নিগার জোহর : যেভাবে হলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম নারী লে. জেনারেল
নিগার জোহর - ছবি : সংগৃহীত
ঘুচে গেল রক্ষণশীলতা। লিঙ্গ বৈষম্যের সংকীর্ণ মানসিকতা ঘুচিয়ে দিল ঘরে-বাইরে চাপের মুখে থাকা ইমরান খানের সরকার। মঙ্গলবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে রচিত হলো নয়া ইতিহাস। দেশের সেনাবাহিনীতে প্রথম কোনো মহিলা অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নীত হলেন। নিজের যোগ্যতায় মেজর জেনারেল পদ থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদে উঠে এলেন নিগার জোহর।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতরের (আইএসপিআর) ডিজি মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার টুইট করে নিগার জোহরের ইতিহাস গড়ার কথা জানিয়েছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে নিগার জোহর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মেডিক্যাল কোরের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার সামলাবেন। এই প্রথম কোনো মহিলা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মেডিকেল কোরের প্রধান হলেন। পাক-আফগান সীমান্তের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াবির বাসিন্দা নিগার বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডিতে সামরিক হাসপাতালে কমান্ড্যান্টের দায়িত্বে রয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম মহিলা লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিগারের জন্ম সেনা পরিবারেই। বাবা কর্নেল কাদির ছিলেন পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের অফিসার। কাকা মেজর মোহাম্মদ আমিরও পাক সেনা অফিসার ছিলেন এবং দীর্ঘদিন আইএসআইতে কাটিয়েছেন। আজ থেকে ৩০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা-মা দু’জনেই মারা যান। রাওয়ালপিন্ডির প্রেজেন্টেশন কনভেন্ট গার্লস স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৮৫ সালে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসক হিসেবে পাক সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নিগার। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে তৃতীয় নারী হিসেবে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হওয়ার পরেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন নিগার জোহর। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আমজনতা- সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইতিহাস গড়ে ফেলা প্রমীলা সেনা অফিসারকে। প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) সুপ্রিমো শেহবাজ শরিফ টুইট করেছেন, ‘দেশের মেয়েদের কাছে আদর্শ হয়ে উঠলেন নিগার জোহর। দেশের সব নারী ও মেয়েদের কাছে আজ এই বার্তা স্পষ্ট হলো, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবই সম্ভব।’ সেনেটর শেরি রহমানও প্রথম মহিলা লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিয়েছেন।
সরকারী সহায়তায় পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রথম মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে প্রথম একটি হিন্দু মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের এই দাবি পূরণ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
শ্রী কৃষ্ণ মন্দির কমপ্লেক্সের মধ্যে একটি দাহ করার জায়গা, সফরকারীদের থাকার জায়গা, একটি কমিউনিটি হল এবং একটি পার্কিং স্পেসও থাকবে। এইচ-৯ সেক্টরে ৪ কানাল জায়গা নিয়ে (২,০২৩ বর্গমিটার) এই কমপ্লেক্সটি নির্মিত হচ্ছে।
২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সরকারের সময় এই জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন প্রশাসনিক বাধার কারণে মন্দিরের নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়।
ইসলামাবাদের বাসিন্দা ও রিয়েল স্টেট পেশাজীবী প্রিতম দাস আল জাজিরাকে বলেন, “পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য এটা অনেক বড় একটা পদক্ষেপ”।
দাস বলেন, মন্দির ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ফ্যাসিলিটিগুলোর নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করার কারণে সারা পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে ইসলামাবাদের হিন্দুরা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠির সংখ্যা বাড়ছে বলে এটা খুবই জরুরি ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দাস আরো বলেন, “এই পদক্ষেপটি পাকিস্তান সরকারের ব্যাপারে সারা বিশ্বে একটা ইতিবাচক বার্তা দেবে”।
পাকিস্তানের হিন্দু কাউন্সিলের হিসেব মতে দেশটিতে প্রায় আট মিলিয়ন হিন্দু রয়েছে। ১৯৯৮ সালে সবশেষে সরকারী তথ্য প্রকাশিত হয়। সে সময় হিন্দুদের সংখ্যা ছিল তিন মিলিয়ন। হিন্দুদের অধিকাংশই বাস করে দক্ষিণের সিন্দু প্রদেশে, যে প্রদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত রয়েছে।
২০১৭ সালের শুমারির তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
ইসলামাবাদে প্রায় ৩,০০০ হিন্দু রয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে সরকারী কোন তথ্য নেই।
সরকারি অর্থায়ন
মন্দির ও এটার সাথে সংশ্লিষ্ট ফ্যাসিলিটিগুলো নির্মাণের জন্য ১০০ মিলিয়ন রুপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খানের সরকার। স্থানীয় মিডিয়া ডন এ তথ্য জানিয়েছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এমপিদের সাথে বৃহস্পতিবার এক বৈঠক হয়। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে এই তহবিল ছাড় করার জন্য কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল হক কাদরিকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র : এমইএস