ছাড় দিতে গড়িমশি ভারতের, তাই চীনের কাছে শ্রীলঙ্কা!
রাজাপাকসা ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত
বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখার জন্য ভারতের কাছে শ্রীলঙ্কার অনুরোধটি ‘বিবেচনাধীন রয়েছে’ বলে কর্মকর্তারা জানালেও গত চার মাসের বেশি সময় ধরে কোনো অগ্রগতি হয়নি। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজপাকসা ব্যক্তিগভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বলা হয়, শনিবার রাজাপাকসা জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে নতুন করে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এসময় ভারতসহ ঋণ অংশীদারদের কাছে তার আবেদনেরও পুনরাবৃত্তি করেন।
৯৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণ
দিল্লি ও কলম্বোর কর্মকর্তাদের মতে, ভারত থেকে শ্রীলঙ্কার নেয়া মোট ৯৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জানান, এই ইস্যুতে আরো আলোচনার জন্য দিল্লি ও কলম্বোর কর্মকর্তারা ভার্চুয়াল সভার প্রস্তাব করছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি, তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় এক কর্মকর্তা দি হিন্দুকে বলেন, আলোচনা কখন হতে পারে, সে ব্যাপারে শ্রীলঙ্কা এখনো কোনো কথা বলেনি।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা ইউরোপিয়ান সাংবাদিকদের একটি দলকে বলেন, নতুন ঋণের চেয়ে তার দেশের প্রয়োজন নতুন বিনিয়োগ। তিনি ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখার আবেদন জানান। করোনাভাইরাস বিস্তৃতির সময় মার্চ ও এপ্রিলেও তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি একই আবেদন জানিয়েছিলেন।
শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক রিজার্ভ করোনার আগেই খারাপ অবস্থায় ছিল। করোনার পর রফতানি হ্রাস পাওয়া, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে আরো খারাপ হয়ে যায়।
শ্রীলঙ্কাকে চলতি বছর ২.৯ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে এ পর্যন্ত তারা ভারতের কাছে মোট তিনবার অনুরোধ করেছে।
চীনের দিকে ঝুঁকেছে শ্রীলঙ্কা
অন্যান্য স্থান থেকে সম্ভাবনা হ্রাস পাওয়ায় শ্রীলঙ্কা সরকার সম্ভবত আবারো সহায়তার জন্য চীনের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে। ২০১৪ সালেও তারা এমনটি করেছিল। তবে চীনের কাছে যাওয়াটা নয়া দিল্লির কাছে কাঙ্ক্ষিত হবে বলে মনে হয় না। গত ১৩ মে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার মধ্যে আলাপের পর বেইজিং ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তার জন্য।
এ ব্যাপারে কলম্বোতে চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, দুই দেশ বিভিন্ন চ্যানেল ও ব্যবস্থার মাধ্যমে একসাথে কাজ করছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে, তখনো করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা দেয়নি, ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসা ঋণ স্থগিত রাখার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। দি হিন্দুর সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি বিষয়টি নিশ্চিতও করেছিলেন।
এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশও ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছে। শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার সাথে মহামারির ক্ষতি হ্রাস করার জন্য ঋণ স্থগিত রাখার বৈশ্বিক উদ্যোগ যৌথভাবে গ্রহণ করা নিয়ে আলোচনা করেন।
মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট সলিহর সরকার দ্বিপক্ষীয় অংশীদার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।
সরকারি সূত্র মতে, মালদ্বীপে ভারতের কাছ থেকে ঋণ খুবই কম। বরং চীনের কাছ থেকে তার বড় ঋণ গ্রহণ করেছে। এদিকে চীন ঋণ পরিশোধের চাপ হ্রাস করেছে। এক খবরে প্রকাশ চলতি বছর চীনকে মালদ্বীপের পরিশোধ করার কথা ১০০ মিলিয়ন ডলার। চীন তা হ্রাস করে করেছে ৭৫ মিলিয়ন ডলার। এই ঘটনাটি নয়া দিল্লি বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখেছে।
দি হিন্দু