৩ দিন জ্বর না এলেই নেগেটিভ!
৩ দিন জ্বর না এলেই নেগেটিভ! - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তি চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর তার আর টেস্ট করার দরকার হবে না-এমন গাইডলাইন চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগকে দিয়েছেন আইইডিসিআরের গবেষকরা। নতুন এই গাইডলাইন শিগগিরই কার্যকর হবে বলে আশা করছেন তারা।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা: মুশতাক হোসেন বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি পজিটিভ শনাক্ত হবে সে আইসোলেশনে থাকবে এবং জ্বর চলে গেলেও এবং তিন দিন প্যারাসিটামল না খাওয়ার পরও তার জ্বর না থাকলে, সে সুস্থ বলে গণ্য হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে কোনো ব্যক্তি পজিটিভ শনাক্ত হবার পর সুস্থ হয়ে উঠলে, তাকে নেগেটিভ হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের তারিখ থেকে মোট ১৩ দিন পর্যন্ত হিসাবে গণ্য করা হবে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হিসাব হবে ১৪ দিনের বলে নতুন গাইডলাইনে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ডা: মুশতাক হোসেন জানাচ্ছেন, এর অর্থ পজিটিভ শনাক্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহের তারিখ থেকে তাকে নেগেটিভ বলে পরিগণিত করা হবে ১৪ দিন পর।
"যেসব দেশের সক্ষমতা আছে তারা দুটি টেস্ট করাতে পারে কিন্তু আমরা যে খসড়া তৈরি করেছি, তাতে ১৪ দিনের কথা বলা হয়েছে। এর পর সুস্থ হওয়া ব্যক্তিকে নেগেটিভ হিসেবে গণনা করা হবে," বলছিলেন মুশতাক হোসেন।
তবে কারোর জ্বর যদি ১৪ বা ১৫ দিনের মাথায় সেরে যায় তাহলে তারপরের তিন দিন যদি প্যারাসিটামল ছাড়া জ্বর না আসে তাহলে তখন থেকে অর্থাৎ ১৭/১৮ দিন থেকে তিনি সুস্থ বলে গণ্য হবেন।
করোনা সংক্রমণের পর থেকে উপদেষ্টা হিসেবে আইইডিসিআরের সাথে কাজ করছেন ডা. মুশতাক হোসেন।
ওদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্রও এটি নিশ্চিত করেছে যে বাংলাদেশে এখন কোনো ব্যক্তি পজিটিভ হলে চিকিৎসা নেয়ার পর দুটি আরটি পিসিআর পরীক্ষায় যে নেগেটিভ ফল আসতে হতো, সেটি আগামীতে আর করা হবে না।
তবে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়নি।
যদিও ডা. মুশতাক হোসেন বলছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এটি ওয়েবসাইটে দেয়া হবে বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি বলেন, উপসর্গ দেখা দিলে রোগী আইসোলেশনে থাকবেন বা প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হবেন। এরপর সুস্থ হওয়ার পর তার আর কোনো টেস্টের প্রয়োজন নেই।
জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিবেন
মুশতাক হোসেন বলছেন যেসব রোগী জটিল অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের টেস্ট করা বা না করার পুরো বিষয়টি সম্পর্কে হাসপাতাল ও চিকিৎসক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হওয়ার পরেও টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে এবং তা নিয়ে রোগী ও হাসপাতালের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে।
"মনে রাখতে হবে অনেক সময় ডেড ভাইরাসের কারণেও রোগীকে পজিটিভ দেখাতে পারে টেস্টে। সেক্ষেত্রে জ্বর থাকলে তাকে আইসোলেশনেই থাকতে হবে। তবে তার মধ্যে থাকা এই ভাইরাস অন্যদের সংক্রমিত করবে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই। ফলে নতুন করে টেস্টের প্রয়োজন নেই"।
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রের শর্ত হিসেবে গাইডলাইনে কি ছিলো
স্বাস্থ্য বিভাগের কোভিড-১৯ কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে আগে কিছু শর্তের কথা বলা হয়েছিলো।
এসব শর্ত গুলো হলো :
১. জ্বর সেরে গেলে
২. শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ/ সমস্যা জনিত উপসর্গ যেমন শুষ্ক কাশি/ কফ, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা -এগুলোর উন্নতি হলে
৩. ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর দুটি আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে
৪. তবে দুটি আরটি-পিসিআর সম্ভব না হলে প্রথম দুটি মানদণ্ড দুটি তিন দিন অব্যাহত থাকলে ছাড়পত্র দেয়া যাবে
৫. হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও রোগীকে বাসায় বা অন্য কোথাও আইসোলেশনের নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং ছাড়পত্র পাওয়ার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৪ দিন সেখানেই অবস্থান করতে হবে।
পরবর্তীতে সম্ভব হলে বাসায় থাকা অবস্থায় অথবা মনোনীত/নির্দেশিত জায়গায় উপস্থিত হয়ে রোগীর আরটি-পিসিআর পরীক্ষা জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা দেয়া যেতে পারে।
তবে এখন সেই নীতিমালা থেকে সরে আসছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যাতে সুস্থ হওয়ার পর আর কোনো পরীক্ষার সুযোগ থাকবে না।
টেস্ট কিটের সংকটের কারণেই এমন গাইডলাইন?
গত কিছুদিন ধরে ল্যাবরেটরি এবং টেস্টিং কিটের ঘাটতি দেখা দেয়ায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
দেশটিতে সংক্রমণের উচ্চহারের মুখে ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেটের কথা বলা হলেও এখন ১৬ বা ১৭ হাজারের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, কিট নয়, ল্যাবরেটরির অভাবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে জট লেগে যাচ্ছে।
যদিও কর্মকর্তারা বলছেন একদিনে যেমন নমুনা পরীক্ষার পর অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করছেন অন্যদিকে একজনের একাধিক পরীক্ষা করাতে গিয়ে অনেক কিটের অপপ্রয়োগ হচ্ছে।
এখন পজিটিভ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্ট না করালে অনেক কিট সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২৯ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা ৫৭ হাজার ৭৮০ জন। এবং বর্তমান গাইডলাইন অনুযায়ী এদের সবাইকেই সুস্থ হওয়ার ছাড়পত্র পেতে দু বার করে নেগেটিভ রিপোর্ট পেতে হয়েছে।
নতুন গাইডলাইন কার্যকর হলে ভবিষ্যতে সুস্থ হওয়ার পরে আর টেস্ট করাতে হবে না, ফলে কিট যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি নমুনা পরীক্ষার চাপও কমবে বলে মনে করছেন ডা. মুশতাক হোসেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা অবশ্য গাইডলাইনটি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সূত্র : বিবিসি