ভারতের ভিয়েতনামে ব্রাহ্মস বিক্রির পরিকল্পনা ভণ্ডুল!
ভারতের ভিয়েতনামে ব্রাহ্মস বিক্রির পরিকল্পনা ভণ্ডুল! - ছবি : সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদ দল বিজেপি সরকারের সাম্প্রতিক ৫৯টি চীনা স্মার্টফোন অ্যাপস নিষিদ্ধ করাটা ছিল বিরোধপূর্ণ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) বেইজিংয়ের অব্যাহত সামরিক ঝুঁকি গ্রহণের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ একটি মৃদু জবাব দান।
নয়া দিল্লির সিনিয়র সামরিক বিশ্লেষকেরা বলেন, মে মাসের প্রথম দিক থেকে পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মধ্যে অচলাবস্থায় আরো জোরারো জবাব দেয়া উচিত ছিল। এছাড়া চীনের প্রতিবেশী প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামে ভারতীয় ব্রাহ্মস ও আকাক ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম হস্তান্তরের দীর্ঘ দিনের অপেক্ষমান প্রতিশ্রুতি পূরণ করা দরকার ছিল।
ভারতের সাবেক এক দুই তারকা সেনা অফিসার বলেন, অনেক আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত হ্যানয়ে এই উভয় ক্ষেপণাস্ত্র হস্তান্তরে বলতে গেলে কিছুই করা হয়নি।
তর্জন-গর্জন সত্ত্বেও ভারত সরকার দৃশ্যত বেইজিংয়ের শত্রুদের শক্তি বাড়িয়ে চীনা ড্রাগনকে আরো সমস্যায় ফেলতে আগ্রহী নয়।
বিজেপি সরকার ২০১৪ সাল থেকে হ্যানয়ের সাথে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করা ও ক্রমবর্ধমান হাতে সামরিকবাদী হয়ে ওঠা ২৯২৯ কিলোমিটার পাল্লার জাহাজবিধ্বংসী ব্রাহ্মস ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা নিয়ে আলোচনা করে আসছে।
পরলোকগত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর ২০১৬ সালে জুনে হ্যানয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দীর্ঘ দিনের মিত্রের কাছে ব্রহ্মস হস্তান্তর নিয়ে তার ভিয়েতনামি প্রতিপক্ষ জেনারেল এনগো জুয়ান লিচের সাথে ব্যাপক আলোচনা করেছেন।
আলোচনার মধ্যে ছিল ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নির্দেশনা দিতে হ্যানয়ে একদল ভারতীয় টেকনিশিয়ান মোতায়েন করা।
ওই সময় ভিয়েতনাম থেকে সম্ভাব্য অর্ডার পেয়ে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য হায়দরাবাদে ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ আরো দেশও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু অগ্রগতি হয়েছিল সামান্যই।
রাশিয়ার ৩এম৫৫ ওনিক্স/ইয়াখোন্ত সিস্টেমের আলোকে ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করা হয়। এর নাম রাখা হয় ভারত ও রাশিয়ার দুই নদীর (ব্রহ্মপুত্র ও মস্কোভা) সংমিশ্রণে। ৮.৪ মিটার লম্বা, এয়ার ব্রেথিং ব্রাহ্মস হলো টু-স্টেজ ভেহিক্যাল। এতে আছে সলিড প্রপেল্যান্ট বুস্টার ও লিকুইড প্রপেল্যান্ট রাম-জেট সিস্টেম। এটি জাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব। তবে এর অন্যান্য সংস্করণ মোবাইল, স্থলভিত্তিক প্লাটফর্ম আকারেও রয়েছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ভারতের ডিআরডিও সফলভাবে ব্রাহ্মস-এ বিমান-চালিত ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর মাল্টি রোল রুশ সুখোই সু-৩০এমকেআই জঙ্গি বিমানের জন্য। জুনে ব্যাঙ্গালোরভিত্তিক সেন্টার ফর মিলিটারি এয়ারওর্থিনেস অ্যান্ড সার্টিফিকেশন আনুষ্ঠানিকভঅবে ব্রাহ্মস-এ বহর ছাড়পত্র দেয়। প্রতিষ্ঠানটি এখন ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবমেরিনের জন্য ব্রাহ্মস সংযোজনের কাজে বেশ এগিয়ে গেছে।
সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান ভি কে ভাটিয়া বলেন, চীনকে সংযত রাখার কাজে ভিয়েতনামকে ব্রাহ্মস ও আকাশ প্রদান করাটা কেবল গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত কাজই হতো না, সেইসাথে ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র রফতানির টার্গেট পূরণের কাজ অনেকটাই হয়ে যেত।
ভারত ২০১৬ সালের শেষ দিকে ভিয়েতনামের সাথে আকাশ ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির আলোচনা শুরু করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র জঙ্গিবিমান, হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মতো আকাশের টার্গেটগুলো ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে আঘাত হানতে পারে।
কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় চীন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস সুস্পষ্টভাবে জানায়, চীনকে প্রতিরোধ করার জন্য ভিয়েতনামে ভারতের যেকোনো সামরিক জোরালো সম্পর্ককে চীন ঝামেলাপূর্ণ মনে করে। বেইজিং এটাকে মেনে নেবে না।
পত্রিকাটি ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলে যে ভারত যদি বৈরী আচরণ করে, তবে তাকে বিপুল মূল্য দিতে হবে। এতে প্রচ্ছন্নভাবে অর্থনৈতিক অবরোধ জারির কথা ছিল।
এরপর ভিয়েতনামে ব্রাহ্মস ও আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি নিয়ে কোনো কথা শোনা যায়নি।
ভারত থেমে গেলেও চীন কিন্তু অব্যাহতভাবে পাকিস্তানের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। আবার এলএসির কাছে থাকা চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরকে জোরদার করার জন্য সামরিক সম্ভার হস্তান্তরের কাজটি আরো বেশি করে হচ্ছে। চীন যদি ভারত রুখে দেয়ার জন্য পরজীবী হিসেবে পাকিস্তানকে ব্যবহার করতে পারে, তবে দিল্লি কেন হ্যানয়কে কাজে লাগাতে পারবে না?
সম্ভবত এখন সময় এসেছে বিষয়টি বিবেচনা করার। সম্প্রতি চীনা উপকূলীয় রক্ষীরা পরিকল্পিতভাবে একটি ভিয়েতনামি মাছধরা নৌকা ডুবিয়ে দেয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়েছে।
সম্ভবত সদ্য নিযুক্তি চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের কাছে এর কোনো জবাব আছে। কিংবা হয়তো নেই।
দি ওয়্যার