাংশ। এর বিপরীতে, মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের রেটিং মালয়ীদের কাছে অভাবনীয় ৯১ শতাংশ, ভারতীয়দের কাছে ৬৫ শতাংশ এবং চীনাদের কাছে ২৫ শতাংশ। এ কারণে মালয়েশিয়া আগাম নির্বাচনের দিকে ধাবিত হতে পারে। নির্বাচন হলে মাহাথির অংশ নেবেন না জানিয়ে দিয়েছেন। এমন অবস্থায় তিনি অন্য কোনো প্রার্থীকে সামনে ঠেলে দিতে পারেন। যেমন, পার্টি বারিসান সাবাহর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাফী আপদাল। পাকাতান হারাপানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য তাকে বাছাই করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে এখন শাফীকে তৃতীয় শক্তির উত্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাহলে কি আনোয়ার ইব্রাহিম পাকাতান কোয়ালিশন থেকে বাদ পড়ে গেলেন? বলা হচ্ছে বর্তমান অচলাবস্থায় নিরপেক্ষ একজনকে পুশ করা হয়েছে। মাহাথিরের কাছের লোকজন বলেন, যদি মাহাথির কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তবে তা আর বদলান না। কিন্তু এবার সব কিছু জালের মতো পেঁচিয়ে গেছে, এই জুলাই মাসে তাঁর বয়স ৯৫ বছর হচ্ছে, তাই অনেকেই তাকে বলছেন অবসর নিতে।