পাকিস্তান-ইরান নতুন সহযোগিতা
পাকিস্তান ও ইরানের সেনাপ্রধান - ছবি : সংগৃহীত
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ইরান সফর তাদের সম্পর্ক পুনর্জীবিত করতে সহায়তা করেছে। ইরানে আগুনে তিন আফগান উদ্বাস্তের মৃত্যুর পর ওই সম্পর্ক কিছুটা অবনতি হয়েছিল। এক সপ্তাহ আগে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কাবুল সফর করেছিলেন। এতে করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা আগের দুর্বল, তবে ঘনিষ্ঠ হতে থাকা সম্পর্ক আরো জোরদার করে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইরান ও পাকিস্তানের সামরিক প্রধানদের মধ্যে সাম্প্রতিক টেলিফোন সংলাপে উভয় নেতা সীমান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখা ও অভিন্ন সীমান্তে সন্ত্রাসীদের যাতায়াত প্রতিরোগ করতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন।একে অপরের মধ্যে এবং আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর সহযোগিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রতিবেশী দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বেশ সহযোগিতা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি সইয়ের পর বিশ্বাসযোগ্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আফগানিস্তান তিন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সর্ব-আফগান আলোচনার জন্য বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে যুদ্ধ ও সহিংসতা ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস করা দ্রুত প্রয়োজন। আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট উত্তপ্ত অবস্থার কারণে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। অধিকন্তু, ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাও, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা,আফগানিস্তানের শান্তি ও ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
কিন্তু তবুও যৌথ পাকিস্তান-ইরান প্রয়াস কেবল রাজনৈতিক শান্তি আলোচনাই ত্বরান্বিত করবে না, সেইসাথে আফগানিস্তান থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসী হুমকি প্রশমন করবে, ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস করবে।
আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তান ও ইরানের ভূরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংশ্লিষ্টতা দেশটি বোঝার জন্য তাদের অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। উভয় দেশেরই আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশের ওপর প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া উভয় দেশই সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক এবং ইরান-ভারত কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা হ্রাসে সহায়ক হতে পারে। উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য স্থিতিশীল আফগানিস্তান তালেবান ও ইসলামাবাদ- উভয়ের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এই লক্ষ্যৈ যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তিচুক্তি অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে।
ইরান ও পাকিস্তান উভয়েই আফগান মুজাহিদিন বিভিন্ন গ্রুপকে সমর্থন করে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিরোধ করেছিল।যদিও উভয় দেশ সোভিয়েত প্রত্যাহার-পরবর্তী সময়ে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবস্থান নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোকে (যথাক্রমে তালেবান ও নর্দার্ন অ্যালায়েন্স) সমর্থন করে, কিন্তু আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান ও এরপরপর ঘটা ঘটনাপ্রবাহ দুই দেশকে একই অবস্থানে নিয়ে আসে নিজ নিজ স্বার্থেই।
এই প্রেক্ষাপটেই উভয় দেশ আফগান-নেতৃত্বাধীন ও আফগান মালিকানাধীন শান্তিপ্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন দিচ্ছে আফগানিস্তানের সঙ্ঘাত অবসানের জন্য। মজার ব্যাপার হলো, ইরান ও পাকিস্তান উভয়েই সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী আফগান গ্রুপগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নত করেছে। বিশেষ করে তালেবানের সাথে তেহরান আলোচনা করছে, ও শান্তিপ্রক্রিয়ার সময় তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগযোগ রেখেছে। আবার আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর (তিনি ছিলেন সাবেক নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের অন্যতম নেতা) পাকিস্তান ও তালেবানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন উৎসাহজনক বিষয়।
তেহরানও আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সাথে ঘনিষ্ঠ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।কিছু কিছু ক্ষেত্রে গনি এখনো পাকিস্তানের প্রতি সমালোচনামুখর হলেও পাকিস্তান কিন্তু আফগানিস্তানর সব পক্ষের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক।
অবশ্য আফগান বিষয়াদিতে ইরানের যেকোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো উদ্বিগ্ন। তবে চলমান মার্কিন-নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনায় পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আবার তেহরান-ওয়াশিংটন কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ইরানি স্বার্থ দেখাশোনা করছে পাকিস্তান। এদিকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্যও পাকিস্তানকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। এর মাধ্যমেই ভারত-পাকিস্তান-তালেবান জটিল ত্রিভূজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার পথ খুঁজতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
সবশেষে বলা যায়, আপগানিস্তান সমস্যার সমাধানের জন্য পাকিস্তান ও ইরানের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। একটি যৌথ কমিশন গঠন এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন