মৃত্যু সম্পর্কে কী বলে ইসলাম

লাশ - ছবি : সংগৃহীত
প্রত্যেক মানুষকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কালামে বলেনÑ ‘প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।’ (সূরা আলে ইমরান-১৮৫) কোন সময় কি অবস্থায় কার মৃত্যু হবে সে সংবাদ একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা লোকমান : ৩৪)
তাই মুমিনের কাজ হলো মৃত্যুর জন্য নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত রাখা। আমাদের সমাজে কেউ যদি ২০-৩০ বছর বয়সে মারা যায় তা হলে আমাদের অনেককে বলতে শোনা যায়, অকালে মৃত্যুবরণ করেছে। প্রত্যেক প্রাণীর জন্য ‘মৃত্যু’ যেমন অনিবার্য, তেমনি তার দিনক্ষণও নির্ধারিত। সেই নির্ধারিত সময়েই তার মৃত্যু হবে। এতে সামান্য এদিক-সেদিক হবে না। তার মৃত্যু সেই সময় মতোই হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা যা তার জন্য নির্ধারিত করেছেন। আমরা কিন্তু ১০০ বছর বয়সে কারো মৃত্যু হলে এ কথা বলি না যে, সে তার নির্ধারিত সময়কালের অধিক হায়াত পেয়েছে। তাই কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে আবেগের বশে অকাল মৃত্যু শব্দ বলা হয়, সেটি বলা যাবে না।
রাজধানীর বুড়িগঙ্গায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় শ্যামবাজার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-পাতাল ভারী হয়ে গেছে। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই এমন অনেক ঘটনা ঘটে এবং অনেক মানুষ নিহত হন। ইসলামের আলোকে এসব দুর্ঘটনায় নিহত ঈমানদার ব্যক্তিরা শহীদের মর্যাদাপ্রাপ্ত হবেন। বাস্তবতা হলোÑ এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করাটা খুব কষ্টকর হয়। যার স্বজন হারান তারাই বোঝেন বিচ্ছেদের যন্ত্রণা।
আমাদের এ কথাও মনে রাখা উচিত, এ জীবন আসল জীবন নয়। দুনিয়ার সুখ-দুঃখ ক্ষণস্থায়ী। যে সবর করবে তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। প্রকৃত মুমিন সে পুরস্কারের আশায় নিজেকে ধৈর্যের চাদরে বেষ্টন করে নেবে। যারা এ ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে, আমাদের প্রাণের প্রিয় নবী এদের ব্যাপারে সুসংবাদ শুনিয়েছেন। হজরত আবু মুসা রা: বর্ণনা করেন; নবীজী সা: বলেছেন, যেসব ব্যক্তি বা যারা দুর্ঘটনায় আপনজন হারিয়েছেন, তারা ধৈর্য ধারণ করুন। এমন বিপদে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য জান্নাতে বায়তুল হামদ নামক একটি ঘর তৈরি রয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০২১)
মৃত্যুর মাধ্যমে বান্দা তার মনিবের পরম সাক্ষাৎ লাভ করে। কুরআন-হাদিসে মৃত্যুকে স্মরণ রাখার তাগিদ বারবার দেয়া হয়েছে। নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অধিক পরিমাণে মৃত্যুকে স্মরণ করো, কেননা মৃত্যু দুনিয়ার স্বাদকে ধ্বংস করে দেয়।’
যারা দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করে তা হলে তাদের জন্য রয়েছে শাহাদতের মর্যাদা। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যেমনÑ ১. প্লেগ বা মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী; ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী; ৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী; ৪. দেয়াল ধসে মৃত্যুবরণকারী ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ।’ (বুখারি হাদিস : ৬৫২)
জাবের রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ছাড়া শহীদ সাতজন। ১. প্লেগে মৃত্যুবরণকারী; ২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী; ৩. আঘাতে মৃত্যুবরণকারী; ৪. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী; ৫. আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী; ৬. কূপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৭. সন্তান প্রসবযন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী নারী।’ (মুয়াত্তা মালেক হাদিস : ৮০২)
আল্লাহ তায়ালা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মৃত্যুর কথা স্মরণ ও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। শেষ বিদায়ে ঈমান লাভের তাওফিক দান করুন। আর শোকাগ্রস্ত পরিবারকে সবরে জামিল দান করুন। আমিন।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর, ঢাকা-১২৩০