করোনার সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ!

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jun 26, 2020 03:59 pm
ডেক্সামেথাসোন

ডেক্সামেথাসোন - ছবি : সংগৃহীত

 

ডেক্সামেথাসোন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ওষুধটিই করোনার চিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থদের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম। মূলত করোনায় আক্রান্ত যেসব রোগীর ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, সেই সব রোগীদের জীবন বাঁচাতে ডেক্সামেথাসোন অত্যন্ত কার্যকর বলে দেখা গেছে। এটা এক ধরনের স্টেরয়েড। তবে মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের জন্য এই ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই গবেষণাটি চালিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ২ হাজার করোনা রোগীর দেহে ডেক্সামেথাসোন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। তা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশে কমে আসে। আর যেসব রোগীদের অক্সিজেন গ্রহণের প্রয়োজন হয়, সেসব রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি ২৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে কমে আসে।

গবেষকেরা বলছেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন নেওয়া রোগীদের ফলের সঙ্গে ওই ওষুধ না নেওয়া ৪ হাজার রোগীর অবস্থা মিলিয়ে দেখা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের দেহে এই ওষুধটি এরই মধ্যে প্রয়োগ করা হচ্ছে। দেখা গেছে, রোগীর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে, তখন যেসব ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তা থামাতে ডেক্সামেথাসোন কার্যকর ভূমিকা রাখে। মানুষের দেহে যখন এই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে, তখন তাকে বলে সাইটোকাইন স্টর্ম। এটি রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ডেক্সামেথাসোন এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ২০ জন করোনারোগীর মধ্যে ১৯ জনেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। আবার যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের মধ্যেও অধিকাংশই সুস্থ হয়ে যান। তবে কারও কারও অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন সুবিধার প্রয়োজন হয়। এই উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই উপকারী হিসেবে পাওয়া গেছে ডেক্সামেথাসোনের নাম।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা দলের প্রধান অনুসন্ধানকারী ও অধ্যাপক পিটার হরবি বলেন, ‘এটাই একমাত্র ওষুধ, যার প্রয়োগে মৃত্যুহার কমতে দেখা গেছে এবং সত্যিকার অর্থেই বেশ ভালো পরিমাণে কমে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।’
প্রধান গবেষক ও অধ্যাপক মার্টিন ল্যানড্রে বলছেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতি ৮ জন রোগী যাদের ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয় তাদের মধ্যে একজনের জীবন বাঁচাতে পারে ডেক্সামেথাসোন। আর অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এমন প্রতি ২০ থেকে ২৫ জন রোগীদের ক্ষেত্রে একজন রোগীর জীবন বাঁচানো যায়।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন খুব একটা কার্যকর নয়। অর্থাৎ যেসব করোনারোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় না, তাদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন প্রয়োজন নেই।
ডেক্সামেথাসোন বেশ পরিচিত একটি ওষুধ এবং দামেও অত্যন্ত সস্তা। সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে প্রতিদিনের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারের খরচ প্রায় সাড়ে পাঁচ পাউন্ড। দশ দিন পর্যন্ত ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ করার কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, করোনা মহামারির শুরুতে এই ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে অন্তত ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যেত।
কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের জরুরি চিকিৎসা হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইনের ব্যবহারের অনুমোদন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

করোনার চিকিৎসা হিসেবে প্রায়ই এই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি তিনি নিজে করোনার প্রতিষেধক হিসেবে নিয়মিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওধুষ খাচ্ছেন বলে দাবি করেন। তবে এফডিএ এবার এই অসুধ ব্যবহারের অনুমোদন বাতিল করল।
গত সোমবার এফডিএ তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানান, এ বিষয়ে বর্তমান গবেষণা পর্যালোচনা করে এফডিএ স্থির করেছে যে ওষুধগুলো জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের ‘সংবিধিবদ্ধ মানদন্ড’ পূরণ করে না। কারণ, সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে এটা বলা যায়, এই ওষুধগুলো কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এফডিএর প্রধান বৈজ্ঞানিক ডেনিস হিসটন এ বিষয়ে বায়োমেডিকাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটির (বিএআরডিএ) গ্যারি ডিসব্রোকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘নতুন তথ্য এবং অন্যান্য অর্থের ভিত্তিতে এফডিএ স্থির করেছে যে এইচসিকিউ এবং সিকিউর মৌখিক ব্যবহার কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে, তা বিশ্বাস করা আর যৌক্তিক নয়। তাই এফডিএ কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় এইচসিকিউ এবং সিকিউর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন বাতিল করছে। এই চিঠির তারিখ থেকে এইচসিকিউ এবং সিকিউ মুখে খাওয়া আর এফডিএ দ্বারা কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত নয়।’ এফডিএ বলছে, করোনায় হাইড্রোক্সেক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইনের ব্যবহারে হৃদযন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া আরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

রেমডেসিভির দেওয়া হচ্ছে এমন রোগীদের ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে এফডিএ। রেমডেসিভির করোনার চিকিৎসায় অনুমোদিত ওষুধ। তবে রেমডিসিভিরের সঙ্গে ওই দুই ওষুধ খেলে রেমিডিসিভিরের কার্যকারিতা কমতে পারে।

হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন মূলত ম্যালেরিয়ার ওষুধ। এ রোগের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ নিরাপদ। কিন্তু করোনার চিকিৎসায় এই ওধুধের কার্যকারিতা এখনো প্রমাণিত হয়নি। সম্প্রতি ল্যানসেটের এক গবেষণায় বলা হয়, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের কোনো উপকারিতা নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্রাম্প করোনার প্রতিষেধক হিসেবে নিয়মিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওধুষ খাচ্ছেন। কারণ, তিনি মনে করেন, এই ওষুধ ভালো। এই ওষুধ সম্পর্কে অনেক ভালো কথা শুনেছেন তিনি। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের সঙ্গে জিঙ্কও খাওয়ার কথা জানান ট্রাম্প।

সূত্র : নবযুগ


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us