করোনা কখন বিদায় হচ্ছে?
করোনা - ছবি : সংগৃহীত
সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমে একটি পরিভাষা আছে। একে বলে সার্কুলেশন। যারা পত্র-পত্রিকায় লেখেন কিংবা মাঝেমধ্যে টেলিভিশনের টকশোতে হাজির হন বা সরকারি কোনো আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেন অথবা কোনোভাবে ক্যামেরার সামনে কথা বলেনÑ তাদের সম্পর্কে আমরা বলি, তিনি বা তারা সার্কুলেশনে আছেন। এই সার্কুলেশনে থাকা বা মানুষকে জানান দেয়া যে তিনি সক্রিয় আছেন- এটিকে আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ব্যবস্থা বলা যায়। কাউকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সাধারণত জবাব দেন যে, সার্কুলেশনে আছি। আমাদের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সার্কুলেশনে আছেন সম্ভবত ওবায়দুল কাদের। তিনি প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কোনা-না-কোনো ভাষ্য প্রদান করেন। প্রতিদিনই তিনি খবরের কাগজে শিরোনাম হন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। এমন সব বিষয়ে তিনি প্রশ্নের অবতারণা করেন যা সব সময় যে প্রয়োজনীয় এমন মনে হয় না। মনে হয়, তিনি যে আছেন তার অস্তিত্বের কথাই জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েক দিন আগে এমনি একটি ঘটনা ঘটল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এক সংবাদ বুলেটিনে করোনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, আগামী দুই থেকে তিন বছর দেশের মানুষের করোনা থেকে মুক্তি নেই।
তিনি বলেছেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে করোনা বিষয়ে এই মত দিয়েছেন। এর পরদিনই জনাব ওবায়দুল কাদের মিডিয়ায় এর বিরুদ্ধে চরম উষ্মা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সম্পর্কে তিনি বলেন, তার এই বক্তব্য সমন্বয়হীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন। এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকতে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার করোনার স্থায়ীকাল নিয়ে অদূরদর্শী বা কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য জনমনে হতাশা সৃষ্টি করবে। দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এ ধরনের বক্তব্য কারো দেয়া সমীচীন নয় বলেও মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ যখন আগামী দুই এক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে ঠিক তখনই গভীর অনিশ্চয়তার কথা শোনালেন দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। গত ১৮ জুন আকস্মিকভাবেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে হাজির হয়ে মহাপরিচালক ওই কথা বলেন। তিনি বলেন যে, করোনা পরিস্থিতি এক দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। আগামী দুই থেকে তিন বছর বা তারও বেশি সময় এই ভাইরাস সংক্রমণ থাকবে।
তবে সংক্রমণ উচ্চ হারে নাও থাকতে পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তার এ বক্তব্যে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার যখন দিন রাত পরিশ্রম করে মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন এমন বক্তব্য হতাশা সৃষ্টি করতে পারে। করোনার এই সঙ্কটে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অনেকেই দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যেই খুলনায় এক চিকিৎসককে হত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। এ হত্যার তীব্র নিন্দা ও নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। আসলে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের ভবিষ্যৎ কি? স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পরদিনই তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি সময়ের অভাবে স্ক্রিপ্টটি ঠিকমতো দেখতে পারেননি। বিশ্বের কোনো বিশেষজ্ঞই এ পর্যন্ত বলতে পারেননি যে করোনাভাইরাস পৃথিবীতে কতদিন থাকবে। এর আগে যেসব দেশ করোনাভাইরাস মুক্ত বলে ঘোষণা করেছিল সেসব দেশে আবার ছোট আকারে হলেও করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যেমন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্ডেন জেসিন্ডা করোনামুক্ত হওয়ার পর উল্লসিত হয়েছিলেন।
কিন্তু তার কয়েক দিনের মধ্যেই আরো দু’জন নিউজিল্যান্ডে আক্রান্ত হন। একইভাবে চীন অনেক অগেই ঘোষণা করেছিল যে তারা সম্পূর্ণ করোনামুক্ত হতে পেরেছে। এ ঘোষণার বেশ কিছু দিন পর হঠাৎ করেই চীনের বেইজিংয়ে করোনায় আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়। অপর দিকে কোনো কোনো দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা এখনো বেড়ে চলেছে। কোথাও আবার এ সংক্রমণে মৃত্যুর হার বাড়ছে। এরপরও প্রায় সব দেশেই লকডাউন সিস্টেম উপেক্ষা করছে জনগণ। ফলে জোর দিয়ে বলা যায় না যে করোনা পৃথিবী থেকে চলে যাবে এমন পরিস্থিতি এখনই তৈরি হয়েছে। সুতরাং স্বাস্থ্য অধিদফতরেরর মহাপরিচালক যদি বলে থাকেন, আরো সময় লাগবে এতে তিনি কত বড় দোষ করেছেন তা বোঝা মুশকিল। কারণ তিনিও মনে করেছেন এ ভাইরাস দূর হতে সময় লাগবে।
বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে এক কাতারে দাঁড় করানো উচিত হবে না। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে করোনা টেস্ট করা, লকডাউন পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কারণে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন পরিস্থিতি প্রথম থেকেই সৃষ্টি করা যায়নি। আমাদের দেশে দেখা গেছে, লকডাউন ঘোষণা করা হলে সেটা ভাঙাই যেন সাধারণ মানুষের ব্রত হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তা কঠোরভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয় না। প্রথম থেকেই বাংলাদেশের মতো করোনা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা উন্নত বিশ্বে দেখা যায়নি। প্রথম থেকেই বলা হয়েছিল, টেস্টের মাধ্যমে করোনা আক্রান্তদের পৃথক করতে হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এটা করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কেননা এ দেশের সমাজ বাস্তবতা অন্য দেশের সাথে মিলালে চলবে না। এখানে কোটি কোটি মানুষ দিন আনে দিন খায়। কিন্তু লকডাউনের পর তাদের কাজ হারিয়ে গেল, রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেল। এ অবস্থায় তাদের সামনে আর কোনো পথ থাকল না। ফলে সামাজিক দূরত্বের বিধানটি মেনে চলাও সম্ভব ছিল না।
এ অবস্থায় দেখা গেল যে, জীবিকার তাকিদে সব নিয়ম উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে পড়ল। এটিই বিপজ্জনক দিকের একটি। অন্য দিকে বিভিন্ন দেশ বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল যাতে অন্য দেশ থেকে করোনা নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু আমরা দেখলাম বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশীরা ফেরত আসছে, তখন তাদের বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এই বাস্তবায়ন করতে না পারায় করোনা আক্রান্তরা নিজ গ্রামে গেছে এবং সেখানে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ বিস্তার করেছে। এভাবেই দেশব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। শুরুতেই করোনা আক্রান্তদের পৃথক করার পরিবর্তে তাদের অবাধে চলাফেরার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই আবার গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কারখানার শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যখন ঢাকা এলেন ঠিক তখন আবার ঘোষণা দেয়া হলো যে, কারখানা খোলা হবে না। তোমরা যার যার অবস্থানে ফিরে যাও। এভাবে বিপুল মানুষ একজনের মাধ্যমে আরেকজন সংক্রমিত হলো।
এভাবে বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েই যাচ্ছে। এখনো সরকার এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমানতা অব্যাহত রয়েছে। কোনো কিছুর ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত যেন গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এখন যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। কমসংখ্যক জনবল নিয়ে হলেও অফিসগুলো চলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন ধরা যাক ব্যাংকগুলো যদি তিন ঘণ্টা চলে তাহলে ওই ব্যাংকের গ্রাহকরা ওই তিন ঘণ্টার মধ্যে সবাই গিয়ে হাজির হবে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন কাজ হবে। এ বিষয়গুলো সুপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা কোনোভাবেই দাবি করা যাবে না।
এদিকে সামনে কোরবানি। সরকারেরর মধ্যে আলোচনা দেখছি পশুর হাট কোথায় বসবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব বলছি বটে, কিন্তু কোরবানির পশুর হাট বসবে এ কথা শোনার পরেই দেখলাম মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। যদি পশুর হাট বসানো হয়, তবে শুধু এখান থেকেই লাখ লাখ মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন যে অবস্থায় আছে করোনা সংক্রমণ তা আরো বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে পড়বে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, অনেকের করোনার উপসর্গ দেখা দিলে বা আক্রান্ত হলেও তা প্রকাশ করে না কিংবা তা পরীক্ষা করতে যাচ্ছে না। এতে করে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা গেল একটি ভবনে দশটি ফ্ল্যাটে বাসিন্দা রয়েছে। সেখানে কোনো এক ফ্ল্যাটের একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তাতে বলা যায় তার পুরো পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। তাদের সংস্পর্শ পেলে পুরো ভবনের লোক আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু প্রত্যেকেই বিষয়টি গোপন রাখছে। যতক্ষণ না জীবন সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে ততক্ষণ প্রকাশ করছে না কেউ। ফলে প্রথম দিকের মতো করোনা আক্রান্তের ভবনে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া বা সেটি লকডাউন করা এখন সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এটা এত বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে যে করোনা রোধে যে সচেতনতা দরকার তার লেভেলটা আর রাখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
