ভুটান কেন ভারতে পানি বন্ধ করল?
ভুটান কেন ভারতে পানি বন্ধ করল? - ছবি : সংগৃহীত
উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের বাকসা জেলার, ভুটান সীমান্তের লাগোয়া, পানি না পেয়ে হাজার হাজার চাষি চলতি মাসে বিক্ষোভ করেন। তারা অভিযোগ করেন, ভুটান আন্তঃসীমান্ত নদী কালনন্দীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় তারা চাষাবাদ করতে পারছেন না।
স্বাভাবিক বছরগুলোতে কৃষকেরা বর্ষা মওসুমের আগেই উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে ভুটানে প্রবেশ করে খালগুলো সংস্কার করে ফেলে। কিন্তু এবার কোভিড-১৯-এর কারণে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ভুটান। ভুটানি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা নিজেরাই এবার খালগুলো মেরামত করছেন।
স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, দং নামে পরিচিত খালগুলোর পানি আটকিয়ে দিয়েছে ভুটান।
ভুটান ভারত মৈত্রী সমিতির সহ-সভাপতি গেলেফু চাপ্টার বলেন, এর চেয়ে অসত্য আর কিছুই হতে পারে না। আমরা কেন পাহাড়ি পানি আটকাতে যাব। বাকসার কৃষকেরা এসে খালগুলো সংস্কার করে যায়। কিন্তু কোভিড-১৯-সম্পর্কিত প্রোটোকলের কারণে ভুটান এবার কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এসব কৃষক আমাদের তৎপরতা সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা না করেই মনে করছে যে আমরা ইচ্ছা করে পানি বন্ধ করে দিয়েছি।
বিক্ষোভ আয়োজনকারী স্থানীয় সমিতির সদস্য সেওলি বোরগিরি ইস্ট মজো নিউজ সাইটকে বলেন, ভারতীয় অংশের ধান ক্ষেতে পানি দিতে প্রতি বছর কৃষকেরা ভুটানের সম্প্রদ জংকার জেলায় প্রবেশ করে খালগুলো সংস্কার করে। কিন্তু এবার কোভিড-১৯-এর কারণে ভুটান কর্তৃপক্ষ ভারতীয় কৃষকদের প্রবেশ করতে দেয়নি। এ কারণে গত ৫ দিন ধরে দংগুলো দিয়ে পানি আসেনি। আমাদের পানি দরকার। তা না হলে আমরা চাষাবাদ করতে পারব না।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে জংকার এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে তিন মাস ধরে ভারতে আমাদের বন্ধুদের জন্য সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বর্ষাকাল পাহাড়ি ঢলে আমাদের সব চেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি নেমে এলেই খানগুলো মেরামত করতে দেয়া কাদা আর পাথরের প্রাচীরগুলো ভেসে যায়।
আসামের কোকরাঝর শহরের কাছে এনজিওতে কর্মরত দহল নারজারি এই মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন। এসব কৃষক কেন বিক্ষোভ করছে, তা বোঝা যায়। বৃষ্টির কারণে খালগুলো সংস্কার করা যাচ্ছে না। কৃষকদের বিষয়টি বোঝা উচিত। আর কৃষকদের অসুবিধার কথা শুনে খালগুলো মেরামতের নতুন উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।
দং ব্যবস্থা
ভুটান সীমান্তের আসামের এই এলাকায় বসবাসকারী বেশির ভাগ লোকই বোরো সম্প্রদায়ের। তারা রাজ্যের সবচেয়ে আগে বসবাস করছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তারা দং-জাম্ফাই নামে পরিচিত সামাজিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা সেচব্যবস্থা চালু রেখেছে। তারা বিভিন্ন নদীতে খাল খনন করে পানি ভুটান থেকে আসামে তাদের ধান ক্ষেতে নিয়ে আসে।
প্রধান প্রধান খালের প্রশস্ততা সাধারণ ৭-১২ ফুট হয়। আর শাখা খালগুলো প্রশস্ততা হয় ৩-৫ ফুট। তবে প্রতিটি খাল বা দং হয় খুবই দীর্ঘ। বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে বড় দংয়ের দৈর্ঘ ১০ কিলোমিটার। তবে সাধারণত এগুলোর দৈর্ঘ হয় ২ থেকে ৫ কিলোমিটার। এগুরোর মাধ্যমেই তারা তাদের ধান ক্ষেত্রে সেচের ব্যবস্থা করে।
দং-বাঁধ নামে পরিচিত সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এসব খালের তদারকি করা হয়ে থাকে। বোড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের চারটি জেলা- কোকরাঝারা, বাকসা, উদালগুরি ও চিরাংয়ে দং তদারকির কাজ করে থাকে।
দং মেরামত ও বন্যার পূর্বাভাসের ব্যাপারে ভুটান ও আসামের লোকজনের মধ্যে সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।এই সহযোগিতা নিয়ে গ্রামবাসী, এনজিও ও স্থানীয় প্রশাসন বেশ গর্বিত।
এমন ইতিহাস সত্ত্বেও বাসকা জেলার কৃষকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়। বোড়োল্যান্ডে নির্বাচন আসন্ন। এমন প্রেক্ষাপটেই তা করা হয়। আর ভুটানি কর্মকর্তারা সমস্যাটির কথা জানামাত্র সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, পানিপ্রবাহ অব্যাহত রাখে।
দি থার্ড পোল