এই যে গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করতে যাচ্ছে এর পেছনে সরকারদলীয় লোকদের বাণিজ্যের বিষয়টিও রয়েছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা যখন কথা বলেন; তখন তারা এ প্রসঙ্গটি টানেন না যে, এর পেছনে বাণিজ্যটা কী। শহরগুলোতে যতগুলো হাট বসবে তার সবগুলোই আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের ছোট-বড় নেতা দখলে নেবেন। ইতোমধ্যেই দেখা গেছে, করোনা বাণিজ্য একটি মারাত্মক বিধ্বংসী বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। কিট আমদানির ব্যাপারে বলা হচ্ছে, আমদানিকারকরা যথাযথভাবে সরবরাহ করছেন না। যাতে এগুলোর চাহিদা বেশি সৃষ্টি হয় এবং অধিক দামে বিক্রি করা যায়।
এ কথা আওয়ামী লীগের এমপিরা বলছেন যে, কিট ও আইসিইউ নিয়ে কারবার চলছে। করোনা আক্রান্তদের ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে তারা বলেন, মিটফোর্র্ড নিয়ে যান, সেখানে নিয়ে গেলে তারা বলেন অন্য কোথাও নিয়ে যান। মানুষের এই ভোগান্তির ফলে অনেক সময় দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সেই অনেকে মৃত্যুবরণ করছে। এর মধ্যে আবার বেসরকারি হাসপাতালগুলোও বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। যারা আধা ঘণ্টার অক্সিজেনের বিল ৮৬ হাজার টাকা করেছে। ডাক্তার হাজিরই হননি অথচ তার বিল ৫০ হাজার টাকা করেছে। ফলে এসব হাসপাতালে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা দুষ্কর হয়ে গেছে। করোনা রোগীদের যারা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছে তারাও আক্রান্ত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে সরকারদলীয় নেতারা বা ওবায়দুল কাদের কি নিশ্চিত করে বলতে পারেন ১ জুলাই বা আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে কোনো করোনা থাকবে না। সুতরাং স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি বলেই থাকেন যে করোনা পুরোপুরি দূর হতে দুই বা তিন বছর লাগতে পারে সেখানে তিনি খুব বেশি কিছু বলেছেনÑ এমন নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারাও বলেছেন, করোনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবেই। ফলে আমরা বলি যে, করোনা নিয়ে যেন নিজেরাই পানি ঘোলা না করি।
এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয়, সব কিছুতেই বলতে শোনা যাচ্ছে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, করোনা নির্মূলে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ পুরোটা দুর্নীতিগ্রস্ত। সেখানে ওবায়দুল কাদের কিভাবে জোর গলায় বলতে পারেন, স্বাস্থ্য বিভাগের ওই কর্মকর্তা এ ধরনের কথা বলে সাংঘাতিক খারাপ কাজ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে যদি বাণিজ্য রোধ করা যেত, করোনা আক্রান্তদের আলাদা করা যেত, টেস্ট বাড়িয়ে দেয়া যেত, তবে একটু জোর দিয়ে বলা যেত যে আমরা এতদিনের মধ্য করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারব। কিন্তু এসবের কিছুই করা যায়নি।
এরই মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা টেস্টের জন্য একটি কিট আবিষ্কার করে। সে কিট বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে বলেও প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনে এসে সেটি নাকচ হয়ে গেল। আবার জানা গেল, এটি নাকচ করা হলেও একই ধরনের কিট আমদানির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আবার সেই কিটও যদি পরীক্ষা করতে দুই মাস লেগে যায় তবে এর মধ্যে আরো বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে। ফলে দেখা যাচ্ছে, আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না যে এই সময়ের মধ্যে করোনা থেকে আমরা মুক্তি পাবো।
এ মুহূর্তে আমাদের দাবি, করোনা রোগীদের সম্পূর্ণ আইসোলেশনে নেয়া হোক। এখন মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ জীবন জীবিকার প্রশ্ন আছে। প্রকৃতপক্ষে যেহেতু সরকার প্রথমে সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি, সেহেতু সরকারের এখন দায়িত্ব ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা টেস্ট করা। কখনো দেখা যায় করোনার টেস্টেও রেজাল্ট পেতে ১৫ দিনও লেগে যাচ্ছে। নেগেটিভ সার্টিফিকেট না পাওয়া পর্যন্ত একজন হার্টের রোগীকেও কোনো হাসপাতাল ভর্তি করছে না। এ অবস্থা বিবেচনায় সরকারের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। আবার পিসিআর পরীক্ষায়ও আজ নেগেটিভ আসছে তো কাল পজেটিভ আসছে। শত ভাগ নিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামগুলোতেও তল্লাশি চালিয়ে করোনা রোগী পরীক্ষা করতে হবে। তা না হলে শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তাকে ধমক দিয়ে এর সমাধান করা যাবে না। আমরা কখনোই দিনক্ষণ বেঁধে বলতে পারব না যে করোনা এই তারিখের মধ্যে চলে যাবে।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com